• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন

করোনমুক্ত অধিকাংশ রোগীই পরবর্তীতে জটিলতায় ভুগছে

Reporter Name / ১৭৮ Time View
Update : রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনামুক্ত অধিকাংশ রোগীই পরবর্তীতে দীর্ঘ জটিলতায় ভুগছে। মূলত করোনা সংক্রমিত থাকার সময় প্রয়োগ করা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেই অনেকের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। করোনামুক্ত হলেও অধিকাংশ রোগীরই ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়ে যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনামুক্ত হওয়ার ৩ মাস পরও ৪০ শতাংশ রোগী নানা জটিলতায় ভুগছে। ওই ধরনের ৫০০ রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে প্রায় ২০০ জনের কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, নাকে গন্ধ কম পাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, কিডনি, লিভারজনিত জটিলতা পাওয়া গেছে। বয়স্কদের মধ্যে জটিলতার হার বেশি। কিন্তু করোনা-পরবর্তী জটিলতায় মৃত্যুর খবর অধিকাংশই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। তাদের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। পাশাপাশি অনাকাক্সিক্ষত ওসব মৃত্যু কেন হচ্ছে, কীভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়- তা নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে না। স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা ৮৭ হাজার করোনা রোগী এবং ৫০ হাজার সুস্থ ব্যক্তির তথ্য বিশ্নেষণ করে জানতে পারেন, সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যু ৬০ শতাংশেরও বেশি। গবেষকরা করোনা সংক্রমণের পরবর্তী ৬ মাসকে মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। আর এদেশে করোনা-পরবর্তী জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের জটিলতা ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীই বেশি। শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা ব্যক্তিদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার আগে ওই সমস্যা ছিল না। করোনা সংক্রমণে ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া কিডনি, লিভার, নিউরো, উচ্চ মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, খাবারে অরুচি ও দুর্বলতা নিয়েও রোগীরা হাসপাতালগুলোর পোস্ট কভিড ইউনিটে চিকিৎসা নিতে আসছে। অধিকাংশ রোগীই দীর্ঘদিন ধরে জটিলতায় ভুগছে।
সূত্র জানায়, করোনা-পরবর্তী অধিকাংশ রোগীরই ফুসফুসের কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়ায় রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছায় না। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে রোগীর কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এমন অবস্থাকে পালমোনারি ফাইব্রোসিস বলা হয়। তাতে ফুসফুসের নরম অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায়, ক্ষত সৃষ্টি হয়, ফুসফুসের টিস্যু মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। ফুসফুসে বাতাসের থলিগুলোর কার্যকারিতা হ্রাস পায়। সেজন্য করোনামুক্ত হওয়ার পরও নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা প্রয়োজন। আর যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যুও হতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, করোনা-পরবর্তী জটিলতায় ভোগা রোগীদের কথা বিবেচনা করে গত আগস্টে বিএসএমএমইউতে পোস্ট কভিড ইউনিট চালু করা হয়েছে। গত তিন মাসে ওই ইউনিটে ৩ হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওসব থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পেতে চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণা চালানো প্রয়োজন। বিএসএমএমইউর পক্ষ থেকে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া গত আগস্টে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেও পোস্ট কভিড ইউনিট চালু হয়। সেখানেও প্রায় আড়াই হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে এ প্রসঙ্গে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর জানান, করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর যেসব জটিলতা দেখা দেয়, তা কাটিয়ে উঠতে অনেকের সময় লাগে। অবশ্য কেউ কেউ দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। করোনা সংক্রমণে সৃষ্ট জটিলতা কতদিন থাকে তা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে। দু-একটি গবেষণার প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির শারীরিক জটিলতা ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মূলত অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনা-পরবর্তী জটিলতায় থাকা রোগীরা হাসপাতালে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয় না। চিকিৎসায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান- ওই ধরনের রোগীদের যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category