• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২২ অপরাহ্ন

দফায় দফায় দাম বাড়লেও সিস্টেম লসের নামে বিদ্যুৎ চুরি অব্যাহত

Reporter Name / ১০৩ Time View
Update : শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে দফায় দফায় বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের অসাধু চক্র সিস্টেম লসের নামে বিদ্যুৎ চুরি অব্যাহত রেখেছে। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট ৮৫ হাজার ৬০৭ মিলিয়ন ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা) বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে সিস্টেম লসের ৮ হাজার ৯১২ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎই লাপাত্তা। মূলত চুরি হওয়া বিদ্যুতকে সিস্টেম লস হিসাবে দেখানো হচ্ছে। গ্রাহকের কাছে প্রতি ইউনিট বিক্রয়ের গড় মূল্য ৭ টাকা ৬২ পয়সা ধরে অপচয় হওয়া বিদ্যুতের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬ হাজার ৭৯০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে প্রতিদিনই সিস্টেম লসে নষ্ট হচ্ছে ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ। তার সঙ্গে বেসরকারি অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দেয়া বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং চার্জ ও অন্যান্য ভর্তুকি যোগ করলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। যা দায় চাপছে গ্রাহকের ওপর। অথচ শুধু চুরি ঠেকাতে পারলেই বছরে অন্তত ২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব। ইতোমধ্যে দু’মাসের ব্যবধানে সরকার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম তিনবার বাড়িয়েছে। আর বিগত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১১ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৩ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সরকার একদিকে বসিয়ে রেখে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি বিল্ডিং চার্জ দিচ্ছে, অন্যদিকে সিস্টেম লসের নামে সারা দেশে বিদ্যুৎ চুরি অব্যাহত রয়েছে। আর ক্ষতি পোষাতে ঘন ঘন বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। সূত্র জানায়, বিগত ২০১১-১২ অর্থবছরে বিদ্যুতে সিস্টেম লস ছিল ১৪.৬১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে ১০.৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে সঞ্চালন লস ছিল ২.৮৯ শতাংশ। আগের বছরের ব্যবধানে সিস্টেম লস শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে এবং ২১ বছরের মধ্যে এটা সর্বনিম্ন। এই সময়ে শুধু ডেসকোর সিস্টেম লস ৫.৫৮ থেকে বেড়ে ৫.৬২ শতাংশ হয়েছে। বিতরণ সংস্থাগুলোর সিস্টেম লস যথাক্রমে নেসকোর ৯.৯২ শতাংশ, আরইবির ৯ শতাংশ, বিপিডিবির ৮.১০ শতাংশ, ওজোপাডিকোর ৭.৪৪ শতাংশ, ডিপিডিসির ৬.১৩ শতাংশ হলেও আগের বছরের তুলনায় কমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণে টেকনিক্যাল সিস্টেম লস ৬ শতাংশের মধ্যে থাকলে তাকে সহনীয় ধরা যায়। দীর্ঘ লাইন, কম ভোল্টেজে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ, বেশি রোধের মানহীন চিকন তার ও নিম্নমানের সরঞ্জামের কারণে সিস্টেম লস বাড়ে। তবে দেশের সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো অনেক দিন ধরেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলে জানিয়ে আসছে। সরকারও অঢেল বরাদ্দ দিচ্ছে। জাপান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলো থেকে প্রযুক্তি আনা হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী সাব-স্টেশন নির্মাণ, ট্রান্সফরমার স্থাপনসহ বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, অনলাইনে মিটার রিডিং গ্রহণ, প্রিপেইড মিটার স্থাপনসহ নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরও আশানুরূপ কমেনি সিস্টেম লস। সূত্র আরো জানায়, খোদ রাজধানীতে বিতরণ সংস্থাগুলোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রকাশ্যেই বিদ্যুৎ চুরির মহোৎসব চলছে। রাজধানীর ফুটপাতে থাকা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ অস্থায়ী দোকানে অবৈধ বৈদ্যুতিক বাতি জ¦লছে। পল্টন, গুলিস্তান, মিরপুরে প্রকাশ্যেই বিদ্যুতের লাইনে হুক লাগিয়ে বাতি জ¦ালানো হচ্ছে। তাছাড়া অলি-গলিতে সড়কের পাশে গড়ে ওঠা মাংসের দোকান, চায়ের দোকান, ফুচকা-চটপটির দোকানেও জ¦লছে মিটার ছাড়া বাতি। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা এলাকাভেদে বাতিপ্রতি দিনে ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। শুধু বিদ্যুৎ চুরিকে কেন্দ্র করে রাজধানীতেই দিনে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। কিন্তু সরকার কোনো টাকাই পাচ্ছে না। তাছাড়া দেশজুড়ে ব্যাটারি চার্জের জন্য যেসব স্টেশন গড়ে উঠেছে তার অধিকাংশেই বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগে চলছে। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এলাকার চিহ্নিত দালাল চক্র ইচ্ছামতো আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আয় করছে। ঠরণ অনেক এলাকায় কাগজে-কলমে থাকা চাহিদার চেয়ে প্রকৃত চাহিদার ব্যবধান অনেক বেড়ে যাওয়ায় প্রায়ই ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ভোল্টেজ ওঠানামা করছে। আবার মাস শেষে ভুতুড়ে বিলও আসছে। ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের মূল্যও রাজধানীর গ্রাহকদের বেশি দিতে হচ্ছে। চুরির ক্ষতি সামাল দিতে ভুতুড়ে বিল দিয়ে হয়রানি ও বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়ে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, উন্মুক্ত দরপত্র এড়িয়ে আইন করে ইচ্ছামতো ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্রয়, সঞ্চালন-বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে মোট ব্যয়ের ওপর ৫ শতাংশের কিছু বেশি মুনাফা পেতে পারে। কিন্তু কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ১৮ শতাংশ লাভও দেয়া হয়েছে। তার ওপরে চুরি হচ্ছে। কাগজে-কলমে সিস্টেম লস যা দেখানো হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তা আরো বেশি। বিদ্যুৎ কত ইউনিট বিক্রি হচ্ছে এবং কত টাকার বিল আদায় হচ্ছে তার সঠিক হিসাব নেই। সর্বত্র স্মার্ট মিটার রিডিং নেয়া হচ্ছে না। একেক সময় একেক বাড়ির মিটার রিডিং নিয়ে একটা গড়পড়তা হিসাব করে বিল দেয়া হচ্ছে। সিস্টেম লস কম দেখাতে ভোক্তাদের বিল বাড়িয়ে গোঁজামিল দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে এসবের ঘানি টানতে হচ্ছে। ফলে ভোক্তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category