• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
‘মুজিবনগর দিবস’ বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী শ্রম আইনের মামলায় ড. ইউনূসের জামিনের মেয়াদ বাড়ল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্ব থাকবে জনস্বাস্থ্যেও: পরিবেশ মন্ত্রী অনিবন্ধিত অনলাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ: তথ্য প্রতিমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনায় বিকল্পভাবে পণ্য আমদানির চেষ্টা করছি: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবায় অভূতপূর্ব অর্জন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে: রাষ্ট্রপতি শান্তি আলোচনায় কেএনএফকে বিশ্বাস করেছিলাম, তারা ষড়যন্ত্র করেছে: সেনাপ্রধান বন কর্মকর্তার খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়: পরিবেশমন্ত্রী পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম: ১৪ বছর ধরে সরানোর অপেক্ষা ভাসানটেক বস্তিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হবে : মেয়র আতিক

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন হতাশাজনক

Reporter Name / ৩৫৯ Time View
Update : শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কবিতায় গ্রামকে বলা হয়েছে ‘ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়’। তবে সেই ছায়া ও শান্তি এখনও অনেক গ্রামেই নেই। ক্রমাগত বৃক্ষ নিধনে ছায়া পলায়নরত। আর্থিক অনটন ও বঞ্চনার কারণে শান্তি অনেকটা তিরোহিত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়াস্ত মাঠে কাজ করে গ্রামের মানুষ। অনেকে গরু পালে, মাছ ধরে, ধান ভানে ও নৌকা বায়। সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে উন্নত জীবনের আশায়, সমৃদ্ধির আশায়- যে জীবন তারা দেখে শহরে, যে সমৃদ্ধি দৃশ্যমান হয় শহুরে মানুষের মধ্যে। দেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষের বসবাস গ্রামে। শহরে বাস করে বাকি ২৪ শতাংশ। গ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তৃতীয় পর্যায়ে ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গ্রামভিত্তিক একক সমবায় সংগঠনের আওতায় ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী নির্বিশেষে সব পেশা ও শ্রেণীর জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনই এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য। তৃতীয় পর্যায়ে ৩০১ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সব জেলার ১৬২টি উপজেলায় ১০ হাজার ৩৫টি গ্রামে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ২০১৮ সালে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। কিন্তু তিন বছরের প্রকল্পের আড়াই বছর শেষে অর্থাৎ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৩ শতাংশ। কর্মসূচি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতাধীন চার সংস্থা কুমিল্লার বার্ড, বগুড়ার আরডিএ, বিআরডিবি ও সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি)-তৃতীয় পর্যায় (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পিইসি সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভায় জানানো হয়, এ কর্মসূচির আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে সার্বিক গ্রাম উন্নয়নের জন্য গ্রামের ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বে বয়সের সব অধিবাসীকে সমবায় পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ, গ্রামের প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের সমন্বয়ে প্রতি গ্রামে একটি করে মোট ১০ হাজার ৩৫টি গ্রামে সমবায় সমিতি গঠন, ১৪ লাখ ৩০ হাজার ১৬৩ জনকে দক্ষতা বৃদ্ধি, আয়বর্ধক কর্মকা- ও তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া, সমবায় সমিতির সদস্যদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে মোট ৫১০ কোটি টাকার মূলধন গঠন, এ মূলধন থেকে বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩ লাখ ৫০ হাজার আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রতিটি সমবায় সমিতির জন্য গ্রাম উন্নয়ন কর্মী তৈরি, যারা সরকারের বিভিন্ন জাঁতি গঠনমূলক সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতির যোগাযোগ স্থাপন করবে।
সভায় প্রকল্প পরিচালনের পক্ষে বলা হয়, দেশের সব জেলার ১৬২টি উপজেলায় ১০ হাজার ৩৫টি গ্রামে ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে ৩০১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ৮ মার্চ প্রকল্পটি অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু সময়মতো প্রকল্প পরিচালকসহ উপপ্রকল্প পরিচালক, সহকারী প্রকল্প পরিচালক সময়মতো নিয়োগ না দেয়া এবং ২০২০ সালের মার্চ থেকে কভিড-১৯ মহামারীসহ অন্যান্য কারণে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এর আর্থিক অগ্রগতি ১৯ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ২৩ শতাংশ। পরবর্তী ছয় মাসে প্রকল্পের বাকি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে প্রকল্পের পরিধি ১৬২ থেকে বাড়িয়ে ১৬৪টি উপজেলায় বিস্তৃত করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু কমিটি পরিধি না বাড়িয়ে মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্মতি দেয়।
এ বিষয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমানের ভাষ্য, কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা নয়, প্রকল্প চলাকালীন অধিকাংশ সময়ই করোনার বিস্তৃতি থাকায় এর প্রত্যাশিত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। প্রশিক্ষণ দিয়ে জনগণকে দক্ষ করে গড়ে তোলাই ছিল এ প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু করোনার কারণে প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। তবে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত সময়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অগ্রগতি বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) ড. মো. আলফাজ হোসেন বলেন, প্রকল্প পরিচালকসহ উপপ্রকল্প পরিচালক, সহকারী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ যথাসময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব যথাসময়ে পালন করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ে ৪৩৮ জন জনবল নিয়োগের সংস্থান থাকলেও হাইকোর্টে রিট মামলা থাকায় মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ২০২০ সালের মার্চ থেকে কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তাই প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে রয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভূমিহীন, বিত্তহীন ও দুস্থ লোকদের উন্নয়ন কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করা এবং একটি গ্রামের সব শ্রেণী-পেশার লোকের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন সৃষ্টির মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নের কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) গবেষণা চালায়। এ গবেষণার ফলেই সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি (সিভিডিপি) মডেল। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতাধীন চারটি সংস্থা যেমনÑকুমিল্লার বার্ড, বগুড়ার আরডিএ, বিআরডিবি এবং সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে ২০০৫ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত ১৮টি জেলার ২১টি উপজেলায় মোট ২৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সিভিডিপির প্রথম পর্যায় এবং ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৪টি জেলার ৬৬টি উপজেলায় ৯৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় পর্যায় কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category