নিজস্ব প্রতিবেদক :
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। দেশের আকাশ উন্মুক্ত রয়েছে। এখানে যে কোনো চ্যানেল সম্প্রচার করতে পারে, কিন্তু দেশের আইন মেনে করতে হয়। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে যে কোনো বিদিশে চ্যানেল বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে সম্প্রচার করতে হয়। বিশ্বের সব দেশে আইন মেনেই ভিনদেশি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার হয়ে থাকে। শুধু আমাদের দেশে আইনকে বছরের পর বছর ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদশর্ন করা হচ্ছিল। আমরা আইন বাস্তবায়নের কথা দুই বছর আগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছিলাম। বেশ কয়েক বার তাগাদা দেওয়া হয়েছে, নোটিশ করা হয়েছে। গত মাসের শুরুতে তাদের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বসে সিদ্ধান্ত হয় ১ অক্টোবর থেকে আইন কার্যকর করব।’ মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন ডিজিটালাইড না হওয়া পর্যন্ত আইন শিথিল রাখার জন্য। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার পুরোটা ডিজিটালাইড হয়নি। সেখানে আইন কার্যকর আছে। আমাদের দেশে এ ধরনের অজুহাত তোলার কোনো যুক্তি নেই। ক্লিন ফিড যেহেতু পায়নি সেজন্য তারা সরকারের নির্দেশনা মেনে বন্ধ রেখেছে। সেটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তাদের আগেই সময় দেওয়া হয়েছিল যেন তারা সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোকে বলে ক্লিনফিড পাঠানোর জন্য এবং তারাও প্রস্তুতি নেয়। যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে, দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে। আমি দুই বছর আগ থেকে তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। এর আগেও এই আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’ ‘বিসিবি, সিএনএন, আল জাজিরা, ফ্রান্স টিভি, রাশান টিভি, ইউরো টিভি, এনিমেল্ট প্ল্যান্টেটসহ ১৭ টিভি বাংলাদেশে ক্লিনফিডে আসে। সেগুলোও তারা চালাচ্ছেন না। যেটি কেবল অপারেটর লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ। সুতরাং কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে শর্ত ভঙ্গের অপরাধে অভিযুক্ত হবেন। যেসব চ্যানেল ক্লিনফিড পাঠায় না তাদের এজেন্ট আছে। এই দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট চ্যানেল ও এজেন্টের। এটি কেবল অপারেটরদের দায়িত্ব নয়। কিন্তু কোনো কোনো কেবল অপারেটর এজেন্টেদের পাশ কাটিয়ে তারা সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে পাইরেসি করে ডাউনলিঙ্ক করে। সেটি কিন্তু তারা করতে পারেন না। এটি আইনবহির্ভূত’- বলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। ৪ অক্টোবরের পর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে কোয়াব এ প্রসঙ্গে তথ্য মন্ত্রী ববলেন, ‘এই ধরনের আন্দোলনের কথা বলা অযৌক্তিক। যেসব চ্যানেল দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে, সংস্কৃতিকে চোখ রাঙাচ্ছে, সেগুলো পক্ষে ওকালতি করা দেশের স্বার্থ ও আইনবিরোধী। আমি আশা করব, দেশের স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হবেন না। সরকার কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। সরকার দেশের স্বার্থ ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য, আইন বাস্তবায়ন করার জন্য বদ্ধপরিকর।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তারা যদি আলোচনা করতে চায় আলোচনা হতেই পারে। তারা আমাদের সহযোগী, আলোচনা হতেই পারে। তবে আলোচনার ভিত্তি হবে আইন মানা, দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ। আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে কেবল অপারেটররা বললেও এটি জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার মত একটি বক্তব্য। তারা কি চ্যানেলগুলো দেখা না যাওয়ার পর চার্জ কমিয়ে দিয়েছে? এক টাকাও তো কমেনি। বিদেশি চ্যানেল দেখানোর জন্য এজেন্টেদের যে ফি দিত সেটা এখন দিতে হবে না, টাকা সাশ্রয় হবে।’ তিনি বলেন, ‘সবাই বন্ধ করেনি। আকাশ ডিটিএইচসহ কেউ কেউ ওইসব চ্যানেল চালু রেখেছে। প্রথম দিকে তারা কিছু অসুবিধার কথা বলেছিল। আমি আশা করব সেটি দু’একদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। কেউ যদি শর্ত ভঙ্গ করে শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবে।’ ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা যখন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি দেশের সমস্ত মিডিয়া এটিকে অভিনন্দন জানিয়েছে, মিডিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা তারা অভিনন্দন জানিয়েছে, শিল্পীরা অভিনন্দন জানিয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে, দেশের মিডিয়ার ইন্ড্রাস্ট্রি, সাংবাদিক ও মিডিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও কলাকুশলীদের স্বার্থে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব হারায়। এই বিনিয়োগ বঞ্চিত হওয়ার কারণে মিডিয়া থেকে অনেকে ছাঁটাই হচ্ছেন। যখন এই বিনিয়োগটা দেশি মিডিয়ার হবে তখন মিডিয়া থেকে ছাঁটাই হওয়াটা বন্ধ হয়ে যাবে বা সেই অজুহাতে ছাঁটাই করা যাবে না। পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।’ মন্ত্রী এ সময় জানান, মোবাইল কোর্টের অভিযান চলমান থাকবে। সচিব ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে এ বিষয়ে সভা করা হবে।’ উল্লেখ্য দেশে যে সব বিদেশি চ্যানেল নযুক্ত কনটেন্ট সম্প্রচার করে আসছিল শুক্রবার থেকে সেগুলো বন্ধ রয়েছে।
সর্বশেষঃ
সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি, আইনের প্রয়োগ হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ১০:২১:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১
- ৬৪৮ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