• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
দিনে ১০-১২ বার লোডশেডিং, গরমে অতিষ্ঠ নীলফামারীর মানুষ মালয়েশিয়া উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো গন্তব্য: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী গরমে লোডশেডিংয়ে ভুগছে গ্রামের মানুষ, ঢাকায় লোডশেডিংয়ে কম আগামী দিনে হজ ব্যবস্থাপনা আরও স্মার্ট হবে: ধর্মমন্ত্রী থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা, লাল গালিচা সংবর্ধনা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করতে চায় ভারত: হাইকমিশনার কক্সবাজারে ‘রোহিঙ্গা ভোটারদের’ তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট ফরিদপুরে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪ প্লাটুন বিজিবি ভিসা জটিলতায় এবারের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সিগুলোর

জনগণের আস্থা-বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি: শেখ হাসিনা

Reporter Name / ৫২ Time View
Update : সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা জনগণের সঙ্গে আছি, জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি। আমার তো হারাবার কিছু নেই। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি, আমার কী হারাবার আছে! আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আজ সোমবার বিকেলে সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সফর নিয়ে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের দুর্বলতা খোঁজে আর অর্থের হিসাব নেয়। মানিলন্ডারিং তো করেছে খালেদা জিয়া আর তার দুই ছেলে। ৪০ কোটি টাকা তো উদ্ধার করে নিয়ে আসছি। এখনো বিএনপির বহু নেতার টাকা বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে জমা আছে, কারও কারও টাকা ফ্রিজ করা আছে। আওয়ামী লীগ বেশি কাজ করে, তাই তারা পেছনে লেগে থাকে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে, অনেকের সেটা পছন্দ হবে না। স্বাধীনতাবিরোধী, গণহত্যা সমর্থনকারী ও জাতির পিতার হত্যাকারীদের এগুলো পছন্দ হবে না। তারা আমার বিরুদ্ধে শত্রুতা করেই যাবে। আমি তো বোমা প্রুফ হয়ে গেছি, বোমা দিয়ে মারতে পারেনি, সরাসরি গুলি করে মারতে পারেনি, গ্রেনেড হামলা করেছে তাও মরি নাই। তিনি বলেন, যতই চেষ্টা করুক, আল্লাহতায়ালা মানুষকে একটা কাজ দেয়, ওই কাজটা শেষ না পর্যন্ত আল্লাহই রক্ষা করে। আর আমার নেতাকর্মীরাও তো বারবার আমাকে রক্ষা করেছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো ‘ভয়ে নেই’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন আসছে বলে ভয় পাবো! কেন ভয় পাবো! আমি জনগণের জন্য কাজ করেছি, জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এক প্রশ্নে সরকারপ্রধান বলেন, ওয়েস্ট-ইস্ট অব ডেমোক্রেসি আমরা ফলো করি। দেখুন, ব্রিটেনে কীভাবে ইলেকশন হয়, তারা কীভাবে করে, আমরা সেভাবেই করবো। এরমধ্যে আমরা এটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছেন তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছে প্রকাশ করেন যে নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারে আসতে চান, আমরা নিতে রাজি আছি। এটুকু উদারতা আমাদের আছে, আগেও আমরা নিয়েছি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে আমি খালেদা জিয়াকেও আহ্বান (নির্বাচনকালীন সরকারে আসার) করেছিলাম। তারা তো আসেনি। আর এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে। কাজের ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু না। বিএনপির আন্দোলন বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে। সরকার হটাবে। আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন অপজিশনে ছিলাম আমাদের কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছে। নির্বাচন ঠেকাতে ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন হাজার লোককে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। তিন হাজার ৮০০ গাড়ি, ২৭টি রেল, ৯টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়েছে। তারা তো জ¦ালা-পোড়াওই করে গেছে। আমি বলে দিয়েছি, আন্দোলন করুক, মানুষ ছাড়ুক কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু জ¦ালা-পোড়াও যদি করতে যায়, কোনো মানুষকে যদি আবার এরকম করে পোড়ায়, তাকে ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেবো না’- যোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের ২০ দলীয় ঐক্যজোট। সিট পেয়েছে মাত্র ২০টি। তারা আবার বড় বড় কথা বলে। আর দালালি…। কার পয়সায় আন্দোলন করছে, কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষ কি এত অন্ধ হয়ে গেছে, চোখে দেখে না। হাজার হাজার কোটি টাকা তো লুট করে নিয়েই গেছে, আর কাদের মদতে করছে সেটা একটু খোঁজ নেন। এত লোক নিয়ে আসে আর প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, এগুলো তো বিনা পয়সায় হচ্ছে না। রিজার্ভ নিয়ে দেশে তেমন কোনো সংকট নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো ডলার যেন আমাদের হাতে থাকে, সেটা নিয়েই আমাদের চিন্তা। রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। তিনি বলেন, আমরা রিজার্ভ নিয়ে বলতে বলতে সবার মাথায় এটা ঢুকে গেছে। আমাদের রিজার্ভ এখনো যা আছে তাতে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের এমন কোনো সংকট এভাবে