• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:১১ পূর্বাহ্ন

মধ্যরাতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডে নিহত অন্তত ৪০

Reporter Name / ২৪৫ Time View
Update : শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে চলন্ত লঞ্চে আগুন লেগে অন্তত ৪০ জন মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে আগুনের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ শুরু করেন। দগ্ধদের মধ্যে ৭২ জনকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিদের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার রাত আটটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে নিহতের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। পরে পার্শ্ববর্তী দিয়াকুল এলাকায় বিপর্যস্ত লঞ্চটি ভেড়ানো হয়। লঞ্চের একাধিক যাত্রী জানান, রাত ৩টার দিকে লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। পরে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো লঞ্চে। এ সময় লঞ্চে বেশ কয়েকজন যাত্রী দগ্ধ হন। প্রাণে বাঁচতে অনেকে নদীতে ঝাঁপ দেন। লঞ্চ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেউলিবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা সাদিক মৃধা বলেন, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে ইঞ্জিনরুম থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয়। মুহূর্তে গোটা লঞ্চ ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময় ডেকে ঘুমন্ত যাত্রীরা জেগে উঠে ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ নদীতে ঝাঁপ দেয় আবার অনেকে চিৎকার করেন। একপর্যায়ে উদ্ধারে কয়েকটি ট্রলার এগিয়ে আসে এবং যাত্রীদের অনেকে ট্রলারে উঠে তীরে নামেন। তিনি আরও বলেন, মূলত আগুন লাগার পর লঞ্চটি তীরে নোঙর করার মত কেউ ছিল না। লঞ্চ জোয়ারের তোড়ে ভাসতে থাকে। নৌপুলিশের কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অগ্নিদগ্ধ লঞ্চটির হাসপাতালে আহত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইঞ্জিন রুম থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইঞ্জিন রুমের অপারেটর ইঞ্জিন রুমে ছিলেন না অথবা আগুন লাগার পরে তিনি পালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, গত রাত প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চটি যখন নলছিটি ক্রস করে তখন এর ইঞ্জিনে আগুন লাগে। কিন্তু লঞ্চটি নলছিটিতে স্টপেজ দেয়নি, এমনকি ঝালকাঠিতেও স্টপেজ দেয়নি। ইঞ্জিন রুমের ওপরে থাকেন লঞ্চের সারেং। ইঞ্জিন অপারেটর নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সারেং লঞ্চ থামাবেন না অথবা ঘাটে ভেড়াবেন না। ধারণা করা হচ্ছে লঞ্চের সারেং প্রথমে আগুন লাগার খবর জানতে পারেননি। এ কারণে আগুন লাগার একঘণ্টা ধরেও লঞ্চ চলতে থাকে। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নৌপুলিশ এ ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত বা যাদের অবহেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
খোঁজ মিলছে না বরগুনার ১৯ যাত্রীর: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর থেকে যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পর বরগুনার ১০ যাত্রী বেঁচে ফিরলেও এখনো নিখোঁজ আছেন অনেকে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বরগুনার নৌবন্দরে অপেক্ষা করেও অনেক যাত্রীর খোঁজ পাননি স্বজনরা। বন্দরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে বরগুনার ১৯ জন নিখোঁজ আছেন। এরা হলেন- বরগুনার মাইঠা এলাকার ইদ্রিস খান, নলী এলাকার আবদুল হাকিম, চাঁদপুরের মনোয়ারা, পাথরঘাটার টেংরার পপি আক্তার, পাথরঘাটা পৌরসভার তালতলা এলাকার আবদুর রাজ্জাক, পাথরঘাটার কালমেঘার কালিবাড়ি এলাকার রাকিব মিয়া, বরগুনা সদরের হাফেজ তুহিনের মেয়ে (নাম অজ্ঞাত), সদরের ছোট আমতলী এলাকার জয়নব বেগম, মির্জাগঞ্জ উপজেলার রিনা বেগম ও তার মেয়ে রিমা, বরগুনা সদরের পরীরখাল এলাকার রাজিয়া ও তার মেয়ে নুসরাত, সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের মইন, তার ছেলে আবদুল্লাহ ও শালি আছিয়া, বরগুনা ঢলুয়া এলাকার মোল্লারহোড়া গ্রামের তাসলিমা, তার মেয়ে মিম ও তানিশা এবং ছেলে জুনায়দ।
দগ্ধদের দেখতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী: আগুনের ঘটনায় দগ্ধ শিশুসহ পাঁচজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়। দগ্ধদের দেখতে বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দগ্ধ ওই পাঁচজন হলেন- জেসমিন আক্তার (৩৫), তার ছেলে তানিম হাসান (০৮), বাচ্চু মিয়া (৫০) ও তার মেয়ে সাদিয়া (২০)। অন্যজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকাল তিনটার পরে দগ্ধ অবস্থায় প্রথমে দুজনকে ও পরে আরও তিনজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল জানান, লঞ্চে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন এখানে এসেছেন। এদের মধ্যে জেসমিন আক্তারের শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে ও তার ছেলে তানিম হাসানের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ছেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক ও মায়ের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাদের দুজনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি তিনজনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।
৩ তদন্ত কমিটি: লঞ্চে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেগুলো হলো- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল আহমেদকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ?্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে, তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে। এছাড়া ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক (ডিসি) জোহর আলী জানান, তাদের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category