• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন

স্ত্রী হত্যায় একই দিনে ৪ ফাঁসির রায়

Reporter Name / ৩৪৮ Time View
Update : রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্ত্রীকে হত্যার দায়ে গতকাল রোববার ৪টি মামলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা ও বরিশালে চার ব্যক্তির মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে ঢাকায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামী কৃষাণ দাসকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদ-ের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। আজ রোববার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক সামছুন্নাহার এ রায় দেন। এদিন হত্যা মামলায় দুই আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আদালত তাদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় অপর আসামি লাল্লুকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(ক)/৩০ ধারার অপরাধের দায় থেকে খালাস দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, আসামি কৃষাণ দাসকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(ক) ধারা মতে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদ- এবং অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদ-ে দ-িত করা হলো। কৃষাণ দাসের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে হবে। অর্থদ-ের টাকা তার নিজস্ব সম্পত্তি হতে আইনের বিধানমতে আদায়যোগ্য হবে। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আসামি কৃষাণ দাসের সঙ্গে ভুক্তভোগী রাম দুলারির বিয়ে হয়। বিয়ের পর যৌতুকের জন্য রাম দুলারিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে কৃষাণ। ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দুলারিকে মারধর করে তার ভাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় স্বামী। পরবর্তী ২৬ ফেব্রুয়ারি তার ভাই তাকে বুঝিয়ে ফের স্বামীর বাড়ি দিয়ে যান। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে কৃষাণ দাসের মামা জিতেন দাস ভুক্তভোগীর ভাইকে ফোন দিয়ে জানান, তার বোন মারা গেছে। এ ঘটনায় কৃষাণ দাস ও লাল্লু দাসকে আসামি করে হাজারীবাগ থানায় মামলা হয়। এরপর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই পুলিশের উপপরিদর্শক ওমর ফারুক খান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এদিকে বরিশালে ডাবের পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে সাইদুল ইসলাম মৃধা নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার দুপুরে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু শামীম আজাদ আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সাইদুল ইসলাম বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের আলতাফ মৃধার ছেলে। নিহত আয়েশা আক্তার আগৈলঝাড়ার পাশের উপজেলা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার ফজলু কাজীর মেয়ে ও মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সাইদুল ইসলামের স্ত্রী। নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (বিশেষ পিপি) ফয়েজুল হক ফয়েজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, সাইদুল ইসলাম বিয়ের কয়েকমাস পর থেকেই আয়েশাকে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন শুরু করেন। বিভিন্ন সময় তাকে মারধর ও যৌতুক না পেলে স্ত্রী আয়েশাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। তবে আয়েশার বাবা দরিদ্র হওয়ায় ৩ লাখ টাকা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। বিষয়টি আয়েশা তার স্বামী সাইদুলকে জানিয়ে ৩ লাখ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন সাইদুল। আয়েশাকে মেরে ফেলে যৌতুক নিয়ে অন্যত্র বিয়ে করার ফন্দি আঁটেন। পরিকল্পনা মতো ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর ডাবের পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পান করানো হলে আয়েশা মারা যান। পরে আয়েশা বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে এলাকায় প্রচার করে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চালান স্বামী সাইদুল। এ ঘটনায় আয়েশার বাবা কাজী ফজলু কাজীর সন্দেহ হলে আগৈলঝাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে সাইদুলকে অভিযুক্ত করে পুলিশ আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেয়। ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আয়েশার স্বামী সাইদুল ইসলামকে মৃত্যুদ- দেন আদালত।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে নগরের পতেঙ্গায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী মো. রিয়াজ হোসেনকে (২৫) মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ রায় দেন। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি রিয়াজ হোসেন পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া থানার বুখাইতলা এলাকার আজমল খলিফার ছেলে। আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি পতেঙ্গা থানার খালপাড় এলাকার শাহাজাহান গলিতে শ্বাসরোধ করে স্ত্রী রুমা বেগমকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ৩ মার্চ রুমা বেগমের পিতা সিরাজুল হক বাদী হয়ে রিয়াজ হোসেনকে আসামি করে পতেঙ্গা থানায় মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপি খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, ছয় জনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামী রিয়াজ হোসেনকে মৃত্যুদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর পিপিকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট ইয়াসির হামিদ মাহিম ও মীর আশফাকুল হক।
এছাড়া সাতক্ষীরায় স্ত্রী হত্যার মামলায় কার্তিক ঘোষ (৩৯) নামে একজনের মৃত্যুদ-ের আদেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জি আজম এই রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত কার্তিক ঘোষ সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের তেজেন্দ্র নাথের ছেলে। মামলার অপর পাঁচ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জহুরুল হায়দার বাবু জানান, কার্তিক ঘোষকে ২০০১ এর (ক) ধারার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে খুলনার দোলখোলা বাইলেনের বাসিন্দা গোঁসাই চন্দ্র ঘোষের মেয়ে শিপ্রা ঘোষের সঙ্গে কার্তিক ঘোষের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে কার্তিক ও তার পরিবারের লোকজন শিপ্রার ওপর নির্যাতন চালাতে শুরু করে। এরইমধ্যে তাদের পুত্র সন্তানের হয়। ২০১০ সালের ১৩ মে রাতে মোবাইল ফোনে শিপ্রার মা নমিতা রানী জানতে পারেন, তার মেয়ে মারা গেছেন। খবর পেয়ে ভোরে পাটকেলঘাটার রাজেন্দ্রপুর গ্রামে আসেন তারা। বারান্দায় শিপ্রার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। তা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। পরে নমিতা রানী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় কার্তিকসহ ছয় জনকে আসামি করা হয়। ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বিচারক কার্তিককে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category