নাই। তবে আমরা সবসময় রিজার্ভ ধরে রাখারই চেষ্টা করি। দেশে চলমান ডলার সংকট বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। আমাদের বিনিয়োগ বাড়ছে, উৎপাদন বাড়ছে। কাজেই ডলারের ওপর চাপ তো বাড়বেই। স্যাংশন কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে আজ সারা বিশ্বে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। পরিবহন পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে। যে কারণে ডলার সংকট এখন সমগ্র বিশ্বেই রয়ে গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আগামী নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণাই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। যদিও এটা আগে বলে দিয়েছি, তবে এটাই হবে আমাদের মেইন, অর্থাৎ বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। বাংলাদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না, দেশের সব মানুষ উন্নত জীবন পাবে। বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়া আসন্ন বাজেটে সরকারকে বিপদে ফেলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভর্তুকিটাই আমাদের বাজেটে সবচেয়ে বেশি বিপদে ফেলছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম দেয় না। জ¦ালানি, বিদ্যুৎ সব খাতে ভর্তুকি দিচ্ছি। বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে লাভ কী? যে সবচেয়ে বেশি এয়ারকন্ডিশন চালায় তার লাভ সবচেয়ে বেশি। আমার গরিব মানুষের তো লাভ হয় না। আসলে ভর্তুকিতে লাভবান হচ্ছে বিত্তশালীরা। বর্তমানে জ¦ালানি তেল ও গ্যাসের দাম যে হারে বেড়েছে সেটা সরকারের পক্ষে টানা সম্ভব নয় বলেও জানান সরকার প্রধান। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতের চাকুরেদের বেতন বাড়ানোর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা তাদের বিষয়। এটা সরকারের ব্যাপার না। বেসরকারি খাত করোনা ভাইরাসের সময় যেন বিপদে না পড়ে তার জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। তাদেরকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমরা ভর্তুকিও দিয়েছি। এই ভর্তুকিটা বাজেটকে বিপদে ফেলেছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমরা যখন বেতন ভাতা বৃদ্ধি করি, আমরা একটা গবেষণায় দেখেছিলাম যে ইনফ্লেশনের (মুদ্রাস্ফীতি) সাথে সাথে একটা পারসেন্ট হারে বেতন বাড়বে। প্রতি বছরের হিসাব মতে ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু ইনফ্লেশন কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গায় আবার কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায় সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। কমিশন করো, এটা করো, সেটা করো, এতে খুব বেশি লাভ হয় না। কিছু লোক বঞ্চিত হয়ে যায়, আর কিছু লোক লাভবান হয়। এজন্য প্রতি বছরের হিসাব মতো ইনফ্লেশন যত বাড়বে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা বেতন বাড়াব। তাছাড়া অনেক সুযোগও দিয়েছি। বৈশাখী ভাতা থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট কেনার লোন, গাড়ি কেনার লোনসহ অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বেতন যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সেটা কিন্তু সবার জন্যই। তাই আমাদের মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। যেহেতু ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে, তাই ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন যেন বাড়তে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

নবীন কর্মকর্তাদের আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ বছর ধরে সরকার পরিচালিত দেশের অব্যাহত উন্নয়নের ধারা কোনোভাবেই যাতে ব্যাহত না হয় সেই লক্ষে দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ক্যাডারের নতুন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনাদের (বিসিএস কর্মকর্তাদের) আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। কারণ, গত ১৪ বছর ধরে আমরা দেশের যে উন্নয়ন করেছি, তা কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১২৭তম, ১২৮তম ও ১২৯তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সার্টিফিকেট প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নবীন অফিসারদের ১৪ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থা কল্পনা করতে বলেন। তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন, শিক্ষা ও ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার এবং অন্যান্য খাতে বাংলাদেশ কি পরিবর্তিত হয়নি? বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন কর্মকর্তাদের দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময়ে দেশে ৯ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল এবং দেশ স্থিতিশীলতার সাথে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। শেখ হাসিনা আরো বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি আবারও দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত একটি দেশে পরিণত করতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষে এই কাজ আরো তরান্বিত করতে নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ২১ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারিরা সর্বদা জনগণের সেবা করতে বাধ্য। তাই, আমি