• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২১ অপরাহ্ন

সংগ্রামী নারী ফাতেমাকে পুনাক সভানেত্রীর রিকশা উপহার

Reporter Name / ৪০১ Time View
Update : সোমবার, ৪ অক্টোবর, ২০২১

ইসমাইল হোসাইন :
ফাতেমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ২০ বছর চেহারায় সংগ্রামের চিহ্ন স্পষ্ট। এই বয়সেই হারিয়েছেন অনেক কিছুই। হারানোর বেদনা ভুলে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাবাকে হারিয়েছে ছোটবেলায়। লঞ্চ ডুবিতে বাবা মারা যাওয়ার পর কোথাও ঠাঁই হয়নি তার। জীবন কেটেছে পথে-ঘাটে। কখনো কাজ করেছে মানুষের বাসায় । জীবনে চলতে চলতে একসময় পরিচয় হয় এক গার্মেন্টস কর্মীর সাথে। পরে তাকে বিয়ে করে। কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন। স্বামীর নির্যাতনে সন্তান সম্ভবা ফাতেমার সন্তান নষ্ট হয়ে যায়, মৃত মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয় সে।
তার জীবনে আবারও নেমে আসে দুর্ভোগ। গত বছর করোনাকালে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। অন্যত্র বিয়ে করে সংসার গড়ে। ফাতেমা তখন পুনরায় সন্তান সম্ভবা। নিজের কথা, অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে শুরু করে সংগ্রামী জীবন। সিদ্ধান্ত নেয় রিকশা চালানোর। প্রথমে কেউ রিকশা দিতে রাজি না হলেও তার অনুনয় বিনয়ে মহাজন তাকে রিকশা চালানোর জন্য দেয় এবং দৈনিক ২৫০/৩০০ টাকা জমা দিতে হয়। এভাবেই শুরু হয় রিকশার প্যাডেলে তার সংগ্রামী জীবনের নতুন অধ্যায়। সন্তান পেটে নিয়েও তাকে রিকশার প্যাডেল চাপতে হয়েছে। কিন্তু বিধি বাম। আবারও মৃত ছেলের জন্ম দিয়েছে ফাতেমা। মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙ্গে পড়ে সে। তার মানসিক কষ্ট সইতে না পেরে তার বোন নিজের মেয়েকে দিয়ে দেয় তাকে। এই মেয়েই এখন তার সব?। মেয়ের জন্যই নতুন করে যুদ্ধ শুরু করেছে ফাতিমা। পথে পথে রিকশা চালিয়ে জীবন ধারণের চেষ্টা করছে। এখন তার একটি রিকশা চাই।
বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা পরম মমতায় পাশে দাঁড়িয়েছে ফাতেমার। তিনি তাকে একটি রিকশা দিয়েছেন। গতকালের দিনটি ফাতেমার জীবনে এক বিশাল স্বপ্ন, বড় ধরনের প্রাপ্তি। পুনাক সভানেত্রী জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এই নারীর হাতে তুলে দিয়েছে ব্যাটারিচালিত একটি নতুন রিকশা। গতকাল (৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর রমনায় পুনাক’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে পুনাক’র অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে ফাতেমার হাতে তুলে দেন নতুন রিকশা, দিয়েছেন উপহার সামগ্রী। পুনাক সভানেত্রীর হাত থেকে রিকশা ও অন্যান্য উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত ফাতেমা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুনাক সভানেত্রী ফাতেমাকে সান্ত¡না দিয়ে বলেন, আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তখন সে বলে, ‘জীবনে কখনো এত আদর কেউ করেনি। আজ আমি ভালোবাসা পেয়েছি, নতুন মা পেয়েছি’। উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছিল, ফাতেমা ও তার মেয়ের জন্য পোশাক, হিজাব, রেইনকোট, চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ ইত্যাদি। উল্লেখ্য, পুনাক’র বর্তমান সভানেত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এভাবেই অসহায় দুস্থ মানুষের জীবনে আশার আলো ফুটিয়ে তোলার জন্য বিরতিহীনভাবে কাজ করে চলেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category