• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৯ অপরাহ্ন

পঞ্চগড়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা, আসন্ন ইউপি নির্বাচনের পদপ্রার্থী

Reporter Name / ৪৭৮ Time View
Update : বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সুকুমার বাবু দাস,পঞ্চগড় প্রতিনিধি :
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পঞ্চগড় জেলা তেতুলিয়া উপজেলার ৭ নং দেবনগর ইউনিয়নের বর্তমানে সাবেক চেয়ারম্যান ও তৎকালীন ছাত্রনেতা, তেঁতুলিয়া উপজেলার কৃষক লীগের সিনিয়র সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ তরিকুল ইসলাম গত ২০১১ সালে ৭ নং দেবনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ হয়ার পর ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের যেকোনো সময় প্রায় ১৭,৩০,৯৫৭/- টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো: সামসুল হক ও সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা: মিনা খাতুন সহ এই তিনজনকে আসামি করে দিনাজপুর দুদকের সহকারী পরিচালক বীরকান্ত রায় বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সহকারী পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, দিনাজপুর (দুদক)। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭ নং দেবনগর ইউনিয়নের এলজিএসপি প্রকল্প -২ এ? ১ম কিস্তির বরাদ্দকৃত ৭, ২৬, ৩৫২/- টাকার মধ্যে ৪ টি প্রকল্পের ৫,৯৩,৯৮২/- টাকা ২য় কিস্তির বরাদ্দকৃত ৪,৪৪,৩৫৯/- টাকার মধ্যে ২টি প্রকল্পের ৪,১৬,৫০০/- টাকা, এবং ৩য় কিস্তির বরাদ্দকৃত ৭,৫৩,৯৭৫/- টাকার মধ্যে ৮টি প্রকল্পের ৭,২০,৪৭৫/- টাকা সর্বমোট ১৪ টি প্রকল্পের মোট( ৫,৯৩,৯৮২+৪,১৬,৫০০+৭,২০,৪৭৫)=১৭,৩০,৯৫৭/- টাকা উত্তোলনপূর্বক প্রকল্পের কোন কাজ করেননি মো: তরিকুল ইসলাম। ঘটনার বিবরণ এই যে, দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, দিনাজপুরের ই/ আর নং -১১/২০১৬ তাং ১৯/৬/২০১৬ ইং এর অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত কাগজপত্র নিরপেক্ষ প্রকৌশলের পরিমাপ প্রতিবেদন, অভিযোগকারী উপজেলা নির্বাহি অফিসার, তেতুলিয়া এর বক্তব্য, উপস্থিত সাক্ষীদের বক্তব্য, ওয়ার্ড কমিটির আহবায়কদের বক্তব্য, কোটেশন দাতা ঠিকাদারের বক্তব্য, পর্যালোচনা করে দেখেন যে, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের ৭নং দেবনগর ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে এস.জি এস. পি – ২ এর ১ম কিস্তির ৭,৩৬,৩৫৩/- টাকা, ২য় কিস্তির ৪,৪৪,৩৫৯ক/- টাক ৩য় কিস্তির ৭,৫৩,৯৭৫/- টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। উক্ত বরাদ্দ প্রাপ্তির পর চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম ১ম কিস্তির ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের নিয়মিত এলজিএসপির নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৭ সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেন। উক্ত ওয়ার্ড কমিটির তত্ত্বাবধানে ঠিকাদার কর্তৃক স্পট কোটেশনের মাধ্যমে কাজগুলি করার নির্দেশনা ছিল। উল্লেখ্য এলজিএসপির নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউপি সচিব এবং ইউপি পরিষদ এর সংরক্ষিত মহিলা আসনের একজন সদস্যের নামে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, ভজনপুর শাখা, তেতুলিয়া হিসাব নং ৬ তে উক্ত টাকাগুলি জমা করতো। উহা প্রকল্প কাজে ব্যয় করার বিধান ছিল। প্রকল্পগুলো নিম্নরুপ:-১) উক্ত ইউপির হতদরিদ্রের মধ্যে বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য নলকূপ স্থাপনের জন্য বরাদ্দকৃত ২,০০,০০০/- টাকার মধ্যে ভ্যাট কর্তন বাদে ১,৮৯,০০০, টাকা, ২) উক্ত ইউপির অসহায় দুস্থ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন সরবরাহের জন্য বরাদ্দকৃত ২,০০,০০০/- টাকার মধ্যে ভ?্যাট কর্তন বাদে ১,৮৯,০০০/- টাকা,৩) ইউপির ১ হতে ৯ নং ওয়ার্ডের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছের চারা রোপণ ও গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টব নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ৭৩,৬৩৫/- টাকার মধ্যে ৭৩,৫০০/- টাকা উক্ত ইউপির ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে ফটোস্ট্যাট মেশিন, মডেম ও অন্যান্য আসবাবপত্রের প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ১,৬৬,৭১৮/- টাকার মধ্যে ভ্যাট কর্তন বাদে ১,৪২,৪৮২/- টাকার কোন প্রকার প্রিন্টার ফটোস্ট?