চাই, আপনারা (নতুন কর্মকর্তারা) জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করুন। তিনি বলেন, তিনি তাঁর পিতার (বঙ্গবন্ধুর) পদচিহ্ন অনুসরণ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজেকে কখনই প্রধানমন্ত্রী ভাবি না। আমি নিজেকে জনগণের সেবক মনে করি। তাদেও সেবা করাই আমার একমাত্র দায়িত্ব। তিনি নতুন কর্মকর্তাদের তৃণমূলে গিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী- জয় বাংলা (১২৭তম), রঙিন বাংলাদেশ (১২৮তম) ও গর্বিত বাংলাদেশ (১২৯তম) শীর্ষক তিনটি স্মারক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) তত্ত্ববাবধানে সম্পন্ন একটি গবেষণাপত্রের মোড়ক উন্মোচণ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মমিনুর রশিদ আমিন। এ সময় বিসিএস প্রশাসন একাডেমির ওপর একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। শেখ হাসিনা বিসিএস কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে বলেন, যাতে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পেতে পারে ও সামাজিক হুমকি থেকে দূরে থাকতে পারে। তিনি বলেন, মানুষ যাতে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে পারে তা নিশ্চিত করুন। কারণ, এসব হুমকি সমাজ ও পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। আপনাদের এ বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখা উচিত। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই, তিনি অপচয়ও বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে কঠোরতা বজায় রাখতে হবে। আমাদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে-যাতে করে আমরা আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারি। নতুন কর্মকর্তাদের ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এই কর্মকর্তাগণ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নেবেন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৪ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সরকার দেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা ২৯ বছর (১৯৭৫-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৮) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি কর্মকর্তাদের তাদের সকল স্তরের কাজে সততা বজায় রাখতে এবং দেশ ও জনগণকে ভালোবাসতে বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সব সময় সততা, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার সাথে চলতে হবে। আপনাদের দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের ভুলে গেলে চলবে না যে- তাদের বেতন-ভাতা আসে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক ও গণমানুষের পকেট থেকে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব বেতন-ভাতা আসে সেই টাকা থেকে, যা দেশের জনগণের কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়। তাই, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সকলের কর্তব্য। এই বিষয়টি আপনাদের সর্বদা মাথায় রাখতে হবে। তিনি নবীন অফিসারদের বলেন, মানুষের সেবা করা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ হওয়া উচিত। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু যে কতটা সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন- তা জানতে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ১৯৪৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর লেখা বইয়ের ভলিউম পড়ার জন্য নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি পড়ারও আহ্বান জানান। দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন করা। জনগণকে উন্নত জীবন দেয়ার উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর দেয়ার জন্য আশ্রায়ণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে আবাসন প্রকল্প ও টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করা এবং চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে দুস্থ মানুষকে সর্বাত্মক সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে করেন, যাতে করে বাংলাদেশে কোন খাদ্য সংকট দেখা দিতে না পারে।

জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

সম্প্রতি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর লিখিত ভাষণে বলেন, তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাংক প্রধানসহ সকলেই তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করতে তার সরকারের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। লিখিত বক্তৃতার শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে আমরা যথেষ্ঠ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। আমি নিজে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি, নানা নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৭০৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিলাম। আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুনবার্সন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর পর তিনি তিন দেশ সফর নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে ২০২৩ পর্যন্ত আমি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করি। ৯ মে দেশে ফিরে আসি।
