নিজস্ব প্রতিবেদক :
১২ বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো শিক্ষার্থী টিকাকেন্দ্রে গেলে টিকা পাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে। কারও আইডি কার্ড না থাকলে সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখালে টিকা দেওয়া হবে। আজ সোমবার সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপাতত আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করছি না। আমরা এ মাসের মধ্যেই সব শিক্ষার্থীর টিকার প্রথম ডোজ সম্পন্ন করবো। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিকা থেকে বেশি পিছিয়ে রয়েছে। সে কারণে মঙ্গলবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠক করা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাসে পাঠদান চালিয়ে নেওয়া হবে। এটি ধারাবাহিকভাবে চলবে। দীপু মনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনেশনের প্রতি জোর দেওয়া হবে। যারা টিকা নিয়েছে তারা সশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হবে। যারা এখনো টিকা নিতে পারেনি এবং অসুস্থ আছেন তারা বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাসে যুক্ত হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও নিজ নিজ আইডি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে। যাদের আইডি কার্ড নেই তারা রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়ে গেলে টিকা পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানেও একসঙ্গে গিয়ে বা এককভাবে টিকা নেওয়া যাবে। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে হলেই তাকে টিকা দেওয়া হবে। দ্রুত সময়ে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে এ কার্যক্রম সহজ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। ১২ বছরের বছরের নিচে শিক্ষার্থীরা টিকা পাচ্ছে না, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে এখনো ১২ বছরের নিচে শিশুদের টিকার ব্যবস্থা চালু হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এ বয়সের শিশুদের ঝুঁকিও কম। তাই তারা ক্লাসে আসতে পারবে। তাদের মনিটরিং করা হবে। তবে যারা ঝুকিপূর্ণ স্থায়ী রোগে আক্রান্ত, তাদের বাড়িতে থেকে অনলাইনে ক্লাস করার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশে ১২ বছরের ওপরে ১ কোটি ১৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪০ লাখ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে। সে হিসাবে ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, সারাদেশে ১২ থেকে ১৮ বছরের মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন টিকা পেয়েছে। প্রথম ডোজ পেয়েছে ৪৪ লাখ আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন। এখনো টিকা পায়নি ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থী। ডা. দীপু মনি জানান, সব জেলায় সমানতালে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কোথাও বেশি, আবার কোথাও কম দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি জেলায় ৯০ শতাংশ, চার জেলায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ, ছয় জেলায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ, সাত জেলায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ, চার জেলায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ, চার জেলায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ, দশ জেলায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ, ১১ জেলায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, ১২ জেলায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যাালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যাল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিক শিক্ষার্থী এখনো টিকার বাইরে রয়েছে। আশা করি, দেশের ৩৯৭ টি উপজেলায় আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছরের শতভাগ শিক্ষার্থীর টিকা কার্যক্রম শেষ করা হবে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা চলতি বছরের মাঝামাঝি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে এসএসসি নিতে পেরছিলাম, এইচএসসি নিতে পারিনি। ২০২১ সালে আমরা বলেছিলাম দেরিতে হলেও নেওয়ার চেষ্টা করবো, আমরা নিতে পেরেছি। পরিস্থিতি পক্ষে ছিল বলে নিয়েছি। তিনি বলেন, নতুন বছর ২০২২ সালেও আমরা পরীক্ষা নিতে চাই। যারা পরীক্ষা দেবে তারা পড়াশোনা করতে পারেনি। আমরা একটা আভাস দিয়েছি যে বছরের মাঝামাঝি নেব। ক্লাস করিয়ে নিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বছরের মাঝামাছি পরীক্ষা নেব আমাদের সিদ্ধান্ত সে জায়গায় আছে। সুনির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা পর্যযক্ষেণ করবো, ক্লাস করাতে থাকবো, যখন নেওয়ার মতো হয় তখন নেব। দুই তিন মাস আগে আমরা জানতে পারবো। দীপু মনি বলেন, পরীক্ষার আয়োজন করবে শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরীক্ষা কবে হবে, কীভাবে হবে, সেটা বলে দেওয়া হবে। অন্য কে কী বললো দয়া করে শুনবেন না। গুজবে কান দেবেন না। চটকদার অনেক সংবাদ পরিবেশন করে তাদের একটা রোজগার হয়। তাই অন্য কে কী বললো তাদের কথা না শুনে যাদের মূল দায়িত্ব তারা কী বলে সেটা শুনবো। এদিকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শিক্ষকরা ধর্মঘট পালন করেছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকাল থেকে শিক্ষকরা ধর্মঘট পালন করেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দ্রুত এই অস্থিরতা নিরসনের আশ্বাস দেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষকরা বৈঠক শুরু করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেয়। তারা শিক্ষকদের সভাকক্ষের বিদ্যুতের লাইন ও পানির লাইন বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এর আগে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করেছে। আর এখন তারা সশরীরে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে। তবু আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিকে সম্মান জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। আশা করি, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিস্থিতি চলছে সেটা অবিলম্বে নিরসন হবে। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে। আশা করি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক বিষয়ে দাবি জানাবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের বিষয়ে অনেকটা উদাসীনতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়ানো হবে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সেখানে নজরদারি করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ওমিক্রন পরিস্থিতি বেড়ে গেলেও সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালিয়ে যাওয়া হবে। তবে আগের চাইতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়ানো হবে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে কোভিড-১৯ জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বৈঠক করা হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কাজটি করা হচ্ছে। সেটিতে নজরদারি বাড়ানো হবে। বিশেষ করে সাধারণ ও কওমি মাদ্রাসাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। যেহেতু তারা আমদের সঙ্গে সরাসরি নিবন্ধিত নয় বা তারা সরাসরি আমদের নিয়ন্ত্রণে নয়, তাই কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে। স্থানীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ নজরদারি করা হবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক প্রমুখ।