• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
উপজেলা ভোটে দুর্গম এলাকা ছাড়া সব কেন্দ্রে ব্যালট যাবে সকালে থাইল্যান্ড সফর দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পক উন্নয়নে এক মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আ. লীগের মূল লক্ষ্য: কাদের সংসদ অধবিশেন চলবে ৯ মে র্পযন্ত মাদ্রাসার সভাপতি হতে স্বাক্ষর জালিয়াতি, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বান্দরবানে কেএনএফের আরো ১ নারী আটক: রিমান্ড ফেরত ১৪ জন আসামি কারাগারে অফিস সময়ে চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাইরে গেলে ব্যবস্থা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৪৬ কিলোমিটার বাড়ছে ঢাকা আউটার রিং রোডের দৈর্ঘ্য, ব্যয় বাড়ছে তিনগুণ বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে: শিক্ষামন্ত্রী জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির

নম্বর প্লেট বদলে চুরি করা ট্রাক নিয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৫

Reporter Name / ৩৭৩ Time View
Update : সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ট্রাক চুরির পর সেই ট্রাক নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। প্রতিটি ডাকাতির সময় তাদের ট্রাকের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করতো। গত রোববার এই ডাকাতদলের প্রধানসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ডাকাতদলের সদস্যরা বিদেশি পিস্তল ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মার্কেট, অফিস ও বাসা-বাড়িতে থাকা নৈশপ্রহরীদের হাত পা ও মুখ বেঁধে মার্কেটে দাকাতি করতো। গত ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার দূর্গাহাটা বাজারে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদল ট্রাক নিয়ে এসে তিনটি মার্কেটে ডাকাতি করে। তারা মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেটে অস্ত্রের মুখে নৈশপ্রহরীদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে তালা কেটে ৯টি দোকানে দুর্র্ধষ ডাকাতি করে। সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি স্বর্ণালঙ্কার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড়, মোবাইলসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ লুট করে। এই কর্মকর্তা বলেন, সেই নম্বর প্লেটের সূত্র থেকেই অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের প্রধানসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-দলনেতা মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৫), মো. আবদুল হালিম মিয়া জুয়েল (২৮), আলী হোসেন (৫৬), মো. সুমন মুন্সি (২০) ও মো. হুমায়ুন কবির (৩৫)। অভিযানে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি ম্যাগাজিনসহ পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি বোল্ট কাটার, দুটি রাম দা, তিনটি শাবল, দুটি ছুরি, একটি কাঁচি, ১০টি লাঠি, একটি হাতুড়ি, একটি টর্চ লাইট ও একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত মালামালের মধ্যে স্বর্ণের ৩টি রুলির বালা, ৩টি নাকফুল, ১৫টি রুপার নূপুর, দুটি পিতলের বেঙ্গল চুড়ি, ইমিটেশনের ৩টি গলার হার, ৪টি গলার চেইন, ৩ জোড়া কানের দুল, ১টি বড় আংটি, ১টি ছোট আংটি ও ৩ জোড়া হাতের চুড়ি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠনকৃত বিপুল পরিমাণ বস্ত্র (৬২ পিস থ্রিপিস, ১৪১ পিস শাড়ি, ৮৫ পিস গেঞ্জি, ৯ সেট প্যান্টের পিস, ৫টি ধুতি কাপড়, ১০টি ট্রাউজার ও ১০টি ব্যাগ) উদ্ধার করা হয়। খন্দকার আল মঈন বলেন, বগুড়ায় ডাকাতির ঘটনায় দোকানের মালিকদের পক্ষ থেকে ঘটনার পরদিন গাবতলী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা করা হয়। দুর্র্ধষ ও সুপরিকল্পিত ডাকাতির ঘটনাটি এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জনগণের মধ্যে ব্যাপক ভীতি ও ত্রাসের সৃষ্টি করে। পরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্ত, সিসিটিভি ফুটেজ ও নৈশপ্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই সংঘবদ্ধ ডাকাতদলকে শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি, চুরিসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে জড়িত এবং সংঘবদ্ধ এই দলটি বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলায় নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে। স্থানীয় তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই সংঘবদ্ধ ডাকাতদলকে গ্রেপ্তারে র‌্যাব ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার রাতে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১২ আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, বিভিন্ন পেশার আড়ালে তারা ডাকাতি করতো। ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। তাদের স্থায়ী নিবাস বিভিন্ন জেলায় হলেও তারা সাভার ও এর আশপাশের এলাকায় বসবাস করে এবং এই সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্য সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ জন। সংঘবদ্ধ দলটি ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ডাকাতি করে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র, তালা ও গ্রিল কাটার বিভিন্ন যন্ত্র তারা ট্রাকের সামনের কেবিনে চালকের আসনের নিচে লুকিয়ে রাখতো। তারা বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও মার্কেটের দোকান, শো-রুম, জুয়েলারি শপে ডাকাতি করতো। ইতোপূর্বে তারা ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কালামপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিংগাইর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছে। এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতদলের সরদার দেলোয়ারের নির্দেশে তার দলের দুজন সহযোগী গ্রেপ্তার হালিম ও সুমন গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর দুর্গাহাটা বাজারে যায়। এ সময় তারা মূল্যবান সামগ্রীসহ দোকান, নৈশপ্রহরীর সংখ্যা ও অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শেষে দেলোয়ার ও কবির ডাকাতির বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। দেলোয়ার ও কবির ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের একত্র করে ও পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাত দলের ৯ জন ঘটনার আগের দিন বিকেলে সাভারের নবীনগরে একত্র হয়ে বগুড়ার গাবতলীর উদ্দেশ্যে ট্রাকে করে যাত্রা করে। যাত্রাপথে আরও কয়েকজন সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক মোট ১২ জনের এই ডাকাতদলটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গাবতলীর দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির কাজ সম্পন্ন করে। ডাকাতদের একটি দল বাজারে পাহারারত তিনজন নৈশপ্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় অপর দলটি আগে থেকে রেকি করা তিনটি মার্কেটের নয়টি দোকানের তালা ভেঙে দোকানের ভেতর রক্ষিত মূল্যবান সামগ্রী লুট করে। ডাকাতি করে সাভারের নবীনগরে আসার সময় লুণ্ঠনকৃত মালামালের মধ্যে গার্মেন্টসের কাপড়ের আইটেমগুলো একটি মার্কেটে বিক্রি করে। ডাকাতির টিভি, মোবাইল ও অর্থ তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। এছাড়াও বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার তারা ঘটনার পরদিন অন্য দুটি মার্কেটের জুয়েলারির দোকানো বিক্রি করে। গ্রেপ্তার দেলোয়ার হোসেন এই ডাকাত দলের সরদার। জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ার স্বীকার করে যে গত ৬ থেকে ৭ বছর ধরে সে ডাকাতি করছে। ডাকাতির আগে সে তার দলের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ও পরিকল্পনা মোতাবেক বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে। ইতোপূর্বেও তারা মানিকগঞ্জ, কালামপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিংগাইর, ঢাকা ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছে। তার নামে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় চারটি ডাকাতিসহ চুরি ও মাদকের মামলা রয়েছে। ডাকাত দল ও লুণ্ঠনকৃত মালামাল পরিবহণে গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবির একটি ট্রাক সরবরাহ করে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। জিজ্ঞাসাবাদে কবির স্বীকার করে, ডাকাতির কাজে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই সে এই ট্রাকটি চুরি করে ও আগেও এই ট্রাক দিয়ে তারা ডাকাতি করেছে। তার নামে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানায় ডাকাতির একটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আলী হোসেন, আবদুল হালিম ও সুমন মুন্সি দূর্গাহাটা বাজারে সংগঠিত ডাকাতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ডাকাতিকালে বিভিন্ন দোকানের তালা ভাঙ্গা, মালামাল বস্তায় লোড ও সর্বশেষ ট্রাক লোডের কাজে সহায়তা করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ডাকাতদলের সরদার দেলোয়ারের নেতৃত্বে আগেও তারা একাধিক স্থানে ডাকাতি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি ও চুরির একাধিক মামলা রয়েছে। আন্তঃজেলা ডাকাত দলের পলাতক অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠনকৃত অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতিটি ডাকাতির সময় তাদের ট্রাকের নাম্বার প্লেট পরিবর্তন করতো। সে নাম্বার প্লেটের খোঁজ থেকেই তাদের খোঁজ মেলে। ট্রাকের চালককে ফুটেজ দেখালে সে হালিমকে শনাক্ত করে। কারণ চালক হালিম ২৬ ও ২৭ অক্টোবর এই দুদিন তারা ওই এলাকায় ছিল। দেলেওয়ার কাছ থেকেই আমরা জানতে পারি ডাকাতির ঘটনায় ১২ জন ছিল। এছাড়াও নৈশপ্রহরী জানায়, ডাকাতির কাজে ১২ জন ছিল। তারা দুটি গ্রুপে বিভাক্ত ছিল। একটি গ্রুপ নৈশপ্রহরীর হাত পা-বাঁধে বাকিরা তালা ভাঙে। আমরা পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি, বাকিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অবাহত রয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, তারা পেশাদার ডাকাত। তারা বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে আসছিল। এছাড়াও তারা বিভিন্ন ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তারও ছিল। জামিন নিয়ে বের হয়ে আবারও ডাকাতির কাজে জড়িত হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category