জাপান সফর: জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদা’র আমন্ত্রণে আমি ২৫ এপ্রিল ২০২৩ জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছাই। ২৬ এপ্রিল সকালে আমি জাপানের মহামহিম স¤্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। মহামহিম স¤্রাট আমাকে স্বাগত জানান এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীরতর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ঐ দিন সন্ধ্যায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী আমাকে গার্ড অব অনার দিয়ে নিজ কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানান। এরপর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মাননীয় কৃষি মন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। আমার এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশিদারিত্বে’ উন্নীত হয়েছে। এই বৈঠকে দু‘দেশের মধ্যে দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদন, বিগ-বি প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদারকরণ, অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, জাপান ওভারসীজ কোঅপারেশন ভলান্টিয়ার প্রকল্প পুনরায় চালু করা, বাণিজ্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানি বিনিয়োগ, মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, ঢাকা-টোকিও সরাসরি বিমান চলাচল ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। জাপান সরকার বাংলাদেশকে ৩০ বিলিয়ন ইয়েন বাজেট সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে। বৈঠকে আমি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এবং দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য জাপানের সহযোগিতা চাই। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের এই সূচনালগ্নে উভয় দেশের মধ্যে কৃষি, মেট্রোরেল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল আপগ্রেডেশন, শিপ রিসাইক্লিং, কাস্টমস ম্যাটারস, ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি, ডিফেন্স কোঅপারেশন, আইসিটি এবং সাইবার সিকিউরিটি কো-অপারেশন ইত্যাদি খাতে মোট ৮টি চুক্তি ও সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়াও, আমি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রূপরেখার উপর একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করি। পরে আমার সম্মানে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেই। দু’দেশের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক ছাড়াও কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, জাইকার প্রেসিডেন্ট, জেটরোর চেয়ারম্যান ও সিইও, জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল এ- ইকোনমিক কোঅপারেশন (জেবিসিসিইসি)-এর চেয়ারম্যান এবং জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লীগ (জেবিপিএফএল)-এর প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সহধর্মীনী, এবং জেবিক-এর প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ২৭ এপ্রিল টোকিও’র ওয়েস্টিন হোটেলে জাপানের খ্যাতনামা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের সিইও ও ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমি মিট-এন্ড-গ্রিট অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। এরপরে আমি একই হোটেলে আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে যোগ দেই। জাপান চেম্বার অব কমার্স এ- ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্ভাবনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। আমি বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্জিত অভূতপূর্ব উন্নয়নের বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের আহ্বান জানাই। এসময়ে দুই দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মধ্যে মোট এগারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরপর আমি জাপানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমার্জিং সায়েন্স এ- ইনোভেশন (মিরাইকান মিউজিয়াম) পরিদর্শন করি। বিকেলে জাপানের খ্যাতনামা স্থপতি তাদাও আনদো আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময়ে স্থপতি তাদাও আনদো আর্কিটেক্ট এ- এসোসিয়েটস এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে ঢাকায় একটি চিলড্রেনস লাইব্রেরি স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ঐদিন বিকেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্যে আমি চারজন জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদানের জন্যে আকাসাকা প্যালেসে এক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন- আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিস্টার তাদাতেরু কোনোয়ে, প্রফেসর গিয়ালপো পেমা, রাজনীতিবিদ মিস্টার হিদিও তাকানো (মরণোত্তর) এবং ফটো সাংবাদিক মিস্টার তাইজো ইচিনোসে (মরণোত্তর)। ঐদিন বিকেলে আমি এনএইচকে এবং নিক্কেই সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার প্রদান করি। এরপর, টোকিওর ওয়েস্টিন হোটেলে আমি জাপান প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেই।
