নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সংগীত বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। জাতীয় পতাকাকে সম্মান করার অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্মান করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করা, যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেশকে স্বাধীন করেছেন তাদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। তাই যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাস করেন, শ্রদ্ধার চোখে দেখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করতে চান, তাদের অবশ্যই জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। জাতীয় সংগীত গাইতে হবে। আজ মঙ্গলবার নাটোরের অনিমা চৌধুরী মিলনায়তনে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই চেতনাবোধ জাগ্রত করা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং জাতীয় সংগীত গাওয়া জরুরি। কিছু মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং জাতীয় সংগীত গাওয়ানো হয় না মন্তব্য করে দীপু মনি বলেন, এতে শিক্ষার্থীরা দেশকে শ্রদ্ধা করতে শেখে না, জাতির বীর সন্তানদেরও শ্রদ্ধা করতে শেখে না। এছাড়াও এতে রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করা হয়। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে যে মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়ানো হয় না এবং জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শন করা হয় না, ওই প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের মনিটরিং করার আহ্বানও জানান তিনি। কোনও মাদ্রাসা এ ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করে শিশুদের জাতীয় পতাকাকে সম্মান করতে না শেখালে বা জাতীয় সংগীত না শেখালে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা খাতে সরকারের অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় কাগজ, কালিসহ পুস্তক তৈরির সব উপকরণের দাম লাগামহীন। এমন পরিস্থিতিতেও শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকারে রেখেছে সরকার। এজন্য আগামী ১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নাটোর শহরের অনিমা চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে দীপু মনি আরও বলেন, আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কোমলমতি শিশুদের কথা বিবেচনা করে বছরের প্রথম দিনই তাদের হাতে বই পৌঁছে দিয়েছে। এমনকি বিগত করোনা মহামারিকারী সময়ও অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের হাতে জানুয়ারির ১ তারিখে বই তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সব প্রতিষ্ঠানে জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। গ্রাম হচ্ছে শহর। এটা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সহ্য হচ্ছে না। তারা দেশবিরোধী নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে বলে মন্তব্য করেছেন। দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করে সেনা শাসনের জন্ম হয়। সমানে পাল্লা দিয়ে চলে ইতিহাস বিকৃতি। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে উন্নয়নের একটি রোল মডেল। দেশের সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এরইমধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস, সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন আক্তার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার আবউস সালাম হাওলাদার।