নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বিপুলসংখ্যক শূন্য পদ দ্রুত পূরণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে সরকারি পদের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫২টি। তার মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি পদ। সরকারি ওসব পদ দ্রুত পূরণের লক্ষ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা বৈঠকে বসছেন। আর ২৬ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বিগত ২০১৭ ও ২০১৮ সালের সচিব সভায় শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি শূন্যপদ পূরণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রত্যেক সচিবকে কয়েক দফা চিঠিও দেয়া হয়েছে। তারপর নানা জটিলতায় ওসব পদশূন্য রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় করোনা মহামারিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে থাকায় চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করে দ্রুত শূন্যপদ পূরণের নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের শূন্যপদগুলো পূরণ হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বেকারের সংখ্যা আরো বেড়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) হিসাবে করোনার কারণে বাংলাদেশে অন্তত দেড় কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটেই সচিবরা বিভিন্ন বিভাগের শূন্যপদে নিয়োগের বিষয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শূন্যপদ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বৈঠকে আনার কথা জানিয়েছে। আর ওই সভায় সচিব ছাড়া অন্য কোনো প্রতিনিধি প্রেরণ না করার জন্যও বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বশেষ গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিব সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিশ্ব খাদ্য, জ¦ালানি, অর্থনীতি, কৃষি, জঙ্গিবাদ দমনসহ সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। তারপর গত ১৩ ডিসেম্বর সদ্যবিদায়ি মন্ত্রিপরিষদ সচিব সচিবসভার ফলোআপ বৈঠক করেন। আর বর্তমান মন্ত্রিপরিষদসচিবের সভাপতিত্বে প্রথম সচিব সভা হচ্ছে। সরকারপ্রধান সচিবদের নিয়ে প্রতিবছর একটি বিশেষ সভা করেন। প্রতিবছরই পালিত হয় সচিবসভা করার ওই রীতি। তবে কোনো কোনো বছর সরকারপ্রধান উপস্থিত না থাকলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাওয়ার পর অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় চিঠি পাঠিয়ে শূন্যপদে নিয়োগের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন। শূন্যপদ থাকার কারণ শুধু প্রশাসনিক অদক্ষতা নয়, রাজনৈতিক কারণ, মামলা এবং তদবিরেও পদ শূন্য থাকে। তবে এত পদ খালি থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে সরকারি পদের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫২টি। তার মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি পদ। আর কর্মরত ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। সরকারি চাকরিতে তৃতীয় শ্রেণিতে সবচেয়ে বেশি পদ সংরক্ষিত আছে। ওই শ্রেণিতে মোট পদের সংখ্যা ১১ লাখ ৯ হাজার ৫১৫। ওই শ্রেণিতে বর্তমানে কর্মরত কর্মচারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬৭ জন। তাছাড়া সরকারি চাকরিতে চতুর্থ শ্রেণিতে মোট ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৭৭২টি পদ আছে। কিন্তু কর্মরত আছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৯২ জন। বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। তবে সরকারি চাকরিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে সবচেয়ে কম পদ। ওই শ্রেণিতে পদ আছে ২ লাখ ১০ হাজার ৭৫০টি। আর কর্মরত আছে এক লাখ ৭০ হাজার ১৮৯ জন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে শূন্যপদ আছে ৪০ হাজার ৫৪১টি। তাছাড়া প্রথম শ্রেণিতে ২ লাখ ৩৯ হাজার ১৫টি পদ আছে। তার মধ্যে কর্মরত রয়েছে এক লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৯ জন। আর ৪৩ হাজার ৩৩৬টি পদ খালি আছে।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ রয়েছে। ওই মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থায় ৭৪ হাজার ৫৭৪টি শূন্যপদ রয়েছে। তারপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থায় শূন্য রয়েছে ৪৪ হাজার ৮২০টি পদ। এভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদ শূন্য আছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শূন্যপদ পূরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। একটি পদের বিপরীতে হাজার হাজার প্রার্থী আবেদন করছে। তাই শূন্য পদগুলোতে দ্রুত চাকরি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর করোনায় নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে থাকায় চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে অনেক শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে এবং আশা করা যায় দ্রুতই সরকারি শূন্যপদ পূরণ হয়ে যাবে।