যুক্তরাষ্ট্র সফর: বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্বের ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসের আমন্ত্রণে আমি ২৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডি.সি-তে পৌঁছাই। যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথমদিনে ২৯ এপ্রিল অপরাহ্ণে আমার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজ্ ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ স্থাপন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং কোভিড-১৯ মহামারিকালেও বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রশংসা করেন। আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সব বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে অভিহিত করেন। আমি আইএমএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাংলাদেশে সরকারের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন উদ্যোগে আইএমএফ-এর সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। ১লা মে সকালে বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপর ?জবভষবপঃরড়হ ড়হ ৫০ ুবধৎং ড়ভ ইধহমষধফবংয-ডড়ৎষফ ইধহশ চধৎঃহবৎংযরঢ় শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে আমি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করি। আমি আমার বক্তব্যে ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞান-ভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার অভিযাত্রায় বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে দারিদ্র্য নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের সাফল্য অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য শিক্ষণীয়। ডেভিড মালপাস উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। আমি অনুষ্ঠানে বলেছি, বাংলাদেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ কখনই ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ঋণের ফাঁদে পড়েনি। ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের জন্ম হয়, তখন অনেক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রচেষ্টায় আমাদের জনগণ বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে কঠিন চ্যালেঞ্জকেও অতিক্রম করা সম্ভব। অনুষ্ঠানের শেষে আমি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসকে পদ্মা সেতুর একটি বাঁধাই করা ছবি উপহার দেই। আলোচনা অনুষ্ঠানটি শেষে আমার ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও কানেকটিভিটি, দুর্যাগ প্রস্তুতি এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২.২৫ বিলিয়ন কোটি মার্কিন ডলারের পাঁচটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চুক্তিসমূহে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিগুলো হলো-
১। রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল্ডিং প্রজেক্ট: এটি ৫০ কোটি (৫০০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প। এটি ‘ডেলটা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নে প্রথম বড় বিনিয়োগ প্রকল্প, যা অভ্যন্তরীণ বন্যার বিরুদ্ধে দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নয়নে সহায়তা করবে।
২। বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (বিইএসটি) প্রকল্প: ২৫ কোটি (২৫০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প।
৩। অ্যাকসেলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেকটিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া (এসিসিইএসএস) বাংলাদেশ ফেজ-১: ৭৫ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার (৭৫৩ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প।
৪। ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্রিন অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট (জিসিআরডি) প্রকল্প: এটি ৫০ কোটি (৫০০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প। দেশকে সবুজ ও জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নে সহায়তা করবে।
৫। সাসটেইনেবল মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ট্রান্সফরমেশন (এসএমএআরটি) প্রকল্প: ২৫ কোটি (২৫০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলারের প্রকল্প।
একই দিনে আমি ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্বের পাঁচ দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নগাঁথার উপর উপস্থাপিত একটি মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর উদ্বোধন করি। বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়। ২রা মে সকালে আমার সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে আমি “স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণে বিশ্বব্যাংককে পাশে থাকার আহ্বান জানাই। একই দিনে, টঝ-ইধহমষধফবংয ইঁংরহবংং ঈড়ঁহপরষ-এর ঊর্ধ্বতন নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার একটি একান্ত বৈঠক হয়। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে আমি মূলবক্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থিত ছিলাম। আমার বক্তব্যে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিবৃন্দের নিকট বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিনিয়োগবান্ধব উদ্যোগসমূহ ও প্রণোদনার কথা তুলে ধরি এবং দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের গুরুত্বের উপর বিশেষ জোর দেই। অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ও এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে আলোকপাত করেন। আমার সঙ্গে টঝ ঈযধসনবৎ ড়ভ ঈড়সসবৎপব- এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ্ সুজানে পি ক্লার্ক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া, সন্ধ্যায় “দি ইকোনমিস্ট” আমার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। ঐ দিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকবৃন্দ কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেই। সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি. সফর উন্নয়নের অভিযাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সুসংহত অংশীদারিত্বের প্রতিফলন।
