স্পোর্টস ডেস্ক :
সহজ ম্যাচ কঠিন করে তোলাই যেন এখন ঢাকার অভ্যাস! আগের দিন শেষ সময়ে গিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে হারার ক্ষত এখনও তরতাজা। সেই ভূত ফিরে এসে যেন চেপে ধরল তাদের। তবে এবার আর হৃদয়ভাঙা হারের স্বাদ পেতে হলো না। ‘ওঝা’ হয়ে দলকে উদ্ধার করলেন শুভাগত হোম চৌধুরি। ম্যাচের শেষ ওভারে থিসারা পেরেরার দুটি স্লোয়ারে দুর্দান্ত দুটি ছক্কায় তিনি জয় এনে দিলেন ঢাকাকে। বিপিএলের আরেকটি রোমাঞ্চ জাগানিয়া ম্যাচে প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে মিনিস্টার ঢাকার জয় ৫ উইকেটে। এই ম্যাচ হেরে গেলে ঢাকার প্লে সম্ভাবনায় চোট লাগত প্রবল। আপাতত কিছুটা স্বস্তি তারা পেল। হেরে গেলেও অবশ্য খুলনা ভালোভাবেই টিকে আছে শীর্ষ চারে থাকার লড়াইয়ে। আগের দিন দুটি ম্যাচ হওয়া উইকেটেই হয় এই লড়াই। মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে ১২৯ রানের পুঁজি নিয়ে দারুণ লড়াই করে খুলনা। ঢাকা আরও একবার গড়বড় পাকায় শেষ দিকে। আগের দিন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে তারা খেই হারায় শেষ ওভারে ৯ রানের সমীকরণে। শঙ্কা-সম্ভাবনার দোলাচল তাদের জন্য ফিরে আসে আবার। এবার শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১১ রানের। আগের দিন যার বিদায় দিয়েই মূলত ঢাকার পতনের শুরু, সেই শুভাগত এবার দায়মোচন করেন। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলেই অসাধারণ দুটি ছক্কায় শেষ করে দেন খেলা। প্রথম বলটি তিনি আছড়ে ফেলেন সাইটস্ক্রিনে, পরেরটি আরও চোখধাঁধানো শটে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে। ঢাকার জয়ে ছোট ছোট অবদান আছে আরও বেশ কজনের। বোলিংয়ে কম-বেশি ভালো করেন প্রায় সবাই, ব্যাট হাতে ফেরার ম্যাচে জহুরুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে, বিপিএল অভিষেকে অলরাউন্ড সামর্থ্যরে কিছুটা ঝলক দেখান আফগান ক্রিকেটার আজমতউল্লাহ ওমরজাই। এবারের আসরে প্রথম নেমেই ম্যাচের মোড় বদলে দেওয়া ক্যামিও খেলেন শামসুর রহমান। তবে শুভাগতর ৯ বলে ১৮ রানের ইনিংসটা না হলে হয়তো বিফলে যেত অন্য সবকিছুই। শুভাগতর এই শেষের ঝড়ের ওপর নির্ভর করতে হতো না, যদি ঢাকার ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানরা কাজটা অর্ধসমাপ্ত না রেখে ফিরতেন। এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সফলতম ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ফেরেন ¯্রফে ৬ রানে। আরেক ওপেনার ইমরান উজজামানও বিদায় নেন একই স্কোর করে। ১৩০ রানের লক্ষ্য তবু খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটিতে মাহমুদউল্লাহ ও জহুরুল ম্যাচের লাগামও নেন। কিন্তু সেটা আবার আলগা করে ফেলেন দুজনই। শুরুতে ৮ বল খেলেও রান না পাওয়া জহুরুল খাতা খোলেন নাবিল সামাদকে ছক্কা মেরে। পরে মেহেদি হাসানকেও ছক্কায় ওড়ান তিনি সোজা ব্যাটে। মাহমুদউল্লাহ ইনসাইড আউটে ছক্কা পান থিসারার বলে। দুজনের জুটি তখন জমাট। এরপর যখন কাজ শেষের পথে এগোনোর পালা, দুজনই আউট হন তাড়াহুড়োর চেষ্টায়। বিপিএল অভিষিক্ত বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়ার স্লোয়ারে ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড জহুরুল (৩৫ বলে ৩০)। