• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনায় বিকল্পভাবে পণ্য আমদানির চেষ্টা করছি: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

Reporter Name / ১০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনায় দেশে যাতে আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম না বাড়ে, সেজন্য বিকল্পভাবে পণ্য আমদানি করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে মিট দ্য রিপোর্টার্সে তিনি এ কথা জানান। ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিনের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ। উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ গণমাধ্যমকর্মীরা। আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন, হামাস-ইসরায়েল বা ইরান-ইসরায়েল হামলা, এসব আন্তর্জাতিক ঘটনা। তবুও এসবের কারণে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়। এতে পরিবহন খরচ বাড়ে, যার প্রভাব পড়ে নানা পণ্যে। আমদানি-রপ্তানিতে সংকট তৈরি হয়। তবে ইসরায়েলে ইরানের হামলা হঠাৎই, এটি আমাদের জানা ছিল না। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য গুরুত্বপূর্ণ, সেখান থেকে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্য আসে। ইসরায়েল আবার ইরানে পাল্টা হামলা চালাবে কি না জানি না। তবুও সব বিষয় মাথায় রাখা হচ্ছে। এসবের কারণে যাতে পণ্যের দাম না বাড়ে, সেজন্য আমরা বিকল্পভাবে পণ্য আমদানি এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার ভোক্তাবান্ধব। কোনোভাবেই সরকারকে আমি ব্যবসায়ীবান্ধব বলবো না। আমরা ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেবো যতক্ষণ তারা ভোক্তাকে সাহায্য করবে এবং রীতির মধ্যে থাকবে। আমরা জনগণের স্বার্থে কাজ করতে চাই, যাতে সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট থাকে। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বড় কাজ হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা, এর সঙ্গে আমদানি- রপ্তানি, দ্বিপাক্ষিক পলিসি নিয়ে কাজ করছি। ট্যারিফ পলিসি নিয়ে কাজ চলছে, আমদানি-রপ্তানি নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। অফিসিয়ালি লঞ্চ (আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু) করব। আমরা বহুমুখী কাজ করছি। সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। ট্রেড করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্থায়ী দোকান তৈরি করা হবে বলে জানান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, টিসিবি সাধারণত একত্রে চার থেকে পাঁচটি পণ্য সরবরাহ করে। কিন্তু অনেক সময় এমন হয় যে একটি পণ্য পৌঁছাতে দেরি হলে ডিসিরা বাকি পণ্যগুলো আটকে রাখেন সবগুলো পণ্য একত্রে দেবেন বলে। কিন্তু আমি যখন ফিক্সড দোকান করে দেব তখন যে মাল যখন দোকানে চলে যাবে তখন সেই মাল বিক্রি শুরু হবে। মাঝে মধ্যে টিসিবির পণ্য সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে- সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে পণ্য সরবরাহ ও সেবা নিশ্চিত করতে টিসিবি শুরু হয়েছিল। পরে এটাকে একটা কাঠামোতে নিয়ে আসতে আমরা কাজ করতেছি। আমাদের নিজস্ব কোনো গুদাম ছিল না। যেকোনো পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখতে সেটার বাফার স্টক থাকা দরকার। বাফার স্টকের জন্য আমাদের গুদাম দরকার। চট্টগ্রামে আমরা ৪০ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি নতুন গুদাম করেছি। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গুদাম করছি। আমরা চেষ্টা করবো যাতে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বাফার স্টক তৈরি করতে পারি। এক মাস বা দুই মাসের বাফার স্টক আমাদের হাতে থাকলে নিশ্চিত থাকবো। এছাড়া টিসিবিতে আমাদের চার পাঁচটি পণ্য দেওয়া হয়, অনেক সময় একসঙ্গে সব পণ্য না পেলে ডিসিরা পণ্য দেয় না। এজন্য আমরা নির্দিষ্ট দোকান তৈরি করে দেব, যাতে যখন যে মাল আসবে তখন সেটা বিক্রি শুরু করতে পারবে। তিন কারণে মাঝে মধ্যে টিসিবি পণ্য সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে আহসানুল ইসলাম বলেন, আমাদের তিনটা কারণ এক হলো- বাফার স্টক না থাকায় আমাদের পণ্য কিনেই বিক্রি করতে হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়েও আমাদের বাফার স্টক নেই। দ্বিতীয় আমাদের সংরক্ষণের জন্য স্টোরেজ নেই এবং ডিলারেরও ১৫ দিন বা এক মাস পণ্য রাখার মতো নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা নেই। এ তিন কারণে টিসিবির পণ্য সরবরাহে সাত বা ১০ দিন আগ-পিছ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যেখানে যে জিনিস ভালো পাওয়া যায় আমরা সেটা সংগ্রহ করে এনে টিসিবির মাধ্যমে নি¤œ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিতরণ করব। টিসিবির পণ্য হতদরিদ্র মানুষের জন্য না। কারণ ৬০০ থেকে এক হাজার টাকার পণ্য ক্রয় করার ক্ষমতা তাদের নেই। এজন্য এমন মানুষদের সম্পৃক্ত করবো যাতে নি¤œ, মধ্যবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ তাদের যেন একটু সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আরেকটি বিষয়ে নজর দিচ্ছি সেটা হলো পণ্যবহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানো। এতকিছুর মধ্যেও গত তিন মাসে প্রতি মাসে আমরা রপ্তানি বাড়িয়েছি। এখন আমরা আমদানিতেও বহুমুখীকরণ করতে