• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হচ্ছে নবনির্মিত স্টেডিয়াম ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ৬৭ জনের মৃত্যু সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে কোরবানির চাহিদার চেয়ে ২২,৭৭,৯৭৩ অতিরিক্ত গবাদিপশু প্রস্তুত দেশব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিরাট জাগরণ তৈরি হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছি: কৃষিমন্ত্রী ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না: কাদের টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী রোয়াংছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রাবাসে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার ১৫ দিনব্যাপী সাঁতার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন

কাবিনবিহীন বিয়ে, প্রতারণা, আমাদের আইন ও জনসচেতনতা

Reporter Name / ১৭৪ Time View
Update : বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১

সিরাজ প্রামাণিক
বিয়ে মানুষের জীবনের সবচেয়ে সুখকর অনুভূতি ও প্রজন্ম বিস্তারের একমাত্র উপায় হলেও কখনও কখনও তা অভিশাপ রূপে দেখা দেয়। মুসলিম আইনে বিয়ে হচ্ছে ধর্ম কর্তৃক অনুমোদিত একটি দেওয়ানী চুক্তি। বিভিন্ন ধর্মে বিয়ের বিভিন্ন রীতি প্রচলিত। বিয়ে মূলত একটি ধর্মীয় রীতি হলেও আধুনিক সভ্যতায় এটি একটি আইনী প্রথাও বটে। বিবাহবহির্ভুত যৌনসঙ্গম অবৈধ বলে স্বীকৃত এবং ব্যাভিচার হিসাবে অভিহিত একটি পাপ ও অপরাধ।
পাঠক এবার আসল কথায় আসি। রহিম ও রুনা (ছদ্মনাম) একে অপরকে গভীরভাবে ভালবাসে। ভালবাসাকে বাস্তবে রুপ দিতে ওরা পরিবারের অমতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রেমের টানে রহিমের হাত ধরে ঘর ছাড়ে রুনা। উভয়ের গন্তব্য ঢাকা। ওদের ধারনা কোর্টে উকিলের মাধ্যমে বিয়ে করতে হয়। সুযোগ সন্ধানী এক শ্রেনীর উকিলও এ কাজে সহায়তা করে থাকে। আদালতের নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে গিয়ে ওরা ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করে। কিন্তু তখন তারা বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রী করেনি। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই ওদের দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। রহিম রুনার সঙ্গে তার বিয়ের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। আর এ অজুহাতে রুনাকে মোহরানা, খোরপোষ ও দাম্পত্য অধিকার দিতেও তিনি রাজি নন। অবশেষে বিষয়টি গড়ায় আদালতে। বিয়েটা প্রমাণ করতে রীতিরকম হিমশিম খেতে হয় রুনাকে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করা বাধ্যতামূলক। বিবাহ রেজিস্ট্র্রি না করলে স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার, মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকার, খোরপোষ ও মোহরানার অধিকার থেকে ওই নারীকে বঞ্চিত হতে হয়। এছাড়া স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে বা প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে বিয়ে করার উদ্যোগ নিলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন বিয়ে যদি রেজিস্ট্রি করা হয়। সুতরাং বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে একজন নারী তার দাম্পত্য জীবনের অনেক জটিলতা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন এবং অসহায়ত্ব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইনে (সংশোধিত ৮ই মার্চ, ২০০৫) বলা হয়েছে যে, যদি কেউ বিবাহ রেজিস্ট্রি না করেন তাহলে তিনি এ আইনের অধীনে অপরাধ করেছেন বলে বিবেচিত হবেন এবং এ অপরাধের জন্য আইন কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি হচ্ছে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা আর্থিক জরিমানা যা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে অথবা উভয় ধরনের শাস্তিই হতে পারে। কাবিন রেজিষ্ট্রীর পরিবর্তে কোর্টম্যারেজ অধিকতর শক্তিশালী এ ভুল ধারণার ফাঁদে পড়ে অনেক নারী তাদের দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ‘কোর্ট ম্যারেজের কোন বৈধতা নেই, এমনকি এর কোন অস্তিত্বও নেই। ২০০ টাকার টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে বিয়ে বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র। আইনানুযায়ী কাবিন রেজিষ্ট্রী সম্পন্ন করেই কেবল ঘোষণার জন্য এফিডেভিট করা যাবে। বিশেষ কয়েক শ্রেণীর নারী-পুরুষের মধ্যে এরকম বিয়ের প্রবণতা বেশী দেখা যায়। তন্মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক, যৌন কর্মী, এবং বিশেষ প্রেম-ঘটিত তরুণ-তরুণী। আবেগঘন সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক তরুন-তরুণীর ভুল ধারণা হয় যে, শুধুমাত্র এফিডেভিট করে বিয়ে করলে বন্ধন শক্ত হয়। কাজী অফিসে বিয়ের জন্য বিরাট অঙ্কের ফিস দিতে