• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
দিনে ১০-১২ বার লোডশেডিং, গরমে অতিষ্ঠ নীলফামারীর মানুষ মালয়েশিয়া উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো গন্তব্য: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী গরমে লোডশেডিংয়ে ভুগছে গ্রামের মানুষ, ঢাকায় লোডশেডিংয়ে কম আগামী দিনে হজ ব্যবস্থাপনা আরও স্মার্ট হবে: ধর্মমন্ত্রী থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা, লাল গালিচা সংবর্ধনা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করতে চায় ভারত: হাইকমিশনার কক্সবাজারে ‘রোহিঙ্গা ভোটারদের’ তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট ফরিদপুরে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪ প্লাটুন বিজিবি ভিসা জটিলতায় এবারের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সিগুলোর

রোহিঙ্গাদের মিয়ারমারে প্রত্যাবাসন বিষয়ে ওয়েবিনার

Reporter Name / ৩৫০ Time View
Update : শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রোহিঙ্গাদের মিয়ারমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক-রাজনৈতিক এবং পরিবেশগত বহুমুখী বিপযর্য় এড়াতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যে মিয়ারমারে প্রত্যাবাসন জরুরি, সে কথাই উঠে আসে ওই ওয়েবিনারে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ায় যেসব সমস্যা ও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, সেসব বিষয়ও তুলে ধরেন ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা: সামাজিক-রাজনৈতিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক ওই ওয়েবিনারের আলোচকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশন যৌথভাবে গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার পাশাপাশি কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্প এলাকায় প্রাকৃতিক বিপযর্য় এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ আসে এই আলোচনায়। ওয়েবিনারে ‘ইম্প্যাক্ট অব রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স ইন বাংলাদেশ অন লোকাল টু রিজিওনাল পিস অ্যান্ড স্ট্যাবিলিটি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারকে ওভাবে চাপ প্রয়োগ করছে না। এই সমস্যা সমাধানে যেসব দেশ জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে, তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, কিন্তু তারা এ বিষয়ে ইতস্তত করছে যে, সেখানে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ইরান বা উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, তাহলে মিয়ানমারের ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা যাবে না? এ ধরনের পরস্পরবিরোধী ভূমিকা, মানুষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গুরুত্ব সহকারে নেবে না। রোহিঙ্গাদের একজনের পরিবর্তে একাধিক নেতা বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে শুধু একজনই নেতা হওয়া উচিত না। মিয়ানমার সামরিক বাহিনী চায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাতে কোনো নেতা না থাকে। বর্তমানে যে সাত কোটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের কোনো নেতা নেই। আমরা দেখছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও তারা নেতৃত্বশূন্য। ওয়েবিনারে ‘রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স: ন্যাচারাল হ্যাজার্ডস ইন কক্সবাজার রিজিওন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ( শিক্ষা) ও দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এসএম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বহুমুখী ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। পর্যটন নগরী কক্সবাজার এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। প্রাকৃতি, বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন। রোহিঙ্গা প্রবাহের কারণে কক্সবাজারে বন উজাড় করে, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতভাবে আবাসন তৈরি হয়েছে। ফলে সেখানে ভূমি ক্ষয়, ভূমি ধস, বন্যা ও অগ্নিকা- সাধারণ ঘটনা হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে, ভবিষ্যতে এটা ‘ভয়াবহ রূপ’ নিতে পারে। এসব বিপর্যয় এড়াতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে মূল সমাধান হিসেবে তুলে ধরে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বেশ কিছু সাময়িক সমাধানের কথা তুলে ধরেন। তিনি রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর, ভূমি ক্ষয়রোধ, বনায়ন, ড্রেইনেজ সিস্টেম উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন। মনিটরিং অ্যান্ড মডেলিং অব গ্রাউন্ডওয়াটার ইন উখিয়া-টেকনাফ রিজিওন ফর এসেসিং ইম্প্যাক্টস অব হেভি অ্যাবস্ট্রাকশন ডিউ টু রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্স’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জল একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে যা রোহিঙ্গা প্রবাহের সাথে জড়িত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এর অনাকাক্সিক্ষত প্রভাব এড়ানো প্রয়োজন। ‘রোহিঙ্গাস ইন বাংলাদেশ: সোশ্যাল কোহেশন অ্যান্ড কনফ্লিক্ট ইন দ্য হোস্ট কমিউনিটি’ শীর্ষক প্রবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের অবিশ্বাস ও অভিযোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংকট সমাধানে সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক জিল্লুর রহমান রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে কথা বলেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ডিজাস্টার রিডাকশন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক পিটার স্যামন্ডস বলেন, রোহিঙ্গারা এদেশে আসার পর বাংলাদেশ পাহাড় ধস, পানি দূষণসহ নানা ধরনের মানবসৃষ্ট দূর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে প্রত্যাবাসন জরুরি। ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেরই নাগরিক। তাদের অধিকার আছে দেশে ফিরে যাওয়ার, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার। মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার কাজ করছে। তাদের প্রত্যাবসনে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এবং ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের (ফাও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসনও আলোচনায় অংশ নেন। প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. কাউসার আহাম্মদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ডিজাস্টার রিডাকশন ইনস্টিটিউটের প্রভাষক বায়েস আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাখাওয়াত হোসেন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category