• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন, উদ্বিগ্ন বিশ্ব সম্প্রদায়

Reporter Name / ১৬১ Time View
Update : রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনার ভয়ানক বলয় থেকে বিশ্ব যেন সহজে ছাড় পাচ্ছে না। নব নব রূপে এটি বিশ্বে হানা দিচ্ছে। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের নতুন একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনের নাম রাখা হয়েছে ওমিক্রন। নতুন এ ধরনকে উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। স্থানীয় সময় শুক্রবার সংস্থাটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সূত্র জানায়, ওমিক্রনকে এখন পর্যন্ত পাওয়া করোনার ভয়াবহ ধরনগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে ধরা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে করোনার এ ধরনের নাম রাখা হয়েছিল বি.১.১.৫২৯।
ডব্লিউএইচও বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন শনাক্ত হওয়া ধরনটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। এর সংক্রমণের ক্ষমতা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন এনেছে কি-না তা এই সময়ের মধ্যে খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি করোনার প্রচলিত চিকিৎসা ও টিকার ওপর কোনো প্রভাব আসবে কি-না সেটাও জানার চেষ্টা করা হবে।
করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ায় এরইমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল। আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে ভ্রমণবিষয়ক বিধিনিষেধ আরোপ করছে যুক্তরাজ্য। এরইমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো এবং এসোয়াতিনি থেকে যুক্তরাজ্যে সব ফ্লাইট স্থগিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারতের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে সতর্ক করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কঠোর নজরদারি এবং করোনা পরীক্ষায় জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? বিশেষ করেÑদক্ষিণ আফ্রিকা, হংকং ও বতসোয়ানা থেকে আগতদের করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, এ তিন জায়গায় এখন পর্যন্ত মোট ৫৯ জনের শরীরে নতুন ধরনের এ ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থগিত করছে বাংলাদেশও। শনিবার সকালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য ‘ওয়ার্ল্ড হেলত অ্যাসেম্বলি সেকেন্ড স্পেশাল সেশন’ এ অংশ নিতে যাত্রাকালে এক অডিও বার্তায় এসব কথা জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এরইমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওমিক্রন বি.১.১.৫২৯ নামের ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগযোগ বন্ধ করছে বাংলাদেশ।এ ছাড়া, যেসব দেশে এই সংক্রমণ দেখা দিয়েছে সেসব দেশে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রাখা হবে।’ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের সকল বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরে ‘স্ক্রিনিং’ আরও জোরদার করা হচ্ছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑকোভিডের সর্বশেষ এ ভ্যারিয়্যান্টকে বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বেশি বার রূপান্তরিত ধরন। এবং ভ্যারিয়্যান্টটি এতবার রূপান্তর হয়েছে যে, একে ‘ভয়াবহ’ বলেছেন একজন বিজ্ঞানী। আরেক বিজ্ঞানী বলেছেনÑএটি তাঁদের দেখা সবচেয়ে খারাপ ভ্যারিয়্যান্ট।
এ ধরনটির স্পাইক প্রোটিনে ৩০টির বেশি মিউটেশন রয়েছে। অতি সংক্রামক ডেলটার তুলনায় সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি। মানুষের দেহকোষে ঢুকে পড়ার জন্য ভাইরাস মূলত এটাকে ব্যবহার করে থাকে। এমন নাটকীয় পরিবর্তনের কারণে এ উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে এর আগে সংক্রমিত হওয়ার কারণে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি অথবা করোনার টিকা ধরনটির সঙ্গে আর মানিয়ে নিতে পারবে না। জিনগত রূপ বদলের বিষয়টির ওপর ভিত্তি করেই বিজ্ঞানীদের পূর্বানুমান, এ ধরনটি আরও বেশি মাত্রায় সংক্রমণ ঘটাবে এবং এর আগে অন্য ধরনের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি হয়েছে তারা পুনরায় আক্রান্ত হতে পারেন। সংক্রমণের মাত্রা নিয়ে স্পষ্ট হওয়া না গেলেও ধরনটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে, সেটা খুব উদ্বেগজনক। দক্ষিণ আফ্রিকায় ঊর্ধ্বগতি সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ১৬ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় যেখানে ২৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয় এ সপ্তাহের শুরুতে সেই সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। এর ৮০ শতাংশের বেশি দেশটির গৌতেং প্রদেশের। প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, খুব দ্রুত এ ধরন আধিপত্যশীল ধরন হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এতে আগাম সতর্কতা জরুরি হয়ে পড়েছে।
অ্যান্টিবডিগুলো কীভাবে কার্যকরভাবে নতুন এ ধরনের সংক্রমণ রুখে দিতে পারে, তা পরীক্ষার জন্য জোর গতিতে গবেষণা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ ধরনটির কারণে সত্যিকার অর্থে বিশ্বজুড়ে পুনরায় করোনায় সংক্রমিত হওয়ার হারের তথ্য-উপাত্ত আসতে শুরু করলে হয়তো মানুষের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন ঘটবে কি না, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাবে।
বিদ্যমান অ্যান্টবডিগুলো নতুন ধরনটিকে একেবারেই শনাক্ত করতে পারবে না, এমনটা অবশ্য মনে করছেন না বিজ্ঞানীরা। যেটা হতে পারে যে এখন করোনার যেসব টিকা আছে সেগুলো নতুন ধরনে কম সুরক্ষা দেবে। এজন্য ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে তৃতীয় ডোজসহ টিকাদানের হার বৃদ্ধি করাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ধরনটিতে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকার। এ ছাড়া বতসোয়ানা ও হংকংয়ে এ ধরনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলেও একজনের এ ধরনে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেছে। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি মালাউই থেকে ফিরেছেন। দেশটিতে আরও দুজন এ ধরনটিতে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া শুক্রবার বেলজিয়ামে একজন এ ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি মিসর এবং তুরস্কে সফরে গিয়েছিলেন।
এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকায় গোষ্ঠী পর্যায়ে এ ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। যদি এ ধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে ইতোমধ্যে অন্যান্য দেশেও এর বিস্তার ঘটেছে। পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা মানে অর্থ খরচ করে সময় কেনা। কিন্তু কঠোর লকডাউনের সঙ্গে করোনা শূন্য হওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন না করায় এসব পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে সম্পূর্ণরূপে করোনার বিস্তার ঠেকানোর আশঙ্কা কম।
করোনা ভাইরাসের এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনটি অত্যন্ত সংক্রমণপ্রবণ। বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সরাসরি যোগাযোগ না থাকলেও কোনো না কোনোভাবে ওই ধরনটি চলে আসবে। সুতরাং এটি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। একই সঙ্গে টিকাকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে যাতে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায়। তাহলে ওই ধরন এলেও তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category