• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনা প্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনে আগুন : নেভানোর চেষ্টা চলছে, তবে সময় লাগবে গাছ কাটা বন্ধে রিট আবেদন অননুমোদিত স্টিকারে ৩৬৩ মামলা, দুই হাজার গাড়ি ডাম্পিং: ট্রাফিক পুলিশ এবার মানবপাচার মামলায় রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমরা দায়মুক্ত হয়েছি: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী মুসলিমদের একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকার পরিচালনাকারী সবাই ফেরেশতা নয়: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল দেখিয়ে ৫০ কোটি টাকা ঋণ, গ্রেপ্তার ৮ বিচারকাজ পরিচালনায় আপিল বিভাগে দুই বেঞ্চ

গরমে লোডশেডিংয়ে ভুগছে গ্রামের মানুষ, ঢাকায় লোডশেডিংয়ে কম

Reporter Name / ৯ Time View
Update : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশজুড়ে চলমান দাবদাহে বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা পূরণের চেষ্টায় রেকর্ড হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এর পরও ঢাকার বাইরের জেলা-উপজেলা শহরসহ গ্রামাঞ্চলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ভাপসা গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ গ্রামাঞ্চলের মানুষ। এই ছাড়া গ্রামাঞ্চলে ব্যাহত হচ্ছে শেষ মুহূর্তের সেচ কার্যক্রম। বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র বলছে, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। চাহিদা আছে সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। মঙ্গলবারও দিনের বেলায় প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের শিয়ালখোয়ার বাসিন্দা শাহ আলী বলেন, ‘গত ১৫ দিনে আমরা প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছি। লালমনিরহাটের সংবাদদাতা জানান, অতিরিক্ত গরমে শাহ আলীর মালিকানাধীন পোল্ট্রি ফার্মে গত দুই সপ্তাহে ১৫০টি পাখি মারা গেছে। লালমনিরহাট সদরে আফজাল হোসেন জানান, সোমবার রাত ৯টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার মধ্যে সাতবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। প্রতিটি লোডশেডিং সাধারণত এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। মঙ্গলবার রাত ৯টায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানায়, ১৬,৭০০ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে ১৬,২৩৩ মেগাওয়াট উৎপাদিত হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে। ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণকারীরা – ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড – জানিয়েছে যে মঙ্গলবার তাদের বিদ্যুৎতর সরবরাহে কোন ঘাটতি ছিল না যখন তাদের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১,৩২৮ মেগাওয়াট এবং ১,৭৪৫ মেগাওয়াট। এক দিনের সামান্য হ্রাসের পর, বুধবার তাপমাত্রা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী এবং যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহের সাথে ঈশ্বরদীতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে তাপমাত্রা সহ একটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ রাজধানী ঢাকা সহ বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছিল। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড যেটি খুলনা, বরিশাল এবং বৃহত্তর ফরিদপুরে, বেশিরভাগ শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, মঙ্গলবারও যতটা প্রয়োজন ততটুকু বিদ্যুৎ পেয়েছে – ৬৮৫ মেগাওয়াট। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড, যেটি বেশিরভাগই রাজশাহী এবং রংপুর শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ করে, ৭৭১ মেগাওয়াটের চাহিদার সাথে মাত্র ১০ মেগাওয়াট লোডশেডিং রেকর্ড করেছে। বিপিডিবি যা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট এবং ময়মনসিংহ শহর বিদ্যুৎ বিতরণ করে, মঙ্গলবার সেখানে প্রায় ১০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণকারীরা প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার জন্য দায়ী করেছে। অন্যদিকে, গ্রামীণ বিদ্যুৎায়ন বোর্ড, অন্যান্য গ্রাহকদের সাথে গ্রামগুলিতে ৩.৫ কোটিরও বেশি গার্হস্থ্য গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দায়ী, মঙ্গলবার রাত ৯:০০ টায় তাদের চাহিদা ৯,৯৮১ মেগাওয়াটের বিপরীতে ৯,২৫০ মেগাওয়াট পেয়েছে। বাংলাদেশ পল্লি বিদ্যুৎায়ন বোর্ড (আরইবি)-র সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘শহরগুলোতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকার কারণে গ্রামগুলোতে বেশি লোডশেডিংয়ের শিকার হওয়া স্বাভাবিক। ময়মনসিংহের গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি ঘণ্টার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)তে বিতরণের দায়িত্বে থাকা রেজাউল করিম বলেন, গ্রামগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণটি বরং অন্তর্নির্মিত কারণ শহরের তুলনায় গ্রামে বিতরণ ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক দুর্বল। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎতর ঘাটতি না থাকলেও গ্রামে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া অনিবার্য। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। সক্ষমতা থাকলেও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদিত না হওয়ার জন্য জ¦ালানি সংকট এবং কেন্দ্র মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য বন্ধ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া বিতরণ ও সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে প্রায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চাহিদা অনুসারে বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক রাখতে মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া বিল পরিশোধ ও জ¦ালানি কিনতে ডলার ও টাকার ঘাটতিতে রয়েছে সেটা কতটা পূরণ হবে তার ওপর নির্ভর করছে। জরুরি ভিত্তিতে ডলার ও ভর্তুকির টাকা ছাড় করতে অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, গরমের কারণে অনেকে নতুন করে এসি বসাচ্ছেন। এতে অনুমোদনের চেয়ে বেশি লোড ব্যবহার করছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। ফলে গ্রাহকের লাইন চাপ নিতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও তাই ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না পেয়ে লোডশেডিংয়ের অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। রংপুরের সংবাদদাতা জানান, নগরীতে চার ঘণ্টা এবং গ্রামীণ এলাকায় ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যুতের জন্য এত টাকা দেওয়ার পরও আমরা একটু স্বস্তি পাবার আশা করতে পারি না। এছাড়া জনগণ তাদের বিদ্যুতের বিলের জন্য অতিরিক্ত বোঝার মধ্যে রয়েছে, যা গত ১৪ বছরে ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। হেলথ সার্ভিসেস অধিদপ্তর সাধারণ মানুষকে হিট স্ট্রোক এড়াতে পরামর্শ দিয়ে একটি আট দফা স্বাস্থ্য নির্দেশিকা জারি করেছে। ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহের কারণে প্রায় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্লাস স্থগিত করেছে এবং অনলাইন ক্লাসে নিচ্ছে। ঢাকা ৬৪ বছরের মধ্যে ২০ এপ্রিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে প্রথম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যদিও সংবাদপত্রে ১৯ এপ্রিল থেকে হিট স্ট্রোকে ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার চারজনের মৃত্যু হয়েছে- ঢাকা, পটুয়াখালী, নাটোর ও কুমিল্লায় একজন করে। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিন ঢাকায় হিট স্ট্রোকের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে বেসরকারি সংস্থা ডিজাস্টার ফোরাম ১৯ থেকে ২২ এপ্রিলের মধ্যে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বিকেলের দিকে ঢাকার রাস্তাগুলো জনশূন্য দেখায়। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে তাপপ্রবাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা মঙ্গলবার বলেছে যে, এশিয়া ১৯৬১-১৯৯০ সালের পর থেকে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গ্লোবাল মিডিয়া জানিয়েছে যে, একটি বিশাল তাপপ্রবাহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে ঘিরে রেখেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category