• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হচ্ছে নবনির্মিত স্টেডিয়াম ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ৬৭ জনের মৃত্যু সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে কোরবানির চাহিদার চেয়ে ২২,৭৭,৯৭৩ অতিরিক্ত গবাদিপশু প্রস্তুত দেশব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিরাট জাগরণ তৈরি হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছি: কৃষিমন্ত্রী ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না: কাদের টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী রোয়াংছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রাবাসে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার ১৫ দিনব্যাপী সাঁতার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও রাজপথে শিক্ষার্থীরা

Reporter Name / ৩৯৩ Time View
Update : শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সড়কে প্রত্যহ ঝরে যাচ্ছে সজীব প্রাণ। দেশের সড়কগুলো যেন এক একটা ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদ। রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের এই দাবির সংগে যুক্ত হয়েছে নিরাপদ সড়কের দাবিও।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর মতিঝিল, কাকরাইল,মালিবাগ ও উত্তরাসহ বিভিন্নস্থানে চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় নটরডেম কলেজ শিক্ষার্থী নাঈম হাসান সড়ক পার হওয়ার সময় পেছন থেকে ধাক্কা দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার ট্রাক। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। সেই সংগে রাসেল নামে ট্রাকটির চালকও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। রাজধানীর গুলিস্তানে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের নিহতের ঘটনায় বিচার চেয়ে শুরু হওয় এই আন্দোলনের নজরকাড়া বিভিন্ন ছবি-ভিডিও এখন ভাইরাল সামাজিক মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল আন্দোলন ও তাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন-প্লাকার্ড নেটিজেনদের হৃদয় কেড়েছে।
সূত্র জানায়, গুলিস্তান, ফার্মগেট এবং কাকরাইলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানের পাশাপাশি হাফ ভাড়ার দাবিও করছেন। সাইন্সল্যাব মোড়ে বাসে হাফ ভাড়া করার দাবিতে আন্দোলন করার জন্য শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। আন্দোলনের ছবি শেয়ার করে তাতে সমর্থন দিয়েছেন নেটিজেনরা।
জানা যায়, ময়লার ট্রাকের চাকায় পিষ্ট ছাত্র নাঈম হত্যা এবং বাস-ট্রাক চাপায় সকল হত্যাকা-ের বিচারসহ ৯ দফা দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে অবরোধ, বিক্ষোভ, যানবাহন থামিয়ে লাইসেন্স তল্লাসীর কারণে পথে পথে থমকে দাঁড়িয়ে ছিল হাজার হাজার যানবাহন। ছাত্ররা ঘোষণা দিয়েছে দাবি না মানলে রাজপথে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে। অথচ এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকরে রাজি হয়নি বাস মালিক সমিতি। বিআরটিএ’র সঙ্গে বাস মালিকদের বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। হাফ পাস ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিতে বাস মালিকদের এক সাপ্তাহ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। বাস মালিকরাও সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছে। চট্টগ্রামেও শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাড়িটির চালক রাসেল মিয়াকে ইতোমধ্যে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার আদালতে সাত দিনের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক তিন দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেট, গুলিস্তান, মিরপুর রোড, শান্তিনগর, মতিঝিলসহ কয়েকটি এলাকার সড়কের নিয়ন্ত্রণ ছিল কার্যক শিক্ষার্থীদের দখলে। ‘আমার ভাই মরলো কেন? সব সাথীদের খবর দে; শক্ত-কঠিন দূর্গ গড়ে, বেপরোয়াদের কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে ওইসব এলাকা। রাজধানীর গুলিস্তান, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে তারা রাজপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের গেইট দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের আল্টিমেটাম দিয়েছে। ফার্ম গেইটে দেখা যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যানবাহন থামিয়ে ড্রাইভারের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করছেন। এমনকি পুলিশের যানবাহন থামিয়ে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহন করা একাধিক যানবাহনে ফিটনেস না থাকায় তারা ওই সব যানবাহনে ‘ফিটনেস নেই’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়।
এদিকে, বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও অংশীজনদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত মালিকরা হাফ পাসে রাজি নন। বৈঠকে বাস মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেসরকারি বাসে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে না। যানজটে সড়কে ট্রিপ কমে গেছে। টায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস চালু করা হলে বাসমালিকদের লোকসান গুনতে হবে।
গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন।
নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেট মোড়ে অবস্থান নিয়ে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র পরিষদসহ বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা। তারা সে সময় রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করলে, পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয় এবং ৪ জনকে আটক করে। তারা হলেন-চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইফুর রুদ্র, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ উদ্দিন, পটিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র জাহেদুল রাফি ও জামশেদুল হক।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতেই সরকার সারাদেশে বিআরটিসি বাসের ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার তাঁর বাসভবনে ব্রিফিংয়ের সময় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে। সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়ায় বিআরটিসি বাসে যাতায়াত করতে পারবে। ভ্রমণকালে ছাত্র-ছাত্রীদের অবশ্যই নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা ছবিযুক্ত বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রদর্শন করতে হবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাবেন।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার জনগণের সরকার। যৌক্তিক কোন দাবিতে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।
তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দিনে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে না উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘শিগগিরই এ বিষয়ে বিআরটিসি প্রজ্ঞাপন জারি করবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। সে বছর ২৯শে জুলাই ঢাকার রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী সড়কে বাস চাপায় প্রাণ হারানোর পর শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে ১৯শে সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইন পাস করে সরকার। সে বছর সেপ্টেম্বরে আইনটি পাশ হলেও সেটি কার্যকর করা হয় পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯-এর ১ নভেম্বর থেকে। কিন্তু তখন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও কর্মবিরতির মুখে সরকার চারটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ ২০২০ জুন মাস পর্যন্ত বন্ধ রাখে। কিন্তু গত বছর করোনা’র আঘাতের পর বিষয়টি এখনও বন্ধ রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category