ঢাকা ১২:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

২৫ মার্চ ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ২৫ মার্চ ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড ইন ১৯৭১’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল, ২৫ মার্চ সাত হাজার লোককে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই তথ্যটি সঠিক নয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নূন্যতম ২৫ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে, কমলাপুরে ট্রেনের যাত্রীদের, সদরঘাটে লঞ্চের যাত্রীদের, বস্তিবাসী, মহিলা শিশু এবং ঘুমন্ত মানুষদের হত্যা করা হয়েছিল। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে এক রাতে কসাই ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব এই হত্যাকা- চালায়। মন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের জন্য স্বীকৃতি অর্জনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। বর্তমানে ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর বিশ্বের কোথাও এমন কোন ঘটনা ঘটে নাই যে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর প্রেক্ষাপট হচ্ছে এ দিন আমরা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা। কারণ এদিন এক রাতে কয়েক ঘণ্টায় এত লোক হত্যা পৃথিবীর কোথাও হয়নি। আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সমস্যা হলো একটা দিবস পরিবর্তনের জন্য জাতিসংঘে ভোটের প্রয়োজন হয়। আমরা আশা করছি বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে, তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমরা পাবো। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তানিদের কবর থেকে তুলে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করবে। ড. এ কে মোমেন বলেন, ১৯৭১ সালে প্রায় তিন কোটি লোক বসতভিটা ছাড়া হয়েছিল। এর মধ্যে এক কোটি লোক ভারতে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রায় ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছে। কিন্তু যারা এই গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের কারো বিচার হয়নি। এটা দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। এটা পৃথিবীর এমনকি পাকিস্তানের জন্যও লজ্জাজনক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের কমিশন বলেছিল তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। আমি আশা করবো পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে। তারা গণহত্যার অপরাধ স্বীকার করবে। তাদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। কবর থেকে তুলে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে। তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের। ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, যেসব দেশে গণহত্যা হয়েছে, তারাও তাদের দেশের গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক দিবস পালনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে জাতিসংঘ একটা মধ্যপথ অবলম্বন করছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর গ্রিগোরি স্টেনস্টোন এবং জেনোসাইড স্কলার ডা. হেলেন জারভিস। সেমিনার উপস্থাপন করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না: প্রধান উপদেষ্টা

২৫ মার্চ ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী

আপডেট সময়ঃ ০৯:০৭:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ২৫ মার্চ ২৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ‘বাংলাদেশ জেনোসাইড ইন ১৯৭১’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একটি আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল, ২৫ মার্চ সাত হাজার লোককে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই তথ্যটি সঠিক নয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নূন্যতম ২৫ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে, কমলাপুরে ট্রেনের যাত্রীদের, সদরঘাটে লঞ্চের যাত্রীদের, বস্তিবাসী, মহিলা শিশু এবং ঘুমন্ত মানুষদের হত্যা করা হয়েছিল। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে এক রাতে কসাই ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব এই হত্যাকা- চালায়। মন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের জন্য স্বীকৃতি অর্জনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। বর্তমানে ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর বিশ্বের কোথাও এমন কোন ঘটনা ঘটে নাই যে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর প্রেক্ষাপট হচ্ছে এ দিন আমরা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা। কারণ এদিন এক রাতে কয়েক ঘণ্টায় এত লোক হত্যা পৃথিবীর কোথাও হয়নি। আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সমস্যা হলো একটা দিবস পরিবর্তনের জন্য জাতিসংঘে ভোটের প্রয়োজন হয়। আমরা আশা করছি বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে, তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমরা পাবো। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যায় জড়িত পাকিস্তানিদের কবর থেকে তুলে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করবে। ড. এ কে মোমেন বলেন, ১৯৭১ সালে প্রায় তিন কোটি লোক বসতভিটা ছাড়া হয়েছিল। এর মধ্যে এক কোটি লোক ভারতে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রায় ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছে। কিন্তু যারা এই গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের কারো বিচার হয়নি। এটা দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। এটা পৃথিবীর এমনকি পাকিস্তানের জন্যও লজ্জাজনক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের কমিশন বলেছিল তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। আমি আশা করবো পাকিস্তানের নতুন প্রজন্ম তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে। তারা গণহত্যার অপরাধ স্বীকার করবে। তাদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। কবর থেকে তুলে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে। তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের। ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, যেসব দেশে গণহত্যা হয়েছে, তারাও তাদের দেশের গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক দিবস পালনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে জাতিসংঘ একটা মধ্যপথ অবলম্বন করছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর গ্রিগোরি স্টেনস্টোন এবং জেনোসাইড স্কলার ডা. হেলেন জারভিস। সেমিনার উপস্থাপন করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী।