• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হচ্ছে নবনির্মিত স্টেডিয়াম ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ৬৭ জনের মৃত্যু সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে কোরবানির চাহিদার চেয়ে ২২,৭৭,৯৭৩ অতিরিক্ত গবাদিপশু প্রস্তুত দেশব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিরাট জাগরণ তৈরি হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছি: কৃষিমন্ত্রী ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না: কাদের টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী রোয়াংছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রাবাসে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার ১৫ দিনব্যাপী সাঁতার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন: ১১ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা অনড়

Reporter Name / ১৮৪ Time View
Update : সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়Ñহেলাল হাফিজের কবিতার পঙ্কক্তিকে সত্য প্রমাণ করে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের টানা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার পর চট্টগ্রামসহ সব শহরে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। হাফ ভাড়ার এ সিদ্ধান্ত আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
রোববার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।
তিনি বলেন, সরকারি ছুটির দিন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির দিন ব্যতীত এ নিয়ম চলবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এ সুবিধা পাবেন। শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম ও পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। যেসব শহরে সিটি সার্ভিস চালু আছে, সেখানে এটা কার্যকর হবে। উপজেলা বা দূরপাল্লার রুটে এ নিয়ম চলবে না।
শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিসহ ১১ দফা বাস্তবায়নে সড়কে অবস্থান করছে এখনো। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মানববন্ধন করেছেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়কে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেন। আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরও এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
রোববার দুপুরের দিকে রামপুরা সড়কের হাতিরঝিল সংলগ্ন ফুটপাতে অবস্থান নেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া সড়ক মৃত্যুর প্রতিবাদস্বরূপ প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় থেকে একটি মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) দিকে যায় এবং সংক্ষিপ্ত মিছিল করে কর্মসূচি শেষ করে।
রোববার রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে এ কর্মসূচি শুরু করে তারা। এ সময় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
মিছিলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সমন্বয়ক শ্রাবণ চৌধুরী, আরদিতা রায়, সাজ্জাদ হোসেন শুভ, জুয়েল মিয়াসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, একের পর এক লাশের ভার তারা বইতে পারছে না। বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নেমে কর্মসূচি করছে। তাদের মূল দাবি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হবে। দাবি আদায় না হলে এবং এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে তারা কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
এর আগে শনিবার লাল কার্ড প্রদর্শনী শেষে এ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর রাতে রামপুরায় বাসচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. মাঈনুদ্দিন নিহত হন। এরপর থেকে প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সরকারী-বেসরকারী কর্তৃপক্ষ ‘দুর্নীতিপরায়ন’ হয়ে উঠেছে। এর ফলে রাস্তায় ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি দেখা যায়। তারা অপেশাদার চালক নিয়োগ দেন।
চালকরা দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন-যাপন করেন উল্লেখ করে তারা বলেন, যারা চালকদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিচ্ছেন, তারা দুর্নীতি করছেন। তাদের বিষয়গুলো নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবিগুলো হলো (১) সড়কে নির্মম কাঠামোগত হত্যার শিকার নাঈম ও মাইনুদ্দিন হত্যার বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুলিস্তান ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পথচারী পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। (২)সারাদেশে সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। হাফ পাসের জন্য কোনো সময় বা দিন নির্ধারণ করে দেওয়া যাবে না। বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করতে হবে। সব রুটে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। (৩) গণপরিবহনে ছাত্র-ছাত্রী এবং নারীদের অবাধ যাত্রা ও সৌজন্যমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। (৪) ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গাড়ি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। (৫)সব রাস্তায় ট্রাফিক লাইট, জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করাসহ জনবহুল রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। (৬)বাসগুলোর মধ্যে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা বন্ধে এক রুটে এক বাস এবং দৈনিক আয় সব পরিবহন মালিকের মধ্যে তাদের অংশ অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করার নিয়ম চালু করতে হবে। (৭)শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র নিশ্চিত করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে বাস দেওয়ার বদলে টিকিট ও কাউন্টারের ভিত্তিতে গোটা পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শ্রমিকদের জন্য বিশ্রামাগার ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে (৮) গাড়ি চালকের কর্মঘণ্টা একনাগাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি হওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসে ২ জন চালক ও ২ জন সহকারী রাখতে হবে। পর্যাপ্ত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। (৯)যাত্রী-পরিবহন শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংস্কার করতে হবে এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। (১০)ট্রাক, ময়লার গাড়িসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। (১১)মাদকাসক্তি নিরসনে গোটা সমাজ জুড়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালক-সহকারীদের জন্য নিয়মিত ডোপ টেস্ট ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে, নিরাপদ সড়ক ও অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন চলছে সেখানে তাদের ‘মায়েরা’ও ঢুকে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। রোববার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্ররা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছে, সে জন্য আমরা সহানুভূতিশীল। পাশাপাশি তারা যে হাফ ভাড়ার জন্য আন্দোলন করেছে, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে তিনি বিআরটিসি বাসে সারা দেশে হাফ ভাড়া কার্যকর করেছেন। ইতোমধ্যে বাস মালিক সমিতি হাফ ভাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে কার্যকর করেছে। এখন ছাত্রদের আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে ৩০-৩৫ বছর বয়সী ছাত্রের মায়েরাও ঢুকে গেছেন। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম ৩৫ বছর বয়সী একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী স্কুল ড্রেস পরে আন্দোলন করছেন। তাদের দেখে মনে হয় না তারা স্কুলের ছাত্র বা ছাত্রী। এখন তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদরা ঢুকে গেছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও সেখানে ঢুকে গেছে। সুতরাং ছাত্রদের যাতে কেউ রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category