্যাট মিশিন এবং মডেম ক্রয় না করে অসৎ দুদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া রেকর্ডপত্র/ ভাউচার সৃজন করে উপরোক্ত আসামিকে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাত করেন। এবং এ ছাড়াও এলজিএসপি ২ এর ২য় কিস্তির ১নং প্রকল্প উক্ত ইউপির ১ হতে ৯ নং ওয়ার্ড হত-দরিদ্রের মাঝে স?্যানিটারি ল??্যাট্রিন তৈরি ও বিতরণের জন্য ২,৮০,৫০০/-টাকা এবং ২) ২য় কিস্তির প্রকল্প ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের হতদরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে নলকূপ সরবরাহের জন্য ১,৩৬,০০০/-টাকা উত্তোলনপূর্বক পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে আত্মসাৎ করেন। অনুরূপভাবে আসামি গনের এলজিএসপি প্রকল্পের ৩য় কিস্তির ৮টি প্রকল্প যেমন, ৭ নং দেবনগর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের হতদরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে গাছ সরবরাহের জন্য ৯৪, ৫০০/- টাকা( ২) ৩ নং ওয়ার্ডের হতদরিদ্রদের স্যানিটারী ল্যাট্রিন তৈরি ও বিতরণ বাবদ ১,০৪,০০০/-টাকা ( ৬, ৭, ও ৮, নং ওয়ার্ডের হতদরিদ্রদের জন্য স্যানিটারী ল্যাট্রিন বিতরণ বাবদ প্রতি ওয়ার্ডে ৯৪,৫০০/- টাকা। এবং ৪ নং ওয়ার্ডের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ বাবদ ৭৫,০০০/- টাকা এবং ৪টি প্রকল্পের ৫,৯৩,৯৮২/- টাকা। এবং ২য় কিস্তির ২টি প্রকল্পের ৪,১৬,৫০০/- টাকা, ৩য় কিস্তির টি প্রকল্পের ৭,২০,৪৭৫/- টাকা সর্বমোট ১৪টি প্রকল্পের মোট ( ৫,৯৩,৯৮২+৭,১৬,৫০০+৭,২০,৪৭৫)= ১৭,৩০,৯৫৭/- টাকা সোনালী ব্যাংক ভজনপুর শাখা, তেতুলিয়া হিসাব নং ৬৫১ হতে উত্তোলন পূর্বক পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের করে আত্মসাৎ করে নিজেরা লাভবান হয়েছেন। অনুসন্ধানকালে সরেজমিনে প্রকল্পগুলোর নিরপেক্ষ প্রকৌশলী দ্বারা পরিমাপ গ্রহণ করে প্রকল্পগুলোর কাজ হয়নি মর্মে নিরপেক্ষে প্রকৌশলীর মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে আরো জানা যায়, মাঠ পর্যায়ের পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দায়িত্বে নিয়োজিত ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলিটের জনাব মোঃ শফিকুল আলম উক্ত প্রকল্পটির পরিদর্শনকালে তিনি স্কিমের ফাইল যথাযথ পাননি। এবং গৃহীত স্কিমসমূহ শুধুমাত্র কাগজ-কলমে রয়েছে, বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ কোন স্কেম বাস্ত বায়িত হয়নি যা তিনি জেলা প্রশাসক, পঞ্চগড়, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার বিভাগ পঞ্চগড় এবং উপজেলা নির্বাহি অফিসার, তেতুলিয়া পঞ্চগড়কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, এলজিএসপির ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রকল্পগুলির কাজ দেখাশুনার জন্য ডিস্ট্রিক্ট ফ?্যাসিলেটর পদবীর একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অনুসন্ধানকালে প্রকল্পটির ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি এবং যেসব কোটেশন দাতার মাধ্যমে কাজগুলি বাস্তবায়ন করার কথা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে । কোটেশন দাতা ঠিকাদারগন তাদের বক্তব্যে জানা যায় যে, তারা কেউ উপরোক্ত কাজের বিপরীতে কোন কোটেশন দাখিল করেননি, উক্ত প্রকল্পটির কাজ করেননি এবং টাকা উত্তোলন করেননি। ইহা সারা ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়কগন উক্ত প্রকল্প সম্বন্ধে কিছুই জানেন না বলে জানান। এবং তারা কোন প্রকার মাস্টাররোলে স্বাক্ষর করেননি বা দাখিল করেননি বলে জানান। অনুসন্ধানকালে আসামি গনের নিকট থেকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নথি সংগ্রহ করে দেখা যায় যে উক্ত নথিতে শুধুমাত্র ওয়ার্ড কমিটি তালিকা, কোটেশন এর তুলনামূলক বিবরণী এবং কয়েকটি ভুয়া ভাউচার পাওয়া গিয়েছে। কোটেশন দাদাদের কোন কোটেশন এবং কোন মাস্টাররোল সংশ্লিষ্ট নথিগুলোতে পাওয়া যায়নি। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে। আসামীগণ উল্লেখ করে ১৪টি প্রকল্পের মোট ১৭, ৩০,৯৫৭ /- টাকা ব্যাংক থেকে চেক মূল্যে উত্তোলন করে কোন প্রকার কাজ না করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেছে যাহার মামলা নং-০৬/১২৮। ইউনিয়নের এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের দুদকের মামলা সহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে । তবুও সে ১০১৬ সালে নৌকার প্রতীক নিয়ে কিভাবে নির্বাচন করেন। এবারও তিনি আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন ও নৌকার আশাবাদী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে তরিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে, তিনি নিউজ না করার কথা বলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category