নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে থানায় চেষ্টা করেও মামলা দায়ের করতে পারেননি ভুক্তভোগী। পরে আদালতে ফৌজদারি অভিযোগে ঘটনার আদ্যোপান্ত খুলে বলেন তিনি। আদালত অভিযোগটি থানাকে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে আদেশ দেন। একই আদেশে মামলাটির রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। মামলার তদন্তভার পান সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল আব্বাস। ক্লু-লেস বা আলামতহীন দস্যুতার এই মামলার রহস্য উন্মোচনে তিনি সহায়তা নেন তথ্যপ্রযুক্তির। ছিনতাই হওয়া মোবাইলের নম্বর থেকে করা বিকাশ লেনদেনের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করেন তিনি। ক্যাশআউট, সেন্ড মানি ও মোবাইল রিচার্জ করা চারটি নম্বর শনাক্ত হয়। সেখান থেকে শনাক্ত হন চার ব্যক্তি। খুলতে থাকে মামলার রহস্যের জট। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন দুজন। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। ওই জবানবন্দিতে তিনি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। পিবিআই সূত্র জানায়, গত বছরের ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকার বাসিন্দা রিদওয়ান বায়েজিদ বোস্তামী সংযোগ সড়ক দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। ওই সড়কের ৪ নম্বর ব্রিজের ওপর হঠাৎ তার মোটরসাইকেলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি মোটরসাইকেলে ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ কয়েকজন যুবক এসে তাকে ঘিরে ধরেন। এরপর তাকে সড়ক থেকে আনুমানিক ১৫ ফুট নিচে নামিয়ে ফেলে। সেখানে ভুক্তভোগীর মোবাইল পকেটে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় চক্রটি। এরপর তাকে আটকে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। প্রায় দুই ঘণ্টা নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হয় তারা। পরে রিদওয়ানকে মারধর করে ফেলে দিয়ে মোটরসাইকেল এবং হেলমেট নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চক্রটি। এ ঘটনায় রিদওয়ান সীতাকু- থানায় মামলা দায়ের করতে যান। তবে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি আদালতে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি শুনে এটিকে এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সীতাকু- থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন। আদালতের আদেশে সীতাকু- থানায় ১১ জানুয়ারি একটি দস্যুতার মামলা রুজু হয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, মামলা হাতে পাওয়ার পর যাবতীয় নথি বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। ছিনতাই হওয়া মোবাইলে যে সিম ছিল, সেটিতে বিকাশ অ্যাকাউন্ট করা ছিল। সেটির ট্রানজেকশন (লেনদেন) পর্যালোচনায় দেখা যায়, অ্যাকাউন্টটি থেকে প্রথমে একবার ৩৫৯ টাকা ক্যাশআউট করা হয়। একবার পাঁচহাজার এবং আরেকবার এক হাজার টাকা অন্য একটি বিকাশ অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এ ছাড়া একবার একটি নম্বরে ৫৯ টাকা রিচার্জও করতে দেখা যায়। বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেনের এই সূত্রে শনাক্ত করা হয় চারটি নম্বর। সেই নম্বরগুলো থেকে শনাক্ত হন চারজন ব্যক্তি। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার দুদিন পর ১৮ জানুয়ারি আশরাফুল ইসলাম (২২) নামে এক যুবককে নগরের পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া জসিমের ভাড়া ঘর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আশরাফের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থানা এলাকায়। তার বাবার নাম মো. জয়নাল আবেদীন। গ্রেপ্তারের পর আশরাফকে রিমান্ডে নিতে আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালে তিনি ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেন। এরপর তাকে নিয়ে গত রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে মেশকাত উদ্দিন (২৫) নামে এক আসামি পালিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার করা হয় রাহাদ উদ্দিন (২৪) নামের একজনকে। রাহাদ পশ্চিম মিঠানালার আলী রাজা ভূঁইয়া বাড়ীর মৃত আলী আকবরের ছেলে। এ সময় তার বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়- একটি দেশে তৈরি রাইফেল, দুই রাউন্ড গুলি, এক রাউন্ড গুলির খোসাসহ নানারকম দেশীয় অস্ত্র। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল আব্বাস বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে মিরসরাই থানায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আশরাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের সুপার (এসপি) নাজমুল হাসান বলেন, ক্লু-লেস একটি দস্যুতার মামলার রহস্য উন্মোচন হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায়। এ ছাড়া ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।