• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনা প্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনে আগুন : নেভানোর চেষ্টা চলছে, তবে সময় লাগবে গাছ কাটা বন্ধে রিট আবেদন অননুমোদিত স্টিকারে ৩৬৩ মামলা, দুই হাজার গাড়ি ডাম্পিং: ট্রাফিক পুলিশ এবার মানবপাচার মামলায় রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে আমরা দায়মুক্ত হয়েছি: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী মুসলিমদের একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরকার পরিচালনাকারী সবাই ফেরেশতা নয়: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ফ্ল্যাটের ভুয়া দলিল দেখিয়ে ৫০ কোটি টাকা ঋণ, গ্রেপ্তার ৮ বিচারকাজ পরিচালনায় আপিল বিভাগে দুই বেঞ্চ

জরায়ু-স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত বাড়ছে, স্ক্রিনিং প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে চার গুণ

Reporter Name / ১৬১ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে প্রতি বছর জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে ৩০ হাজার নারী। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারীর মৃত্যু হচ্ছে এই দুটি ক্যান্সারে। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় জরায়ু মুখ এবং স্তন ক্যানসার রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন না হওয়ায় টারশিয়ারি হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে এসব রোগের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানে সার্জিক্যাল চিকিৎসা ও রেডিওথেরাপির সুবিধা রয়েছে যা রোগীর সংখ্যার তুলনায় খুবই কম। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে যেসব সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে এ রোগের চিকিৎসা করাটাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই অবস্থায় দেশের সব উপজেলায় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেবা চালু করতে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এর মাধ্যমে দেশে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং, ব্যবস্থাপনা এবং ফলো-আপের জন্য কার্যকর রেফারাল পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করে ক্যান্সারজনিত মাতৃমৃত্যুর হার কমনোর চেষ্টা করা হবে। তবে উপজেলাগুলোতে জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেবা চালুর লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাড়ে ৪৯ কোটি টাকার ‘ইলেকট্রিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি (ইপিসিবিসিএসপি)’ প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পরে প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পটির ব্যয় ৫৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয় এবং মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির পরিধি ও কার্যক্রম বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৮ কোটি টাকা ৯৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৪ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক বিভাগের উপ-প্রধান (স্বাস্থ্য উইং) ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, প্রকল্পটি বর্তমানে চলমান। স্তন-জরায়ু মুখ ক্যানসার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এ দুটি ক্যানসার থেকে নারীদের পরিত্রাণ দিতেই প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়ছে। ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) আমাদের হাতে এসেছে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এর পরে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হবে। সেখানে অনুমোদনের পর একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর ১১ হাজার ৯৫৬ জন নারীর জরায়ু মুখ ক্যানসার শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ হাজার ৫৮২ জন। একইভাবে ১৪ হাজার ৮৩৬ জন নারীর স্তন ক্যানসার শনাক্ত হয় এবং ৭ হাজার ১৪২ জন মারা যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) জানায়, জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের পাঁচ বছর বেঁচে থাকা নির্ভর করে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও কার্যকরী চিকিৎসার উপর। এ কারণে এই ক্যানসার দুটির প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় হওয়া পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক নীতি কাঠামো অনুযায়ী, জরায়ু মুখ ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কর্মপন্থা ‘জনসংখ্যাভিত্তিক সংগঠিত স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম’ হতে হবে। এ-সংক্রান্ত সেবা সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এটি একটি সর্বজনীন কর্মপন্থায় পরিচালিত হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে ‘ইলেক্ট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ত্রিনিং প্রোগ্রাম’ গড়ে তোলা সরকারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ক্যানসারের দুটি স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএসএমএমইউ’র মাধ্যমে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পরে প্রথম সংশোধনে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৫৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা হয়। দ্বিতীয় সংশোধনে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করা হচ্ছে। বিএমএমএসইউ সূত্র জানায়, সবগুলো উদ্দেশ্য সামগ্রিকভাবে বাস্তবায়নের কারণেই প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং, ব্যবস্থাপনা এবং ফলোআপের জন্য কার্যকর রেফারেল পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করে ক্যানসারজনিত মৃত্যুহার কমানো হবে। দেশের সব জেলায় এই স্ক্রিনিং সেবা চালু করা হবে। সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নির্বাচিত কমিউনিটি ক্লিনিক, ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির অবকাঠামো উন্নয়নও করা হবে। এসব কারণে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ছে। চলমান প্রকল্পটি জুন, ২০২২ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল। তবে মেয়াদ বেড়ে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ করা হচ্ছে। নতুন করে প্রকল্পের আওতায় দুটি ক্যানসার প্রতিরোধে দেশব্যাপী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কমিউনিটি পর্যায় থেকে ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যানসার রোধে গড়ে তোলা হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা। সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে জরায়ু মুখ এবং স্তন ক্যানসার পূর্বাবস্থা চিকিৎসার সুবিধাদি করা হবে শক্তিশালী। রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে। এর মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে ৩৩ হাজার ৫১২ বর্গফুট জায়গায়। এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দুটি রোগ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। অনেক মায়েদের অকালে প্রাণ যাচ্ছে। তবে ক্যানসার প্রতিকারের অন্যতম প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধি। আমরা সারাদেশে এ বিষয়ে নানা ধরনের কর্মসূচি নেবো। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দুটি ক্যানসার নিরাময়ের চিকিৎসা উন্নত করবো। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে (বিএসএমএমইউ) গবেষণা করা হবে রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য। এখন উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। তবে ভালোর কোনো শেষ নেই। আমরা ক্যানসার গবেষণায় আরও উন্নয়ন করবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category