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ (৩৬ বলে ৩৪) আউট হন ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দিয়ে। রান-বলের একটু কঠিন হয়ে আসা সমীকরণ সহজ করে দেন শামসুর। খালেদের এক ওভারে দুটি ছক্কায় তিনি বুঝিয়ে দেন, এতদিন তাকে ডাগ আউটে রেখে ভুল করেছে দল। তবে তিনিও শেষটা ভালো করতে পারেননি, ১৪ বলে ২৫ রানে বিলিয়ে দেন উইকেট। লড়াইয়ে হাল না ছাড়লেও ক্যাচ ছেড়ে দমে যায় খুলনার সম্ভাবনা। ওমরজাই প্রথম বলেই দিয়েছিলেন সুযোগ। শর্ট থার্ডম্যানে তা নিতে পারেননি খালেদ, উল্টো বল চয়ে যায় বাউন্ডারিতে। থিসারার ওই ওভারে আবার সুযোগ দেন ওমরজাই লং অনে। অনেকটা ছুটে এসে বল হাতে জমালেও ভারসাম্য রাখতে পারেননি সৌম্য সরকার। ওই দুটি ক্যাচের একটিতে ওমরজাই আউট হলেও ঢাকার কাজটা হতে পারত আরও কঠিন। খুলনার আশা জিইয়ে ছিল এরপরও। কিন্তু শেষ ওভারে তা পিষ্ট শুভাগতর ব্যাটে। ঢাকা এ দিন মাঠে নামে আগের দিনের একাদশ থেকে চারটি পরিবর্তন করে। জায়গা হারান মোহাম্মদ শাহজাদ, মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও ইবাদত হোসেন, পিঠের ব্যথায় খেলতে পারেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। একাদশে ফিরে রুবেল হোসেন প্রথম ওভারেই সাফল্য এনে দেন দলকে। শুভাগতর চমৎকার ক্যাচে সৌম্য সরকার বিদায় নেন ১ রানেই। বিপদ আরেকটু বাড়ে একটু পর জাকের আলির বিদায়ে। চতুর্থ ওভারে আরাফাত সানি যখন পরপর দুই বলে ফেরালেন আন্দ্রে ফ্লেচার ও ইয়াসির আলি চৌধুরিকে, ১২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে খুলনা। সেই বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসানও। খুলনার ত্রাতা হয়ে আসেন সিকান্দার রাজা। অনেকবারের সফরে বাংলাদেশের কন্ডিশনে অভ্যস্ত জিম্বাবুয়ের এই অলরাউন্ডার দারুণ খেলে এগিয়ে নেন দলকে। সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং সরিয়ে থিসারা সঙ্গ দিয়ে যান রাজাকে। ২৭ বলে ৩৯ রানের জুটি গড়েন দুজন, ইনিংসের যা সর্বোচ্চ। থিসারা ১২ রানে আউট হলেও রাজা শেষ পর্যন্ত টেনে নেন দলকে। ৫ চার ও ৪ ছক্কায় করেন ৫০ বলে ৬৪। একসময় তার রান ছিল ৩০ বলে ২৩। পরে তিনি পুষিয়ে দেন দারুণ সব শটে। তার সৌজন্যেই শেষ ৬ ওভারে ৬১ রান তোলে খুলনা। সেই স্কোর নিয়ে পরে লড়াই জমিয়ে তোলে তারা। কিন্তু জয় পাওয়া হলো না। শেষ সময়ে ব্যবধান গড়ে দিলেন শুভাগত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১২৯/৮ (ফ্লেচার ৬, সৌম্য ১, জাকের ৫, ইয়াসির ০, মুশফিক ১২, মেহেদি ১৭, রাজা ৬৪, থিসারা ১২, রুয়েল ৮*; রুবেল ৪-০-২৬-১, ফারুকি ৪-০-৩২-১, সানি ৩-১-১৫-২, ওমরজাই ৪-০-১৫-২, কাইস ৩-০-১২-১, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১৮-০)
মিনিস্টার ঢাকা: ১৯.২ ওভারে ১৩১/৫ (তামিম ৬, ইমরান ৬, জহুরুল ৩০, মাহমুদউল্লাহ ৩৪, শামসুর ২৫, শুভাগত ১৮*, ওমারজাই ১০*; নাবিল ৪-১-১০-১, রুয়েল ৪-০-২১-১, খালেদ ৪-০-২৯-১, মেহেদি ১-০-১০-০, থিসারা ৩.২-০-৩৯-২, রাজা ২-০-১৬-০, ফ্লেচার ১-০-৫-০)
ফল: মিনিস্টার ঢাকা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আরাফাত সানি