নিজস্ব প্রতিবেদক :
রমজানে জনসাধারণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে রাজধানীর ৩০টি পয়েন্টে ট্রাকে করে মাসব্যাপী দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ বিক্রির ব্যবস্থা চালু করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ কর্মসূচির আওতায় তরল দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২৫০ টাকা এবং ডিম প্রতিটি ৯.১৭ টাকা (১ ডজন ১১০ টাকা) দরে বিক্রয় করা হবে। আজ রোববার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, প্রথম রমজান থেকে শুরু করে ২৮ রমজান পর্যন্ত ট্রাকে করে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস রাজধানীর ২৫টি স্থানে বিক্রি করা হবে। তাছাড়া স্থায়ী বাজারে আর ৫টি স্থানসহ মোট ৩০টি পয়েন্টে এই বিক্রয় ব্যবস্থা চালু থাকবে। পণ্যগুলো বিক্রির জন্য সুসজ্জিত পিকআপ কুলভ্যান ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি বিক্রয় কেন্দ্রে সকাল নয়টার মধ্যে পণ্যগুলো নিয়ে কুলভ্যানগুলো পৌঁছে যাবে এবং সকাল ১০টা থেকে বিক্রি শুরু হবে। মন্ত্রী বলেন, কার্যক্রমটি তদারকি ও মনিটরিং করার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের এবং দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। গরু, খাসি ও মুরগির মাংস এবং দুধ, ডিম ও মাছের সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে এসব পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে বলে মন্ত্রী এসময় মন্তব্য করেন। আব্দুর রহমান বলেন, আমরা মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধ উৎপাদনে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে অচিরেই দুধ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো। বর্তমান সরকার চাহিদা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নির্দেশনায় এ সেক্টরের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। যার ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনগণ তার সুফল পাচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার পণ্যের গুণগত মানের দিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে বলে মন্ত্রী জানান। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রুই-মাছ প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ১৩০ টাকা এবং পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা করে বিক্রয় করা হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাছ বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। ১১ মার্চ থেকে রমজান মাসের ১৫ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন মাছ বিক্রয় করা হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল এবং দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানগুলো এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছে। অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর বক্তব্য দেন।
রমজানে যেসব স্থানে সুলভমূল্যে মিলবে দুধ-ডিম-মাছ-মাংস: রাজধানী ঢাকার স্থায়ী বাজার ও ভ্রাম্যমাণ ৩০টি স্থানে প্রথম রোজা থেকে ২৮ রোজা পর্যন্ত চলবে এই বিপণন কার্যক্রম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই কর্মসূচির আওতায় রমজান মাসে ৮০ টাকা দরে তরল দুধ, ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস, ৯০০ টাকা কেজি দরে খাসির মাংস, ২৫০ টাকা কেজি দরে চামড়া ছাড়ানো ব্রয়লার মুরগির মাংস ও ১১০ টাকা দরে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি করা হবে। এছাড়া মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ১৪০ টাকা কেজি দরে রুই, ১৩০ টাকা কেজি দরে পাঙাস, ১৩০ টাকা কেজি দরে তেলাপিয়া, ৩৩০ টাকা কেজি দরে পাবদা, ৩৫০ টাকা কেজি দরে ফিস ফিলেট (রেডি টু কুক) বিক্রি করা হবে। তবে মাত্র ৮টি স্থানে মাছ বিক্রি করবে সরকারের এই মন্ত্রণালয়টি। অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়- ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের মাধ্যমে ২৫টি স্থানে ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আরও ৫টি স্থানে সুলভ মূল্যে এসব ভোগ্যপণ্য বিক্রি করা হবে। ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রগুলো হলো- (১) নতুনবাজার (বাড্ডা), (২) কড়াইল বস্তি (বনানী), (৩) খামারবাড়ি (ফার্মগেট), (৪) আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), (৫) গাবতলী, (৬) দিয়াবাড়ী (উত্তরা), (৭) জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), (৮) ষাটফুট রোড (মিরপুর), (৯) খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), (১০) সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গনি রোড), (১১) সেগুন বাগিচা (কাঁচা বাজার), (১২) আরামবাগ (মতিঝিল), (১৩) রামপুরা, (১৪) কালশি (মিরপুর), (১৫) যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), (১৬) বসিলা (মোহাম্মদপুর), (১৭) হাজারীবাগ (সিকশন), (১৮) লুকাস (নাখালপাড়া), (১৯) আরামবাগ (মতিঝিল), (২০) কামরাঙ্গীর চর, (২১) মিরপুর ১০, (২২) কল্যাণপুর (ঝিলপাড়া), (২৩) তেজগাঁও, (২৪) পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) (২৫) কাকরাইল। স্থায়ী বাজারগুলো হলো- (১) মিরপুর শাহ আলী বাজার, (২) মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট (৩) নতুন বাজার (১০০ ফুট), (৪) কমলাপুর, (৫) কাজি আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার)। মাছ পাওয়া যাবে যে ৮টি স্থানে- এগুলো হল ফার্মগেট (বঙ্গবন্ধু চত্বর), মিরপুর-১ (ইদগাহ মাঠ), সেগুনবাগিচা বাজার, মেরুল বাড্ডা বাজার, মুগদাপাড়া (মদিনাবাগ বাজার), যাত্রাবাড়ী (দয়াল ভরসা মার্কেট), মতিঝিল (বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে) এবং পলাশী মোড়।