• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১১ অপরাহ্ন

হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন উদ্যোগ

Reporter Name / ২৮৭ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০০৮ সালে একটি আইন পাস হলেও প্রকৃতপক্ষে আইনটির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন হাসপাতালের বর্জ্য এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ, ২০০৩ সালে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠিত হয়। ২০০৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা ঢাকার হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টক সেন্টারগুলোর বর্জ্য অপসারণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। অবশেষে ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা’ হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু এক যুগ পরেও সেই আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। জানা যায়, দেশের বেশিরভাগ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মেডিক্যাল বর্জ্য পরিশোধনের যেমন ব্যবস্থা নেই, তেমনি এসব বর্জ্য পরিশোধনের জন্যও নেই আধুনিক প্রযুক্তি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ অধিদফতরের নির্দেশনা থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোয় সেগুলো মানা হচ্ছে না। তবে, পরিবেশ অধিদফতর থেকে জানা গেল, পরিবেশ অধিদফতর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ায় হাসপাতালগুলোর টনক নড়েছে, তারা অধিদফতরের চাহিদা পূরণে যথাযথ চেষ্টা করছে।এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত আদর্শ মান বজায় রেখে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করবে দেশের ১৫টি সরকারি হাসপাতাল। এ লক্ষ্যে ‘হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। ২১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে এটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ১৫টি হাসপাতাল হলো- শেরে বাংলা নগরস্থ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতাল, বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতাল, লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতাল, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল, বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, লালমনিরহাট জেলা সদর হাসপাতাল, জয়পুরহাট আধুনিক সদর হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল, পিরোজপুর সদর হাসপাতাল ও শেরপুর সদর হাসপাতাল। সূত্র জানিয়েছে, ‘হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প কার্যক্রমের আওতায় ৪৫টি চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় এবং ১৫টি এ, বি, সি ক্যাটাগরিভুক্ত অনাবাসিক ভবন বা স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। সব মিলিয়ে এসব স্থাপনার মোট আয়তন দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৮০৩ বর্গমিটার। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরামর্শক সেবাসহ যানবাহন ভাড়া ও আউটসোর্সিং সেবা নেওয়ার পাশাপাশি আসবাবপত্র, কম্পিউটার ও অফিস সরঞ্জাম কেনা হবে। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল ‘হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’। গত মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক সভায় অনুমোদন করা হয়েছে এটি। কমিশন আরও জানিয়েছে, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকারি হাসপাতালগুলোর বর্জ্যরে যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এগুলোর পরিশোধন, পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ, পরিবহন ও ভাগাড়ীকরণের ক্ষেত্রে একটি যথোপযুক্ত, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী কৌশলের বিকাশ ঘটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ফলে এই প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ। একনেকে উপস্থপনের আগে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কোনও বিরূপ প্রভাব ছাড়াই বিভিন্ন চিকিৎসা বর্জ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও অপসারণের সক্ষমতা তৈরি হবে এবং সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও সংক্রমণমুক্ত পরিবেশে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা যাবে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়িত হবে এটি। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ এই প্রকল্প একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। তার আশা, এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে। এদিকে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় যে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রতিটি মহানগরে এবং জেলা ও উপজেলায় যেখানে হাসপাতাল রয়েছে, সেগুলোকে একটি স্থায়ী ব্যবস্থাপনার ভেতরে নিয়ে আসতে হবে। কারণ, প্রতিটি উপজেলাতেই হেল্থ কমপ্লেক্স ও হাসপাতালের বর্জ্যগুলোকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ডিসপোজ করার জন্য প্রাইভেট-পাবলিকের সম্বন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা গেড়ে তোলা দরকার। এমনও হতে পারে সরকার প্রতিটি জেলা উপজেলা এবং মহানগরে এমন একটি ব্যবস্থা করবে, যেটি হাসপাতালগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য সবদিক দিয়েই হুমকিস্বরূপ। এই বর্জ্যগুলো থেকে একদিকে বিপজ্জনক রোগের জীবাণু ছড়ায়, অন্যদিকে সিরিঞ্জ ও আরও কিছু সরঞ্জাম আছে, যেগুলো অসাবধানতাবশত দ্বিতীয়বার ব্যবহৃত হলে এর মধ্য দিয়েও রোগ ছড়াতে পারে। মেডিক্যাল বর্জ্য ও ওষুধের যে সব কেমিক্যাল থাকে, সেগুলো ধীরে ধীরে মাটির সঙ্গে মিশে পানিতে প্রবাহিত হয়। অর্থ্যাৎ ক্রমাগতভাবে এটি জৈবখাদ্য চক্রের মাধ্যমে মানুষের দেহে ফিরে আসে। এতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর পরিবেশের ক্ষতি তো রয়েছেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category