হয় বলে কোর্ট ম্যারেজকে অধিকতর ভাল মনে করে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর নারী-পুরুষেরা। অন্যদিকে যৌনকর্মীরা অনেক সময় ঠিকানা বদল করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অবস্থানের সুবিধার কথা বিবেচনা করে কোর্ট ম্যারেজে উৎসাহ হয় অধিক। অনেকে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদন করে একাধিক বিয়ের কথা গোপন করার জন্য। কোন মেয়ের অভিভাবককে জিম্মি করে টাকা আদায় কিংবা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যও অনেক সময় এফিডেভিটের মাধ্যমে ভূয়া বিয়ের দলিল তৈরী করা হয়। এ দলিল তৈরী করা খুব সহজেই সম্ভব এবং এসব ক্ষেত্রে হলফনামা প্রার্থীকে নোটারি পাবলিকের কাছে হাজির হতে হয় না। এর ফলে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা থেকে রক্ষার জন্য আসামী পক্ষের এরকম হলফনামা তৈরীর প্রবণতা দেখা যায়। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার এক কেস স্টাডিতে দেখা যায়, সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী সাথী ও বিদ্যুৎ (ছদ্মনাম) এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদন করে। তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কিন্তু ঘটনা পরষ্পর তাদের দাম্পত্য জীবন বেশী দূর এগোয়নি। পরে তারা স্বেচ্ছায় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে একটি হলফনামা সম্পাদন করেন। হলফনামাটি একটি সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে রেজিষ্ট্রি করে। কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের এ ধরণের দলিল রেজিষ্ট্রী করা ও এ্যাফিডেভিট করা সম্পূর্ণ বে-আইনী। হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদ বলে কিছু নেই। সঙ্গত কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে হবে পারিবারিক আদালতে। খ্রিষ্টান আইনেও বিবাহ একটি চুক্তি, যা ভঙ্গ করা যায় না। ১৮৬৯-এর বিবাহ বিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য আদালতে যেতে পারেন। বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন হচ্ছে সরকারের নির্ধারিত ফরমে লিখিত বর ও কনের বিয়ে সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সম্বন্ধে আইনগত দলিল যা কাজী অফিসে সংরক্ষিত থাকে। সরকার কাজীদের বিয়ে রেজিষ্ট্রী করার জন্য অনুমতি বা লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। আইনানুযায়ী বিয়ের আসরেই বিয়ে রেজিষ্ট্রিী করতে হয়। বিয়ের আসরে সম্ভব না হলে বিয়ে অনুষ্ঠানের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রী করতে হয়। কাজীকে বাড়িতে ডেকে এনে অথবা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রী করা যায়। এছাড়াও কাবিননামার সকল কলাম পূরণ করার পর বর, কনে, উকিল, সাক্ষী ও অন্যন্যা ব্যক্তিগণের স্বাক্ষর দিতে হয়। ইসলাম ধর্মে বিবাহ নিবন্ধন আইন থাকলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে বিবাহ নিবন্ধন আইন ছিল না। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ নিবন্ধনের বিধান ঐচ্ছিক রেখে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন তৈরী হওয়ায় এখানেও অনেক জটিলতা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বিদেশ ভ্রমণ, অভিবাসন, চাকুরী বদরী ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিবাহ সম্পর্কিত দালিলিক প্রমাণ একটি অপরিহার্য বিষয়। প্রতারণার সুযোগ বন্ধ করা এবং হিন্দু নারীদের সামাজিক ও আইনী সুরক্ষা সৃষ্টির লক্ষ্যে হিন্দু বিবাহ আইন ঐচ্ছিক না রেখে বাধ্যতামূলক করা সমীচীন।
কাবিনবিহীন বিয়ে প্রমানে একটি কেইস স্টাডি
মমতাজ বেগম ও আনোয়ার হোসেন একে অপরকে ভালোবাসেন। সে সূত্র ধরে দুজন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করতে শুরু করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বিয়ের কোনো কাবিননামা রেজিস্ট্রি হয়নি। এক পর্যায়ে লোভী আনোয়ার হোসেন মমতাজ বেগমের কাছে যৌতুক দাবি করে নির্যাতন করে এবং যৌতুক না পাওয়ায় মমতাজ বেগমকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। মমতাজ বেগম তার ভরণপোষণ এবং দেনমোহর চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা ঠুকে দেন। কিন্তু বিধিবাম! আনোয়ার হোসেন মমতাজ বেগমের সঙ্গে তার বিয়েকে অস্বীকার করে আদালতে জবাব দাখিল করে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এদিকে মমতাজ বেগম দাবি করেন, তাদের মধ্যে মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এবং তারা দীর্ঘদিন স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই একত্রে বসবাস করছেন এবং স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন। মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে পারিবারিক আদালত আদেশ দেয়, তাদের মধ্যে বিয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। পারিবারিক আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ আনোয়ার হোসেন ১৯৯৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট বিভাগের একটি একক বেঞ্চ ১৯৯৯ সালে পারিবারিক আদালতের আদেশটি খারিজ করে দেন। হাইকোর্ট বিভাগ তার রায়ে বলেন, তাদের মধ্যে কোনো প্রকার কাবিননামা সম্পন্ন হয়নি যা বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং মমতাজ বেগম তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগের এ রায়ের বিরুদ্ধে মমতাজ বেগম লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) দায়ের করেন এবং আপিল মঞ্জুর হয়। আপিল বিভাগে মমতাজ বেগমের পক্ষে ২০০৩ সালে আপিলটি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রাবেয়া ভুঁইয়া। সিভিল আপিল নাম্বার-১৩৯/২০০৩। তিনি আপিলে দাবি করেন, কাবিননামার অনুপস্থিতিতে বিয়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যাবে না এই মর্মে হাইকোর্ট বিভাগের বিবেচনা যুক্তিসঙ্গত নয় এবং তা আইনের সঠিক মর্ম নয়। অবশেষে ৩১ জুলাই ২০১১ তারিখে আপিল বিভাগ মমতাজ বেগমের পক্ষে রায় দেয়। মমতাজ বেগম বনাম আনোয়ার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে বিচারপতি এস কে সিনহা মন্তব্য করেছেন, মুসলিম নর ও নারী যদি স্বামী ও স্ত্রীর পরিচয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করেন এবং তাদের মধ্যে যদি রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামা না-ও হয়ে থাকে, তাহলেও এখানে বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকতে পারে। তারা উভয়ে স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের মধ্যে মুসলিম আইন অনুযায়ী বৈধ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলেও গণ্য হতে পারে। সুতরাং কাবিননামা ছাড়া স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করলে বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকতে পারে। ভারতের কেরালার একটি পারিবারিক আদালতে এক নারী ভরণ পোষণের দাবিতে মামলা করেন যেখানে বাদীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত পন্থায় এক ছাদের নিচে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করছিলেন তিনি। বিয়ে সম্পর্কিত কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকায় নিম্ন আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। কিন্তু কেরালা হাইকোর্টে বিচারপতি সি এস কারনান এ সিদ্ধান্তকে নাকচ করে বিবাহের সংজ্ঞায় যুগান্তকারী ও যুগোপযোগী এক সিদ্ধান্ত দেন। বলা হয়, আইনে সংজ্ঞায়িত প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে যদি বিবাহপূর্ব কোনো শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয় এবং একত্রে বসবাস করে সে ক্ষেত্রে এটিকে ‘বিবাহ’ হিসেবে ধরা হবে এবং একত্রে বসবাসকারী ছেলে-মেয়েদের ‘স্বামী-স্ত্রী’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যদি কোনো অবিবাহিত ছেলে-মেয়ে যথাক্রমে ২১ এবং ১৮ বছর অতিবাহিত করে এবং একত্রে বসবাস করতে চায়, ‘ফ্রিডম অব চয়েজ’ অনুসারে এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। তবে এই সম্পর্কের সকল পরিণতি বা দায়ও তাদের ওপর বর্তাবে। কারণ কোনো ‘কাজ’ বা ‘আচরণ’ দ্বারা দায়িত্বশীল পক্ষ তার ফলাফল অনুসরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। আদালত তার রায়ে আরো বলেন, যখন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েরা এভাবে একে অপরের সঙ্গে বসবাস করবে তখন তাদের উভয়ে বা কোনো একজন ওই বসবাসকে ‘বিয়ে’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ‘ঘোষণামূলক মোকদ্দমা’ দায়ের করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী সরকারি সব রেজিস্ট্রারে তাদের নাম স্বামী-স্ত্রী গণ্য করতে হবে যেখানে স্বামী-স্ত্রীর সব অধিকার ও দায়দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে। আন্তর্জাতিক আইন যেমন সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদ ১৬, আইসিইএসসিআর-এর ১০ অনুচ্ছেদ, আইসিসিআরপির ২৩ অনুচ্ছেদে পুরুষ ও নারীর মধ্যে সম্মতির ভিত্তিতে বিয়ের কথা বলা হলেও আনুষ্ঠানিকতার উল্লেখ নেই। একই ধরনের অভিব্যক্তি ইউরোপ-আমেরিকার আঞ্চলিক কনভেনশনগুলোতেও দেখা যায়। লিভ টুগেদারের মতো আচরণ রোধে নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু যখন কোনো যুগল এ ধরনের আচরণে জড়িয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে তাদের একপক্ষ যেন অপরপক্ষকে একতরফাভাবে পরিস্থিতির শিকার না বানাতে পারে, সে জন্য আদালত এ ধরনের সম্পর্ককে ‘অনুমান নীতি’র ওপর ভিত্তি করে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও বিয়ে বিবেচনা করতে পারেন। এতে করে পক্ষগণের ওপর দায়-দায়িত্ব আরোপ করা সহজ হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category