• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:১৫ পূর্বাহ্ন

আমদানির প্রভাব আলুর বাজারে, আরও কমেছে দাম

Reporter Name / ৩৩ Time View
Update : সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :
আলু আমদানির প্রভাবে রাজধানীতে গত দুই দিনেই আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায়ও কমছে আলুর দাম। তবে সবচেয়ে বেশি কমেছে ঠাকুরগাঁওয়ে। সেখানে সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম পাইকারি বাজারে কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকায়। আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর গত রোববার পর্যন্ত ভারত থেকে ৪৯৮ টন আলু আমদানি হয়েছে। আজ পর্যন্ত ১৩০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৯২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭০ টন আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় আমদানি হয়েছিল ৭৫ হাজার ৬৫৯ টন। এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে আলুর দাম কমে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারের মেসার্স জনতা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আফসার উদ্দিন বলেন, আলুর দাম গত দুই দিনে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। এ মাসেই প্রতি কেজি আলুর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকায় নেমে আসতে পারে। কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। আলু বিক্রেতা মো. ফরিদ হোসেন বলেন, শনিবার রাত থেকে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। দুই দিনের মধ্যেই প্রকারভেদে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। হল্যান্ডের সাদা আলু খুচরায় ৩৫ টাকা ও লাল আলু ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি আলু ২৬ থেকে ২৭ টাকায় কিনে বিক্রি করছেন ৩০ টাকায়। হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আবুল কালাম জানান, গত দুই দিনে বাজারটিতে আলু কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। গত শুক্রবার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। গতকাল তা ৪০ টাকায় নেমে এসেছে। ভারতীয় আলু আমদানির কারণেই বাজার পড়তির দিকে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রনি খান জানান, বাজারটিতে আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের সবজি বিক্রেতা মো. আমির হোসেন জানান, শুক্রবার ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া আলু গতকাল ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও প্রতিবেদক জানান, গত সপ্তাহে আলুর দাম ছিল ৪৫-৫০ টাকা কেজি। গত রোববার পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৭ থেকে ১৮ টাকায়। কেজিতে কমেছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। গত সপ্তাহে নতুন আলু বিক্রি হয়েছিল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। কৃষকরা বলছেন, দাম হঠাৎ কমে গেছে। তবে এবার তাদের খরচ বেশি হয়েছে। এই দাম থাকলে লাভ তেমন করতে পারবেন না। ঠাকুরগাঁওয়ের আড়তদাররা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ার ফলে তারা আলু কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এজন্য আলুর দাম হঠাৎ কমে গেছে। ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের কৃষকরা জমি থেকে আলু তোলা শুরু করেছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়ছে। সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের আলুচাষি করিমুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বাজারে আলু ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি। পাইকাররা কৃষকের কাছ থেকে কিনছেন ১৭ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে। এবার কুয়াশার কারণে ফলন তেমন হয়নি। এই দাম পেলে লোকসান না হলেও, লাভের মুখও দেখা যাবে না। গড়েয়া ইউনিয়নের কৃষক আবুল কালাম জানান, তিনি চার একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। ১৮ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন। গোবিন্দ নগরের আড়তদার হিমেল বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় বর্তমানে পুরোদমে আলু ওঠা শুরু হয়েছে। এজন্য দাম কমছে। এ ছাড়া ভারত থেকে আমদানি শুরু হওয়ায় দাম বেশ কমে গেছে। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম ভালো দাম পাওয়ার জন্য কৃষকদের আলু সংরক্ষণের পরামর্শ দেন।
এদিকে হিলি (দিনাজপুর) প্রতিবেদক জানান, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গত রোববার ৮টি ট্রাকে ২০০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। শনিবার আমদানি হয়েছিল ১০০ মেট্রিক টন। পাবনার মুক্ত এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব আলু আমদানি করেছে। আমদানি করা আলু পোর্ট বাজারে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২১ টাকা কেজি দরে। গত রোববার হিলির খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার বড় জাতের দেশীয় কাটিলাল আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, তা গতকাল ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট জাতের লাল পাটনা আলু ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, গতকাল তা ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ছোট জাতের সাদা পাটনা আলু বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিবেদক জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানি হয়েছে ৬৪০ মেট্রিক টন। শনিবার থেকে গত রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভারতীয় ট্রাকে এসব আলু আমদানি হয়। সোনামসজিদ উদ্ভিদ সংগনিরোধের উপপরিচালক সমির ঘোষ জানান, গত রোববার পর্যন্ত এ বন্দরের ৫৫ জন আমদানিকারক ৫৯ হাজার ১০০ মেট্রিক টন আলু আমদানির অনুমতি চেয়েছেন। সবাইকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৪০ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। আলু আমদানি হওয়ায় এ এলাকার বাজারে কেজিতে দাম কমেছে ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে সেখানে আলু বিক্রি হচ্ছে রকমভেদে ১৮ থেকে ২৫ টাকায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category