স্পোর্টস ডেস্ক :
চলমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় দলের ভরাডুবির পর ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বিসিবি। এবার আনকোরা একটি পদ তৈরি করে তাতে খালেদ মাহমুদ সুজনকে নিয়োগ দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। সাবেক জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট সুজন এরইমধ্যে টিম ডিরেক্টর নামের এই নতুন দায়িত্বে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু এমন একটি পদ সৃষ্টির প্রয়োজন পড়ল কেন? ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে পুরুষ দলে অনেকটা এরকম একটি পদে ছিলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রস। অবশ্য তার পদের নাম ছিল ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট। তার কর্মপরিধি ও ক্ষমতা ছিল অনেক। দল নির্বাচন থেকে শুরু করে ক্রিকেট কাঠামো কেমন হবে, খেলার স্ট্রাটেজি কী হবে – সব কিছুতেই মোটামুটি তার হাত থাকত। দায়িত্ব নিয়েই তিনি তৎকালীন কোচ পিটার মুরসকে বরখাস্ত করেন। তার আমলেই ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলে আমূল পরিবর্তন আসে। এমন একটি দল তিনি সাজান যার একাদশে থাকা সব সদস্যই কমবেশি ব্যাটিং পারে। এর ফলাফলও পেয়েছে ইংল্যান্ড – ২০১৫ থেকে পরবর্তীতে দলটিকে নিয়মিত ৩৫০+ রান তুলতে দেখা গেছে, আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় করেছে এবং এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও উঠেছে। ২০১৮ সালে স্ট্রস স্ত্রীর স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করলে তার স্থলাভিষিক্ত হন অ্যাশলে জাইলস। খালেদ মাহমুদ সুজনের কার্যপরিধি এমন কিছু হবে কী না তা নিয়ে বোর্ড এখনো মুখ ফুটে কিছু বলেনি, তবে বিবিসিকে মি. সুজন বলেছেন, দল গোছানোর একটা ফর্মুলা নিয়ে কাজ করবেন তিনি। অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বোর্ড কর্মকর্তা বলছেন, টিম ডিরেক্টরের কাজ হবে মূলত কোচ ও জাতীয় দলের সাথে বোর্ড ও নীতিনির্ধারকদের একটা মেলবন্ধন ঘটানো। সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটে ক্রিকেটার ও বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে কথার একটা দূরত্ব দেখা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে যেটার ছাপ পড়েছে। বিশেষত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরে যাবেন কী না, সেটা নিয়ে একধরনের দুরত্ব দেখা গিয়েছিল বোর্ডের সাথে। জিম্বাবুয়েতে একটি টেস্ট ম্যাচ চলাকালে মাহমুদুল্লাহকে গার্ড অব অনার দিয়েছিল সতীর্থরা, কাগজেও বেরিয়েছিল যে মাহমুদুল্লাহ অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু পরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন, এ নিয়ে কিছু জানেন না তিনি, তাকে আগেভাগে কিছু বলেওনি কেউ। চলমান বিশ্বকাপেও দেখা গেছে, ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে নানারকম বক্তব্য দিচ্ছেন, আবার ম্যাচপূর্ব বা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে কোচ বা খেলোয়াড়েরা ভিন্ন রকমের বক্তব্য দিচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বোর্ড কর্মকর্তা বলছেন, ‘এই ফাঁকা জায়গাটা পূরণ করাই হবে টিম ডিরেক্টরের কাজ। খালেদ মাহমুদ সুজনের মতে, এই দলটার প্রতিটি ক্রিকেটার সামর্থ্যবান। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শোচনীয় ব্যর্থতাকে একটা ধাক্কা বলে মনে করেন তিনি। সুজনের মতে, একটা দল গোছাতে এক বা দেড় বছর সময় লাগে। তার ভাষায়, এটা এমন না যে আমি এলাম বা কেউ এলো, রাতারাতি সব বদলে দিল। এটা একটা প্রক্রিয়া। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শুধু মারতে জানার ক্রিকেট না। সেটা হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজই বারবার চ্যাম্পিয়ন হতো।’ দলের চেয়ে একটা ফর্মুলা নিয়ে কাজ করার প্রতিই জোর দেন সুজন। টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ে কিছু পরিবর্তন আসার কথা গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু এই দলের কাউকে ফেলে দেবার কথাও ভাবছেন না সুজন। খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করেন, ঢালাও পরিবর্তন দিয়ে কিছু হবে না। আর দশদিন পরেই ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে যদি দলে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা হয় তবে খুব বেশি পার্থক্য গড়বে না বলে মনে করেন খালেদ মাহমুদ সুজন। দলে আনতে হবে সমন্বয়।