চাচ্ছি। যাতে একটি স্থান বা দেশের ওপর নির্ভর না থাকতে হয়। আমরা অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আহসানুল ইসলাম বলেন, ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে (এলডিসি) উত্তরণ। এজন্য আমরা তিন বছর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাব। ফলে আগামী পাঁচ বছর আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং। একইসঙ্গে আমরা যে সুবিধাগুলো পেতাম সেটা এলডিসি হলে পাব না। সেজন্য এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এ পর্যন্ত ছয়টি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এ পর্যন্ত অনেকগুলো দেশের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য আলোচনা করেছি। তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বড় কাজ হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। এর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি, দ্বিপক্ষীয় পলিসি নিয়ে কাজ করছি। ট্যারিফ পলিসি নিয়ে কাজ চলছে, আমদানি-রপ্তানি নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। অফিসিয়ালি লঞ্চ করব। আমরা বহুমুখী কাজ করছি। সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। এলডিসি উত্তরণের পরে আমাদের দেশের শিল্পগুলো রক্ষায় কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রতিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা শুধু কী কী পরিবর্তন আসবে সেটা করে দেব। বাকি কাজগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের করতে হবে। আমাদের লোকাল শিল্প ও কর্মসংস্থানকে মাথায় রেখেই আমরা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টসহ যা করি সেটা আমাদের একটি নীতিমালা আছে সে অনুযায়ী করব। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়ের সঙ্গে আলোচনা করে করব। ফলে এলডিসি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বুঝে-শুনে এফটিএ করা হবে। এমনভাবে এফটিএ করা হবে যাতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। এলডিসি হওয়ার পর ভর্তুকি বা সুবিধা কীভাবে দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডব্লিউটিও-এর আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ভর্তুকি দেবে না। বাংলাদেশ নিজেদের কৌশল মেনেই ভর্তুকি দেবে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না যাতে দেশের লোকাল ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ে। ডব্লিউটিও কিছু বললেই মেনে নিতে হবে এমন না। ভারত তাদের কৃষি ভর্তুকি তুলে নেয়নি। গরুর মাংস আমদানি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, গরুর মাংসের আমদানি-রপ্তানির কোনো সিদ্ধান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নেবে না। এটি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ব্রাজিলের সঙ্গে গরুর মাংস আমদানির ব্যাপারে কথা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সরকার ভোক্তাবান্ধব নাকি ব্যবসায়ীবান্ধব এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার ভোক্তাবান্ধব। কোনোভাবেই সরকারকে আমি ব্যবসায়ীবান্ধব বলব না। আমরা ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেব যতক্ষণ তারা ভোক্তাকে সাহায্য করবে এবং রীতির মধ্যে থাকবে। আমরা জনগণের স্বার্থে কাজ করতে চাই। যাতে সাধারণ মানুষ যেন সন্তুষ্ট থাকে। আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ভোজ্যতেলের স্থানীয় উৎপাদনে ও আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ছাড়ের এ মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হলেও তেলের দাম পূর্বের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ৫ শতাংশ কমানোর মেয়াদ গত ১৫ এপ্রিল শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন মিল মালিকেরা সেক্ষেত্রে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, তেলে ৫ শতাংশ ডিউটি কমিয়েছিলাম, এতে ভোক্তা পর্যায়ে ১০ টাকা কমেছিল তেলের দাম। সেই ভ্যাট ছাড়ের এ মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। আমাদের ট্যারিফ কমিশন এটা নিয়ে কাজ করছে। দেখা হচ্ছে মিলাররা কী দামে তেলের কাঁচামাল আনছেন তার দাম কেমন পড়ছে ইত্যাদি বিষয়ে। তবে তেলের দাম পূর্বের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই এটা বলতে পারি। প্রসঙ্গত, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেলের স্থানীয় উৎপাদনে ও আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট ৫ শতাংশ কমায় এনবিআর। ভ্যাট ছাড়ের এ মেয়াদ শেষ হওয়ায় তেলের দাম আগের অবস্থায় নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন মিল মালিকেরা। তেলের দাম বাড়াতে গত সোমবার বাণিজ্য সচিবকে চিঠি দেন মিল মালিকরা। সেখানে বোতলজাত ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭৩ টাকা, ৫ লিটার ৮৪৫ টাকা এবং খোলা ১ লিটার পাম তেলের দাম ১৩২ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, চিঠির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। চিঠিও আমি এখনও পাইনি, যদি পাঠিয়ে থাকেন অফিসে গিয়ে দেখতে হবে। ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ। উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ গণমাধ্যম কর্মীরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category