• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৭ পূর্বাহ্ন

পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম: ১৪ বছর ধরে সরানোর অপেক্ষা

Reporter Name / ১০ Time View
Update : রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় সম্প্রতি একটি রাসায়নিক গোডাউনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। তাবে সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও অগ্নিকা-ের ওই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয় কিছু অতীত স্মৃতিকে। এখন থেকে ১৪ বছর আগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী ও ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে পুড়ে ছাই হন ১৯৫ জন। পুড়ে অঙ্গার হওয়া মানুষের হৃদয়বিদারক ছবি তখন পুরো দেশকেই কাঁদিয়েছিল। এতে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম নিয়ে। প্রথম ঘটনার পরই সরকার দ্রুত এসব রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে ফেলার ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় ঘটনার পর সরানোর কাজে তাগাদা দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রথম দফায় ঘোষণার ১৪ বছর হতে চললেও তা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বহাল তবিয়তে রয়েছে ছোট-বড় এসব রাসায়নিক গুদাম। নামে-বেনামে বা সাইনবোর্ড সরিয়ে রেখে আগের মতোই চলছে রাসায়নিকের ব্যবসা। জানা গেছে, এখানকার কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে রাসায়নিক শিল্পপার্কে, যার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের শেষ নাগাদ। তবে কাজ সম্পন্ন হওয়া তো দূরের কথা, দু’বছর পেরিয়ে গেলেও এখন চলছে কেবল বালু ভরাটের কাজ। তথ্য মতে, ২০০০ সালে প্রাথমিকভাবে পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিক গুদাম ও ছোট-বড় কারখানা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর ২০১০ সালে নিমতলীতে রাসায়নিক গুদাম থেকে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে প্রাণহানির ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করে। ওই সময় রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নিতে ‘রাসায়নিক পল্লী’ গড়ার সিদ্ধান্ত হলেও ১০ বছর লেগে গেছে প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে। ২০১৯ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর ওই বছরই মুন্সীগঞ্জে তিন শতাধিক একর জমিতে রাসায়নিক শিল্পপল্লী প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পটি ২০২২ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি সামান্য। জানা যায়, ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাসায়নিক গুদাম-কারখানা স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। তখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করে দেয়। গুদামগুলোর পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। এতে বন্ধ ছিল গুদামগুলোর কাজ। কিন্তু কিছুদিন পরই আগের অবস্থায় ফিরে যায় এসব রাসায়নিক গুদাম। পুরান ঢাকার বেশকিছু এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম এখনও রয়েছে। আগের মতোই কর্মব্যস্ততা দেখা যায় সেখানকার ব্যবসায়ী, কর্মচারী, শ্রমিকদের মাঝে। তবে নজর এড়াতে প্রতিষ্ঠানের নাম মুছে দিয়ে বা গুদাম ও কারখানায় সাইনবোর্ড ছাড়াই ব্যবসা করছেন অনেকে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে ঠিকানা বদল করে। ভুক্তভোগী ও নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেওয়ার জোর দাবি ওঠে। এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে সব গুদাম সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও সে আশ্বাস এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। যে কারণে একটি দুর্ঘটনার রেশ না কাটতেই ঘটছে আরেকটি দুর্ঘটনা। সম্প্রতি সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি এবং সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জাতীয় সংসদে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোর কথা বলেছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি সিদ্ধান্তের পর বিস্ফোরক জাতীয় বহু রাসায়নিক গুদাম বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনও কিছু গুদাম সরানো যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে ‘রাসায়নিক পল্লী’র কাজ শেষ হলে সেগুলোও সরিয়ে নেওয়া হবে। এদিকে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসায়নিক পল্লীর কাজ চলছে অতি ধীরগতিতে। বর্তমানে বালু ভরাট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। কাজের ধীরগতির জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয় এবং এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ও অতিলোভী ভবন মালিককে দায়ী করছেন তারা। রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুদাম স্থানান্তরের জন্য জায়গা বরাদ্দ না পাওয়াসহ নানা জটিলতায় দীর্ঘদিনেও সরকার নির্ধারিত জায়গায় যেতে পারছেন না তারা। শিল্প মন্ত্রণালয়সহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও অবহেলা এর জন্য দায়ী। তারা আরও বলছেন, এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর যেমন অনীহা রয়েছে, তেমনি সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অবহেলার কারণে সব গুদাম এখনও স্থানান্তর করা যায়নি। চার মাস আগে ব্যবসায়ীরা রাসায়নিক পল্লী পরিদর্শন করে এসেছেন। সেখানে বর্তমানে বালু ভরাট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। সব কাজ শেষে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার পর সেখানে সব গুদাম স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, চুড়িহাট্টার অগ্নিকা-ের পর ফায়ার সার্ভিস থেকে নতুন করে রাসায়নিক গোডাউনের লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন করা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে পুরান ঢাকায় আগুন নেভাতে গিয়ে বহু রাসায়নিক গুদাম ও রাসায়নিক দ্রব্য মজুদ রাখতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস তো গুদাম সরাতে আইনি ভূমিকা পালন করতে পারে না। ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করলে পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের রাসায়নিক গুদাম সরানো সম্ভব। এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, বর্তমানে পুরান ঢাকায় যে রাসায়নিক গুদামগুলো রয়েছে, সরকার কঠোর না হওয়ায় বারবার উদ্যোগ নেওয়ার পরও তা স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের বিচার না হওয়া, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতি এবং এক শ্রেণির অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী ও ভবন মালিক এর জন্য দায়ী। এ ক্ষেত্রে সরকার কঠোর হলে প্রভাবশালীরা গুদাম সরাতে বাধ্য হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category