• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হচ্ছে নবনির্মিত স্টেডিয়াম ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ৬৭ জনের মৃত্যু সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে কোরবানির চাহিদার চেয়ে ২২,৭৭,৯৭৩ অতিরিক্ত গবাদিপশু প্রস্তুত দেশব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিরাট জাগরণ তৈরি হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছি: কৃষিমন্ত্রী ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না: কাদের টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী রোয়াংছড়ি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রাবাসে নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার ১৫ দিনব্যাপী সাঁতার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন

রাসায়নিকযুক্ত একাধিক চালান ধরা পড়ার পরও সাগরপথে মাছের আমদানি বাড়ছে

Reporter Name / ৪৪৮ Time View
Update : সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাসায়নিকযুক্ত একাধিক চালান ধরা পড়ার পরও সাগরপথে দেশে মাছের আমদানি বাড়ছে। ওসব মাছ মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আর শুধুমাত্র ফরমালিন পরীক্ষায় আমদানিকৃত ওসব মাছের চালান খালাস করা হচ্ছে। কিন্তু আমদানিকৃত মাছে ক্ষতিকর বিভিন্ন ভারি ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন আমদানিকৃত মাছে আর্সেনিক, পারদ, সিসা ও ক্যাডমিয়াম পরীক্ষার শর্ত আরোপ চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সাগর থেকে তেল উত্তোলনের জন্য স্থাপন করা রিগের কারণে তেল মিশ্রিত পানিতে মাছ মরে ভেসে ওঠার তথ্য দেয়া হয়। পাশাপাশি ওসব দেশ থেকে আমদানি হওয়া সামুদ্রিক মাছ মাইক্রোবায়োলজি পরীক্ষা ছাড়াও মার্কারি পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর এবং বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সাগরপথে আমদানি করা ৬৫ হাজার ৩৮৮ টন হিমায়িত মাছ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে তার পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৬৫৭ টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে সাগরপথে আমদানিকৃত মাছের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। তবে তিন বছরের তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায় আমদানি হার দ্বিগুণেরও বেশি। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৫ হাজার ৪৪৩ টন আমদানি হওয়া মাছের শুল্কায়ন করেছিল। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সাগরপথে সি ক্যাট ফিশ (মাগুর, শিংসহ অন্যান্য), রূপচাঁদা, সেড বা গিজার্ড সেড, সার্ডিন প্রভৃতি মাছ আসছে। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ওসব সামুদ্রিক মাছ আমদানি হচ্ছে। তাছাড়া কাতার, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম থেকেও মাছ আমদানি করা হচ্ছে। সাগরপথে আমদানি হওয়া হিমায়িত মাছে ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে কিনা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তা খালাসের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব। কিন্তু সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম শুধু ফরমালিন আছে কিনা তা পরীক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। এ ব্যাপারে কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা আমদানি নীতিতে মাছের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ না থাকা ও আমদানি করা মাছে ফরমালিন ছাড়া অন্যান্য পরীক্ষা করার বিধান না থাকার কথা জানান। অথচ সামুদ্রিক মাছ আমদানিতে শুধু ফরমালিন পরীক্ষায় আর্সেনিক, পারদ, সিসা ও ক্যাডমিয়ামের মতো ভারি ধাতু শনাক্ত হয় না। সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সব মাছে অতিমাত্রায় ভারি ধাতু, বিশেষ করে সিসা, ক্রোমিয়াম ও মার্কারি পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সেজন্যই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেশকে খাদ্যে ভেজালমুক্ত করা বা নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার গুরুত্বারোপ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তখন উদ্যোগ নিয়ে আমদানি হওয়া মাছের চালানের নমুনা রেডিয়েশন পরীক্ষার জন্য পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে এবং ফরমালিন পরীক্ষার জন্য মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ে পাঠানো হতো। ওই দুই পরীক্ষায় শুধু ফরমালিন ও তেজস্ক্রিয়তা সহনীয় মাত্রায় আছে কিনা তা নির্ণয় করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্দর থেকে পণ্য চালান খালাস নিতে জটিলতা হওয়ার কারণ দেখিয়ে আমদানিকৃত মাছের নমুনায় ভারি ধাতুর উপস্থিতি পরীক্ষার ব্যবস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশ থেকে খাওয়ার অযোগ্য মাছ দেশে আমদানি হচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে মানবদেহের ক্ষতিকর পদার্থ ক্যাডমিয়ামও পাওয়া গেছে। মূলত তদারকি না থাকার সুযোগ নিয়েই ওসব মাছ আমদানি হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ শুধু সামুদ্রিক মাছই নয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে এখন প্রথম সারিতে থাকলেও ভারত ও মিয়ানমার থেকে কার্পজাতীয় মাছ প্রচুর আমদানি হচ্ছে। তার মধ্যে বেশি আমদানি হচ্ছে রুই-কাতলা। যদিও দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে যতো মাছ উৎপাদন হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রুই। তারপরই সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে কাতলা। আর বাজারে আমদানি করা মাছের প্রতি খুচরা ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি। কারণ দেশী যে সামুদ্রিক মাছ ৪শ’ টাকায় বিক্রি হয়, ওই একই আকারের মাছ ফিশারিঘাটে ১০০ টাকার কমে পাওয়া যায়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা মাছ পরীক্ষা করে বিষাক্ত উপাদান নিশ্চিত হতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা সব মাছ বাধ্যতামূলক পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়। তখন বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবে ভারি ধাতুর পরীক্ষা শুরু হয়। ওই প্রক্রিয়ায় বন্দর দিয়ে আসা একের পর এক চালানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ভারী ধাতুর উপস্থিতি ধরা পড়তে থাকে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ২ বছর আগে ওই পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও আমদানি করা মাছের মাধ্যমে ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক মানবদেহে প্রবেশ করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া মাছের গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত না করার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কারণ আমদানি হওয়া মাছের শুধু ফরমালিন পরীক্ষা দিয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া যায় না। ফরমালিন পরীক্ষায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আর্সেনিক, পারদ, সিসা, ক্যাডমিয়াম শনাক্তের সুযোগ নেই। ভারি ধাতুসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক মানবদেহে ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। এদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদাকিৃত মাছ খালাস হওয়ার আগে কাস্টমস বিভাগ মাছের ফরমালিন পরীক্ষা করে। তার বাইরে অন্য কোনো ধরনের পরীক্ষা হয় না। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নূরুল কাইয়ুম খান জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত মাছের বহু কনটেইনার একের পর এক ধরা পড়েছিল। তখন সাময়িক পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন আর কোনো উদ্যোগ নেই। নামমাত্র যে পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়গুলো বিবেচনায় থাকছে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রামে সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক (সামুদ্রিক) ড. মো. শরীফ উদ্দিন জানান, সাগরপথে আমদানি হওয়া মাছ জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে। আমদানিকারকরা বিভিন্ন দেশ থেকে অত্যন্ত কম দামে খাওয়ার অনুপযুক্ত ও নিম্নমানের মাছ নিয়ে আসছে। এমনকি পোলট্রি শিল্পের উপকরণ হিসেবে আনা মাছও মানুষের খাদ্য হিসেবে বাজারে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আমদানিকৃত নিম্নমানের মাছ চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটসহ পাইকারি বাজারগুলোতে স্বল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ায় ক্রেতারা আকৃষ্ট হচ্ছে। অথচ চাহিদা বিবেচনায় দেশেই সামুদ্রিক মাছের আহরণ উদ্বৃত্ত থাকছে। বছরে এখন গড়ে সাড়ে ৬ লাখ টনেরও বেশি সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category