• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন

দেশে নকল ও ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্যে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

Reporter Name / ৩৩২ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশজুড়েই অবাধে বিক্রি হচ্ছে নকল ও ভেজাল ওষুধ। নানা উদ্যোগেও তা বন্ধ হচ্ছে না। বরং রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে নি¤œমানের ওষুধের ছড়াছড়ি। মূল কোম্পানীর ওষুধের মতো হুবহু লেবেলে নকল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। আর ওসব ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। ওসব ওষুধে রোগ সারার পরিবর্তে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। রোগীর লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, অস্থিমজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের যথাযথ নজরদারি না থাকার কারণেই দেশজুড়ে নকল ওষুধ বিক্রির রমরমা ব্যবসা চলছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ওষুধ খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ওষুধের বাজারে আসল নকল বোঝা মুশকিল। ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। আর তাদের সহায়তা করছে কিছু অসাধু চিকিৎসক। তারা কমিশনের বিনিময়ে ওসব ভেজাল ওষুধ প্রেসক্রিপশনে দেদারছে লিখছে। ওষুধ ভেজালকারীদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুনাফা। আর অতিরিক্ত লাভের আশায় ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ খাইয়ে তারা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফার্মেসী মালিকরাও মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার লোভে বহুল ব্যবহৃত নামসর্বস্ব ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে অধিক মুনাফা করছে। মূলত তদারকির অভাবেই নিম্নমানের ওষুধ দেদার বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশি উৎপাদিত ওষুধের সুনাম ও চাহিদা বাড়লেও দেশের চিত্র উল্টো। ওষুধ শিল্পে দেশ অভাবনীয় উন্নতি করলেও ভেজাল ওষুধে দেশের বাজারে সয়লাব। ওষুধের মান নিয়ে তাই প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ভেজাল, নকল ও নি¤œমানের ওষুধ সেবন করে রোগীরা আরো জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় ওসব ওষুধ সেবনে রোগী মারাও যাচ্ছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালালেও ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। অথচ ওষুধ এমন এক পণ্য, যার সঙ্গে জীবন-মৃত্যু জড়িয়ে থাকে। কিন্তু দেশে অ্যালোপ্যাথিক থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক সব ওষুধেই ভেজাল মিলছে। আর ওসব ওষুধ খেয়ে কিডনি বিকল, বিকলাঙ্গতা, লিভার, মস্তিষ্কের জটিল রোগসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি রোগী আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ দেশে নিম্নমানের ওষুধ খেয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিকার পাওয়ার সুনির্দিষ্ট আইনও নেই। তাছাড়া ওষুধ খাতের দুর্নীতি, চিকিৎসকদের কমিশনের লোভ, আইন প্রয়োগের শৈথিল্য, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, দুর্বল বিচার ব্যবস্থা, প্রযুক্তিগত অসমর্থতা, দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে ভেজাল ওষুধের বিস্তার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে ২৪১টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ বানাচ্ছে। যে কোনো ওষুধ বাজারজাত করার আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে বাজারজাত করতে হয়। কিন্তু একবার বাজারজাত করার পর ওই ওষুধের গুণগত মান নিয়ে আর কোনো তদারকি হয় না। ওই সুযোগে অনেক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ওষুধের মান কমিয়ে দেয়। আর সরকারের মাত্র ৪ হাজার ওষুধ পরীক্ষা করে দেখার সামর্থ্য আছে। ফলে বিপুল পরিমাণ ভেজাল, নকল বা নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিএইচও) তথ্যানুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে যে ওষুধ বিক্রি হয় তার শতকরা ১৫ ভাগ ওষুধ নিম্নমানের, ভেজাল বা নকল।
এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজাল, নকল ও নি¤œমানের ওষুধে রোগীর লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ও অস্থিমজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন ভয়াবহ অপরাধ। তাতে রোগ তো সারেই না, উল্টো আরো জটিলতা বাড়ে। ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িতরা গণহত্যার মতো অপরাধ করছে। আর না জেনে ওষুধ খেয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছে। রোগ সারানোর জন্য ওষুধ খাওয়া হলেও এদেশে ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধই হয়ে উঠেছে রোগের কারণ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে ভেজাল ওষুধ। কারখানা বানিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক ফার্মেসি মালিক জেনেশুনেই রোগীর হাতে তুলে দিচ্ছে ভেজাল ওষুধ। দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে নকল-ভেজাল ওষুধের কারবার। বিভিন্ন বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অতীতে এমন অনেক ভেজালকারী ও বিক্রেতা ধরা পড়েছে। চক্রটি দীর্ঘদিন আয়ুবের্দিক ওষুধ তৈরির ভুয়া লাইসেন্সে রীতিমতো কারখানা বানিয়ে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের মোড়কে ভেজাল ওষুধ বানাচ্ছে। ওষুধ তৈরির নিরাপদ স্থান হিসেবে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার, ডেমরাসহ পুরান ঢাকার কিছু এলাকাকে বেছে নিয়েছে।
অন্যদিকে ভেজাল ও নকল ওষুধের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারীদের মতে, নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনে ঢাকাসহ সারা দেশে একাধিক চক্র সক্রিয়। গত কয়েক বছরে মিটফোর্ডের বাজার থেকেই কয়েকশ’ কোটি মূল্যের ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। নকল ওষুধ উৎপাদনকারীরা বিভিন্ন এলাকায় কারখানা বানায়। তবে তাদের পাইকারি বাজার মিটফোর্ড। সেখান থেকেই ভেজাল ওষুধ সারা দেশে ছড়ায়। অভিযানে জব্দ করা ওষুধের মধ্যে বেশিরভাগ হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন বিহীন ভেজাল ওষুধ। জনগণকে অবশ্যই ইনভয়েস নম্বর দেখে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হবে। ইনভয়েস নম্বর হলো ওষুধের সার্টিফিকেট। যে কোম্পানি থেকে ওষুধ ক্রয় করা হয় ওই কোম্পানির ইনভয়েস ওষুধ ফার্মেসিকে সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে ফার্মেসিগুলো চাপের মুখে থাকবে। তাতে নকল ওষুধের চাহিদা তারা দেবে না।
এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান জানান, ওষুধের মান, দাম, কোম্পানি ও ফার্মেসি নিয়ন্ত্রণে নজরদারি ও অভিযান চলছে। যে সব এলাকায় ভেজাল ওষুধ তৈরি হচ্ছে সেখানে অভিযান বাড়ানো হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category