• শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১৮ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না: আইনমন্ত্রী নাইজেরিয়ান চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামে কোকেন পাচার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করতে বললেন ব্যারিস্টার সুমন পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদী শাসনে ব্যয় বাড়ছে পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের রিমান্ড শুনানি পিছিয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএমপি কমিশনার রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যবহার করছে না রেল ট্রানজিট রাজাকারের পক্ষে স্লোগান সরকারবিরোধী নয়, রাষ্ট্রবিরোধী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র-আলোকচিত্র প্রদর্শনী

সড়কে শিক্ষার্থীরা, ব্যর্থ হাফ ভাড়া সংক্রান্ত বৈঠক

Reporter Name / ৩৬৯ Time View
Update : সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীর নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসান নিহতের ঘটনায় এখনো বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন রাজধানীর শান্তিনগরে।
এসময় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিক’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। কাদিস না মাগো, নাঈম ঘরে নাই, নেমেছে রাজপথে হাজারো নাঈম’; জাগো হে জাগো ছাত্র সমাজ, অত্যাচার সহ্য করবো না আজ’সহ নানা ধরনের লেখা সংবলিত প্লেকার্ড দেখা যায়। দাবি না মানলে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয় ঘেরাও করবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স যাচাইও করবে। শিক্ষার্থীরা যখন হাফপাসসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়েছে, তখন কোন প্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া সংক্রান্ত বৈঠক। হাফ ভাড়ার দাবি না মেনে বরং মালিক পক্ষ উল্টো তাদের ভর্তুকির জন্য টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এদিকে বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও কোন সমাধান না আসার খবরে আরও ক্ষুব্ধ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুই ঘণ্টার এ বৈঠকটি এভাবে নিষ্ফল হয়েছে। মূলত পরিবহন মালিকদের চাপে বিআরটিএ নতজানু মনোভাব নীতি গ্রহণ করে। বৈঠক শেষে মালিক সমিতি ও সরকার পক্ষ উভয়েই এক সুরে জানিয়েছে- এত ধরনের এত কঠিন সিদ্ধান্ত এক দুটো বৈঠকেই নেয়া যায়না। আারও ব্যাপক ও গভীর আলোচনার দরকার। শনিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়ে চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।
বৈঠকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল বাতেন বাবু, আলহাজ সাদিকুর রহমান হিরু, আবুল কালাম আজাদ, ওসমান আলী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মোঃ আশফাকসহ বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে বিআরটিএকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া কমানোর বিষয়ে বিআরটিএ অত্যন্ত আন্তরিক উল্লেখ করে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, বৈঠকে বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে পরিবহন মালিকদের যে ক্ষতি হবে তা কীভাবে পূরণ করা হবে। তাদের ক্ষতির জন্য কত ভর্তুকি দেয়া হবে এসব সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এ বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আবার বৈঠক হবে। আমরা আবারও বৈঠক করব। যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া যায় তার জন্য চেষ্টা করা হবে। বৈঠকে ঢাকায় কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কতজন ছাত্র, এদের মধ্যে কতজন বাসে উঠে এসব বিষয়ে তালিকা চেয়েছেন পরিবহন নেতারা। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করব, তারাও তথ্য দেবেন। এসব বিষয়ে ফয়সালা করতে সময় লাগবে জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার থাকতে আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ।
বৈঠকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ঢাকার শতকরা ৮০ শতাংশের মতো বাস মালিক গরিব। তারা যদি হাফ ভাড়া নেয় সরকার কীভাবে তাদের এ ক্ষতি পোষাবে আগে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে চাই। এ বিষয়ে আমরা অত্যন্ত আন্তরিকও। কিন্তু আগে অনেকগুলো বিষয়ে সমাধান করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেগুলোর সমাধানের মাধ্যমে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। নতুন যে যেসব প্রস্তাব এসেছে এগুলো নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারা শিক্ষার্থী আর কারা শিক্ষার্থী নয় এ বিষয়েও জটিলতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাসে উঠে সবাই বলবে আমরা ছাত্র। অনেকে এ সুবিধা নেয়ার জন্য নতুন করে আইডি কার্ড বানিয়ে নেবে। সরকার এটার সমাধান কীভাবে করবে সেটাও দেখতে হবে। সবগুলো বিষয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ সময় মহাসচিব প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তিনি পরিবহন ভাংচুর, শ্রমিকদের মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকা- থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।
সূত্র জানায়, আলোচনার সময় পরিবহন মালিক শ্রমিকদের চড়া বক্তব্যের মুখে সরকার পক্ষের প্রতিনিধিরা ছিলেন বেশ অসহায়। তারা পরিবহন মালিকদের দুর্বল যুক্তিও খন্ডন করতে পারেনি। যেমন পরিবহন ও মালিক সমিতির নেতা মোঃ সাদিকুর রহমান হিরু তার বক্তব্যে বলেছেন, শিক্ষার্থীরা কিছু হলেই শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয়, গাড়ি নিয়ে আটকে রাখে। তদুপরি মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনায় একটা স্থায়ী ফয়সালা করার দায়িত্ব সবারই। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সরকার বিআরটিসি বাস বাড়াতে পারে। সব দায় কেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। তাই সকলে মিলে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানার আতুরার ডিপো এলাকায় সম্প্রতি আবদুর রহিম নামের এক বাসচালককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে শনিবার সকালে হাটহাজারীতে সড়ক অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা।
অবরোধের ফলে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোর ৬টা থেকে শ্রমিকরা সড়কে কোনো গাড়ি চলতে না দেওয়ায় তিন মহাসড়কে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়ে। প্রায় তিন ঘণ্টা পর সকাল ৯টার দিকে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা।
নিহত আবদুর রহিম ৩ নম্বর সিটি সার্ভিস বাসের চালক ছিলেন। তাঁর বাড়ি রাউজান উপজেলার গহিরা এলাকায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন আমিন জুটমিল ১ নম্বর গেট এলাকায় একটি মাইক্রোবাসকে অতিক্রম করতে না দেওয়ায় হাটহাজারীর দ্রুতযান স্পেশাল বাস সার্ভিস নামের পরিবহনের বাসচালক আবদুর রহিমকে বেধড়ক মারধর করে মাইক্রোবাসটির যাত্রীরা। পরে বাসটির অন্য যাত্রীরা তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান তিনি।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিচার দাবিতে শনিবার সকালে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাঁরা সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত হাটহাজারীতে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কের উভয় দিকে আটকা পড়ে সব ধরনের যানবাহন। দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী। প্রায় তিন ঘণ্টা পর হাটহাজারী থানার ওসি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসাইন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category