• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

আতঙ্ক জেঁকে বসেছে শেয়ারবাজারে

Reporter Name / ৩৬ Time View
Update : রবিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর দুদিন শেয়ারবাজারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও এরপর টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে এই দরপতন ঘটছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। আতঙ্কে প্রতিদিনই লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে শেয়ারের দাম। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লাও ভারি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে লোকসানে শেয়ার বিক্রির চাপ না বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন শেয়ারবাপজার সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মাস শেষের দিকে হওয়ায় বিক্রির চাপ কিছুটা বেশি। বিশেষ করে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। তবে খুব শিগগির বিক্রির চাপ কমে আসবে। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উচিত বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করা। নানা পক্ষের সমালোচনার মধ্যে পড়ে প্রায় দেড় বছর পর গত ১৮ জানুয়ারি বিকেলে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৩৫ প্রতিষ্ঠান বাদে সবগুলো থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে ২১ জানুয়ারি লেনদেনের একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২১৪ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে শেষ দিকে বিক্রির চাপ কমায় প্রধান সূচক ৯৬ পয়েন্ট কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়। পরের কার্যদিবস গত সোমবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে সবকটি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে প্রায় ছয় মাস পর ডিএসইতে হাজার কোটি টার ওপরে লেনদেন হয়। এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার বিকেলে আরও ২৩ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। পরের কার্যদিবস মঙ্গলবার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও বাড়ে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়। তবে পরের দুই কার্যদিবস আবার বড় দরপতন হয়। এতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই বড় পতন হতে দেখা যায়। ফলে এক সপ্তাহেই ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা কমে যায়। এ পরিস্থিতিতে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোবাবার (২৮ জানুয়ারি) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। কিন্তু লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বিক্রির চাপ। ফলে দিনের লেনদেন শেষে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে মাত্র ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১১টির। আর ২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৭৭ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৭৯ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৩৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। মিজানুর রহমান নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে লাগাতার দরপতন হচ্ছে। এতে আমার পোর্টফোলিওতে থাকা তিনটি শেয়ারের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়ার সময়ও এসব প্রতিষ্ঠানে লোকসানে ছিলাম। সবমিলিয়ে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছি। এখন প্রতিদিনই আতঙ্কে থাকি। আর দিনের লেনদেন শেষে হিসাব করার চেষ্টা করি লোকসান কত বাড়লো। জানি না এ অবস্থা কতদিন চলবে। তিনি বলেন, আমার পোর্টফোলিও যে ব্রোকারেজ হাউসে আছে, তাদের কাছে বিক্রি করার আগ্রহের কথা বললে, তারা অপেক্ষা করতে বলেন। সবাই পরামর্শ দিচ্ছেন এই পরিস্থিতিতে লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করতে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে দরপতন হওয়ায় প্রতিদিনই লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। শেয়ারবাজারের এই দরপতন সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, মাস শেষের দিকে, এ কারণে এখন শেয়ার বিক্রির এক ধরনের চাপ রয়েছে। কিছু বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণের কারণে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। তবে দুই-চারদিনের মধ্যে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। এ পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের লোকসানে শেয়ার বিক্রি করা ঠিক হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর বাজারে একটু দরপতন হবে এটাই স্বাভাবিক। বিনিয়োগকারীদের এখন ধৈর্য ধারণ করতে হবে। যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, তারা সমস্যায় আছেন। আমার ধারণা কয়েক দিনের মধ্যে বাজার ভালোর দিকে যাবে। এদিকে সবকটি মূল্যসূচক কমলেও লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে হাজার কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এই লেনদেন বাড়াতে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। দিনভর কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৫২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডি থাই অ্যালুমেনিয়ামের ২৯ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৬ কোটি দুই লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, ফু-ওয়াং ফুড, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৬৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২০৮টির এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category