যুক্তরাজ্য সফর: ব্রিটেনের মহামহিম রাজার পক্ষ থেকে তাঁর এবং রাণী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক ও অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণ এবং কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষ থেকে কমনওয়েলথ লিডার্স ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আমি ৪ থেকে ৮ মে যুক্তরাজ্য সফর করি। ৫ মে বিকেলে বাকিংহাম প্যালেসে মহামহিম রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রাণী ক্যামিলা’র অভ্যর্থনা অনুষ্ঠিত হয়। ৬ মে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবিতে রাজা এবং রাণীর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আমি অভ্যর্থনা এবং রাজ্যাভিষেক উভয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। মার্লবোরো হাউসে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ লিডার্স ইভেন্টে আমি মহামহিম রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। এ সময় আমি রাজা ও রাণীকে অভিনন্দন জানাই ও তাঁদের বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানাই। ৫ মে বিকেলে মার্লবোরো হাউসে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল আয়োজিত কমনওয়েলথ লিডার্স ইভেন্টে অংশগ্রহণ করি। একইদিন মার্লবোরো হাউসে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। আমি এশিয়ান ঐতিহ্যের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ঋষি সুনাককে অভিনন্দন জানাই। তিনি বাংলাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন জনগণকে সরকারি খরচে বাড়ি দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। আমি যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এছাড়াও, তিনি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। আমি রোহিঙ্গা বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া, আমি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানাই এবং তিনি তাতে ইতিবাচক সাড়া দেন। ৬ মে লন্ডনের আমার হোটেল স্যুইটে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান যে, জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ব্রিটেনের রাজার আগ্রহের কেন্দবিন্দু। এ দুই ক্ষেত্রে বাংলাদশের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ রাজার কাছে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। ইধহমষধফবংয-টক ঈষরসধঃব অপপড়ৎফ এবং আরধঃরড়হ চধৎঃহবৎংযরঢ় দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি জানান। যুক্তরাজ্য সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক ও রাণী জেতসুন পেমা আমার হোটেল স্যুইটে আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আমার ছোটবোন শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন। ৭ মে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আমাকে কমনওয়েলথের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি ডিজিটালাইজেশন, ই-গভর্ন্যান্স ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেন এবং এসব খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কমনওয়েলথের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে বিনিময়ের অনুরোধ জানান। এছাড়া, তিনি আগামী ঈঙচ-২৮-এর আগে কমনওয়েলথের পরিবেশমন্ত্রীদের একটি সম্মেলন আয়োজন করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান। একই দিনে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আমি ৭ মে লন্ডনের একটি স্থানীয় হোটেলে আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করি। এ সফরে আমি বিবিসিকেও একটি সাক্ষাৎকার দেই। আমার এ সফরের সময় বাংলাদেশ সরকার ও যুক্তরাজ্যের সরকারের মধ্যে আরধঃরড়হ ঞৎধফব ধহফ ওহাবংঃসবহঃ চধৎঃহবৎংযরঢ় বিষয়ে একটি ঔড়রহঃ ঈড়সসঁহরয়ঁল্ক স্বাক্ষরিত হয়। যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষে গরহরংঃবৎ ড়ভ ঝঃধঃব রহ ঃযব উবঢ়ধৎঃসবহঃ ভড়ৎ ইঁংরহবংং ধহফ ঞৎধফব খড়ৎফ উড়সরহরপ ঔড়যহংড়হ এবং আমার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সালমান এফ রহমান বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এ ঔড়রহঃ ঈড়সসঁহরয়ঁল্ক-তে স্বাক্ষর করেন। এ ঔড়রহঃ ঈড়সসঁহরয়ঁল্ক-তে এভিয়েশন খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা, অভিজ্ঞতা বিনিময়, এবং বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতকে দক্ষ, নিরাপদ ও টেকসই করার আগ্রহ ব্যক্ত করা হয়েছে। এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়াও, কমনওয়েলথ-এ বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় হবে বলে আমার বিশ্বাস।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category