নিজস্ব প্রতিবেদক :
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মাদক মামলা হচ্ছে। কিন্তু দেশজুড়ে কয়েক লাখ মাদক মামলা সাক্ষীর অভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ফলে আদালতে কমছে না মামলার জটও। সমন দিলেও সাক্ষীরা হাজির হচ্ছে না। তাছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ায় ভুক্তভোগীরাও পরে আর সাক্ষ্য দিতে চায় না। শুধু তাই নয়, তদন্তকালে সাক্ষী থাকলেও পরে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার অনেকেই সাক্ষ্য দিতে ভয় পায়। এমন পরিস্থিতির কারণেই আদালতগুলোতে মাদক মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাদক মামলার আসামিরা আইনের ফাঁক গলে জামিন পেয়ে যাচ্ছে। আর তাদের কেউ কেউ পুনরায় মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। আর প্রতিদিনই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় নতুন নতুন মাদক মামলা হওয়ায় আদালতে মামলার তালিকাও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মামলার জট কমিয়ে বিচার নিষ্পত্তি করতে সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি অভিমত প্রকাশ করেছে যে, দুই মন্ত্রণালয়কে (আইন এবং স্বরাষ্ট্র ) সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যে দুই মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশে বিচারাধীন মোট ১১ লাখ ৭১ হাজার মামলা। তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখই মাদক অপরাধের মামলা। সম্প্রতি আরো লক্ষাধিক নতুন মাদক অপরাধ মামলা হয়েছে। ওসব মামলায় প্রায় সোয়া লাখ আসামি থাকলেও অধিকাংশ আসামিই পলাতক। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান বেড়েছে। ফলে ওই সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কিন্তু বিচারের গতি তেমন বাড়ছে না।
সূত্র আরো জানায়, সরকার ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন রদ করে ২০১৮ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ নামে নতুন আইন পাস করে। আইনের ৪৪ ধারায় মাদক সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়। কিন্তু সীমাবদ্ধতা থাকায় এখনো ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে ওসব মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ প্রতিদিনই নতুন মামলা যুক্ত হচ্ছে। ইতিপূর্বে উচ্চ আদালত থেকে মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ট্রাইব্যুনাল না হওয়া পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫(২) ধারা অনুযায়ী অন্যান্য আইনের অধীনে অপরাধ বিধান অনুযায়ী মাদক মামলাগুলো প্রচলিত আদালতেই বিচার হবে। ওই নির্দেশনায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ওসি ও সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সাক্ষী হাজির করে মামলা নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করতেও বলা হয়। তাছাড়া আরো বলা হয়, যেহেতু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৪, অর্থাৎ ট্রাইব্যুনাল গঠন কিংবা জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজকে ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়ার বিধানটি এখনো কার্যকর হয়নি, সেহেতু বিচার প্রক্রিয়ায় শূন্যতা পূরণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫(২) ধারা এক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য ও কার্যকারিতা পাবে।
এদিকে এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ মাদক মামলাই সাক্ষীর জন্য নিষ্পত্তি হচ্ছে না। তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষীকে উপস্থিত করতে পারে না। অবশ্যই সাক্ষী হাজির করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। তাছাড়া অনেক মামলার চার্জশিট জমা দেয়া হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত চার্জশিট জমা দেয়া জরুরি। তাছাড়া এখনো আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি। তাই অতিরিক্ত কোর্টে মামলা নিষ্পত্তি হতে পারে। আর মৃত্যুদ-, যাবজ্জীবন কারাদ বা ৫ বছরের বেশি সময়ের সাজার বিধান যে আইনে থাকে, সেক্ষেত্রে দায়রা আদালত বিচার করবেন। মহানগর হাকিম পরোয়ানা ইস্যু করতে পারবেন। তবে দুই বছরের কম সাজার ক্ষেত্রে বিচারিক হাকিমও বিচার করতে পারবেন। তাছাড়া মাদক মামলা নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্যোগী হতে হবে। আসল দোষীকে সাজা দিতে হবে। না হলে মাদকের কার্যক্রম চলবেই। রাষ্ট্রপক্ষ উদ্যোগী না হলে মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হবে। সার্বিক বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের নজর দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে। সম্প্রতি লকডাউন শেষ হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মাদক মামলাগুলো কীভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।