নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ দমনে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছে। রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বৈশ্বিক বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আজ সোমবার ‘এন্টি টেররিজম ইউনিট’ এর পঞ্চম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন ও পরিকল্পনার সুফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জনমানুষের নিরাপত্তাবোধ। জঙ্গিবাদ দমন ও প্রতিরোধে এরইমধ্যে এন্টি টেররিজম ইউনিট জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ‘তিনি সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ দমন ও প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা এন্টি টেররিজম ইউনিট-এটিইউর পঞ্চম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে জেনে আনন্দিত। এ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও এটিইউর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্যরা উল্লেখ করে তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সেসব বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা ও অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি রুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য সৃষ্ট কৃত্রিম সংকটকালীন পরিস্থিতিতে আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি’ ঘোষণা করে, একগুচ্ছ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। দেশব্যাপী সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ বিরোধী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, অভিযান, মামলা তদন্ত ও জনসচেতনতামূলক কাজসহ কাউন্টার রেডিকেলাইজেশান অ্যান্ড ডিরেডিকেলাইজেশান কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমোদন দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট এটিইউ গঠন করেছি। নবসৃষ্ট এটিইউ প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, দেশের প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে এটিইউ আরও বিস্তৃত পরিসরে নিরলস কাজ করে যাবে। প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার এই সময়ে জঙ্গি ও দেশবিরোধী শক্তির অপতৎপরতা রুখে দিতে এটিইউ নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যুগের চেয়ে অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে জনগণকে সেবা দিয়ে যাবে এটাই আমার প্রত্যাশা। সবাই মিলে আগামী প্রজন্মের জন্য জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি এন্টি টেররিজম ইউনিট এটিইউ পঞ্চম বর্ষপূর্তির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে দারিদ্র্য বড় বাধা: প্রধানমন্ত্রী
শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দারিদ্র্য অন্যতম বাধা বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউনিসেফের উদ্যোগে শিশুর সুরক্ষায় প্রথম জাতীয় সম্মেলন বাংলাদেশ-২০২২ এ এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সব প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল প্রণয়ন করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকার এক কোটিরও বেশি মানুষকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। শিশুরাও এসব কর্মসূচির উপকারভোগী। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছি। ৯৮ শতাংশ স্কুলগামী শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা গেছে। এ ছাড়া শিশু মৃত্যুহার ও মাতৃমৃত্যুহার কমিয়ে আনা হয়েছে। নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সারাদেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক ১৮ বছরের নিচে আর পাঁচ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা দুই কোটিরও বেশি। সরকারসহ উন্নয়ন সংস্থাগুলো এসব শিশুদের সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সংক্ষিপ্ত সময়ে শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানের কয়েকটি ধারায় শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের উন্নয়নে আমার মেয়ে ড. সায়েম ওয়াজেদের কাজ বেশ প্রশংসনীয়। আমাদের সরকার ২০১৬ সালে ‘শিশু হেল্প লাইন ১০৯৮’ চালু করেছে। এই হেল্প লাইন ১০ লাখেরও বেশি শিশু ও তাদের পরিবারের কথা শুনেছে। থানাগুলো শিশুবান্ধব করার লক্ষ্যে চাইল্ড হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। একসময় শিশুশ্রম বাংলাদেশে অনেক বড় সমস্যা ছিল। আমাদের দেশে শিশুশ্রম উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা হয়েছে। রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প এখন শিশুশ্রমমুক্ত। সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমরা আমাদের শিশুদের মানোন্নয়নে সবকিছু করছি, যদিও আরও অনেক কিছু করতে হবে। শিশুদের অধিকতর উন্নয়নে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম একটি নিয়মিত কর্মসূচি হিসেবে চালু করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একত্রে মিলে শিশু সুরক্ষায় কাজ করতে বদ্ধপরিকর। এ জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউনিসেফকে আমি ধন্যবাদ জানাই।