• বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ০১:১১ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

রোগীর প্রাণরক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল ডিভাইস সঙ্কটে দেশের হাসপাতালগুলো

Reporter Name / ১৬৩ Time View
Update : বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রোগীর প্রাণরক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল ডিভাইস সঙ্কটে ভুগছে দেশের হাসপাতালগুলো। তার মধ্যে অন্যতম মেডিকেল ডিভাইস হচ্ছে হৃদযন্ত্রের ভালভ। ওই ডিভাইসটির কাজ হলো রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখা। কোনো কারণে মানবদেহের ভালভ অকেজো হয়ে পড়লে হৃদযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়ে। তখন কৃত্রিম ভালভ লাগানোর মাধ্যমে হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক রাখা হয়। বাংলাদেশে প্রতিদিন কতটি ভালভ প্রতিস্থাপনে অস্ত্রোপচার হয় তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। হৃদযন্ত্রে প্রতিস্থাপিত কৃত্রিম ভালভ ও অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত অক্সিজেনেটর পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ওই দুটি মেডিকেল ডিভাইস আমদানিতে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যা রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইসিভিডি) সবচেয়ে বেশি হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার হয়। সরকারি ওই হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ১শ’টিরও বেশি ভালভ প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিগত ৪ মাস ধরে ওই মেডিকেল ডিভাইসটির সরবরাহের পরিমাণ ৫০-এর কাছাকাছি নেমে এসেছে। ওই হাসপাতালে ৪টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেনেটর ও ভালভ সরবরাহ করে। প্রতি মাসে শতাধিক ভালভ প্রয়োজন হলেও বর্তমানে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভালভের সরবরাহ নেই। তাছাড়া অক্সিজেনেটরের চাহিদা ভালভের চেয়ে ৩ গুণ হলেও পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। এনআইসিভিডি দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে পেস মেকার, হার্ট ভালভ, স্টেন্ট ও অক্সিজেনেটর সংগ্রহ করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী হৃদযন্ত্রের ভালভ ও অক্সিজেনেটর সরবরাহ করতে পারছে না। সূত্র জানায়, হার্টের ভালভ সাধারণত ২৫-৩৩ মিলিমিটারের মধ্যে ৪টি আকারের হয়। টিস্যু ও মেটালিক দুই ধরনের ভালভ মানুষের হার্টে লাগানো হয়। রোগীর বয়স, অবস্থা বিবেচনায় ভালভের আকার ও প্রকার নির্ধারণ করা হয়। সারা দেশে বছরে প্রায় দেড় হাজার হার্টের ভালভের চাহিদা রয়েছে। আর অক্সিজেনেটরের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। হার্টের ভালভ ও অক্সিজেনেটর জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়। প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ওসব ডিভাইস তৈরির কাঁচামাল বেলারুশ, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কাঁচামাল সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয়সংখ্যক ডিভাইস উৎপাদন করতে পারছে না। একই সঙ্গে করোনা মহামারীর কারণে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বহু কর্মী ছাঁটাই করার কারণেও চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, বয়স বৃদ্ধি, উচ্চরক্তচাপ ও দীর্ঘমেয়াদি বাতরোগ থাকলে সাধারণত ভালভ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। আর অক্সিজেনেটর হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারে জরুরি। সাধারণত বয়স্ক ও শিশুদের পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসাস (পিডিএ) ও অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (এএসডি) অস্ত্রোপচার বাদে হৃদযন্ত্রের সব ধরনের অস্ত্রোপচারে অক্সিজেনেটর প্রয়োজন হয়। অক্সিজেনেটর হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের সময় একজন রোগীর রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখতে কৃত্রিম ফুসফুসের মতো রক্ত সঞ্চালন করে। অক্সিজেনেটর কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ করে ও ধমনীতে পাম্প করা রক্তে অক্সিজেন যোগ করে। বেশির ভাগ সময় অ্যারোটিক ও মাইট্রাল ভালভ প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে যেসব হাসপাতালে হার্টের ভালভ লাগানো হয় বর্তমানে সেসব হাসপাতাল ভালভ পাচ্ছে না। তাছাড়া অক্সিজেনেটরের প্রয়োজন ভালভের চেয়ে তিন গুণ বেশি। ভালভের সার্জারি ছাড়াও প্রায় সব ধরনের ওপেন হার্ট সার্জারিতে অক্সিজেনেটর প্রয়োজন হয়। মূলত বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিই এ সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। ফলে দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই এখন গুরুত্বপূর্ণ ওই মেডিকেল ডিভাইসের সংকট চলছে। এদিকে হৃদযন্ত্রের ভালভ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মতে, মেডিকেল ডিভাইস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সবারই অনেক আগে থেকে চার-পাঁচটি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা রয়েছে। তবে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করতে পারছে না। হার্টের ভালভের কাঁচামালের মধ্যে পাইরোলেটিক কার্বন অন্যতম। রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশে উৎকৃষ্ট পাইরোলেটিক কার্বন পাওয়া যায়। ওসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অন্যান্য দেশের ভালভ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পাইরোলেটিক কার্বন সংগ্রহ করে। তবে বর্তমানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদের উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি কাজে আসছে না। চাহিদা ও উৎপাদনে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও ডলার সংকট আমদানিতে প্রভাব ফেলেছে। স্বাস্থ্যগত বিষয়ে এলসি খোলা গেলেও তাতে জটিলতা রয়েছে। জটিলতাগুলো এড়িয়ে এলসি করা গেলেও যেহেতু চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না তাই স্বাভাবিকভাবেই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, হৃদযন্ত্রের ভালভের সংকটের কথা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনআইসিভিডি কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category