নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাচাতো ভাই আসাদুল ইসলামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গর্ভধারণ করেন এক কিশোরী। ওই খবর সবাই জেনে যায়, কিন্তু তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান আসাদুল। এ ঘটনা নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকও হয়। চলে মিমাংসার চেষ্টা, কিন্তু এরই মধ্যে ছেলে সন্তান প্রসব করেন ওই নারী। সালিশ বৈঠক করেও সমাধান না হওয়ায় ভিকটিম ওই ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এর মাঝে কেটে গেছে এক যুগের বেশি সময়। ওই ছেলের বয়স এখন ১৫ বছর। এবার ডিএনএ টেস্ট প্রমাণিত হয় সন্তানের জৈবিক বাবা-মা সুলতানা ও আসাদুল ইসলাম। এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় আসাদুল যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত হয়ে ১২ বছর জেলে। এবার রংপুরের মিঠাপুকুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় ডিএনএ টেস্টে পরিচয় জেনে সন্তানের নামে অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার শর্তে ওই বাবার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহুরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ২১ মে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সুলতানা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার সন্তান স্বীকৃতি পেয়েছে এ জন্য আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এত বছর আমার সন্তান তার নানার তত্ত্বাবধানে ছিল। একটি মাদরাসায় পড়ালেখা করে। তার বয়স এখন ১৫ বছর। আমি চাই সন্তান বাবার পরিচয় নিয়ে সমাজে বেড়ে উঠুক। তিনি আরও বলেন, আমি হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলাম। আমার সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় পেয়েছি। আমার সন্তানের ভালো যাতে হয় সেটা চাই। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন জানান, রংপুরের মিঠাপুকুরে ধর্ষণের এক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামির সন্তানকে তার অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার বিষয়ে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। ওই ব্যক্তির নাম আসাদুল ইসলাম (৪২)। ধর্ষণের ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছিল। সে সময় ডিএনএ পরীক্ষায় ওই সন্তান তার বলে শনাক্ত হয়। এই অবস্থায় ছেলের নামে অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার শর্তে তাকে উচ্চ আদালত জামিন দিয়েছিলেন। আগামী ২১ মে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে আসামিকে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জানাতে বলা হয়েছে। এ সময় আসাদুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ভিকটিম, সন্তান ও তার নানাও উপস্থিত ছিলেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের দায়ে আসাদুল ইসলামকে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল রংপুরের একটি আদালত যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আসামি আসাদুল ইসলামের নিজের ও তার বাবার নামে অনেক জমি রয়েছে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আসাদুলের সম্পত্তির অর্ধেক লিখে দেওয়ার শর্তে হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজনকে আদালতের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আসাদুল বলেন, আদালত যে আদেশ দিয়েছে। তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আগে আমি বুঝতে পারিনি, আসলে বাবার পরিচয় না থাকলে কেমন লাগে। আদালতের আদেশ মেনে আগামী তারিখে সব জানাবো।