• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, চালকসহ আহত ৪ উপজেলা ভোটে দুর্গম এলাকা ছাড়া সব কেন্দ্রে ব্যালট যাবে সকালে থাইল্যান্ড সফর দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পক উন্নয়নে এক মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আ. লীগের মূল লক্ষ্য: কাদের সংসদ অধবিশেন চলবে ৯ মে র্পযন্ত মাদ্রাসার সভাপতি হতে স্বাক্ষর জালিয়াতি, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বান্দরবানে কেএনএফের আরো ১ নারী আটক: রিমান্ড ফেরত ১৪ জন আসামি কারাগারে অফিস সময়ে চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাইরে গেলে ব্যবস্থা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৪৬ কিলোমিটার বাড়ছে ঢাকা আউটার রিং রোডের দৈর্ঘ্য, ব্যয় বাড়ছে তিনগুণ বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে: শিক্ষামন্ত্রী

বাড়ছে গরমজনিত অসুস্থতা, হাসপাতালে রোগীদের চাপ

Reporter Name / ২০ Time View
Update : শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে রয়েছে লোডশেডিংয়ের সমস্যা। তীব্র গরমজনিত কারণে অসুস্থ রোগীর চাপ বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে। এবার এপ্রিলের শুরু থেকেই তীব্র গরম পড়ছে দেশজুড়ে। ঈদের পর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই আসছে হিট স্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া নিয়ে। এসব রোগে সবচেয়ে বেশি কাবু হচ্ছে শিশুরা। এদিকে গরমে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে গিয়ে। রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত বেড না থাকার পাশাপাশি গরম কমাতে প্রয়োজনীয় ফ্যান বা এসির ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসা নিতে এসেও হাসপাতালে আরেক দফা গরমের সম্মুখীন হতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। বেড ছাড়িয়ে মেঝেতেও আসন পেতে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুরা। জরুরি বিভাগ ও আউটডোরের মেডিসিন বিভাগে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি ও মেঝেতে থাকা প্রায় সবাই হাতপাখা কিংবা ছোট টেবিল ফ্যান কিনে ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) বা কলেরা হাসপাতালে দেখা যায়, ঈদের পর থেকে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালগুলোতে। যার বেশিরভাগই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগী। আইসিডিডিআর,বিতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় বেড়েছে রোগীদের। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সাধারণ সময়ে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিনশ রোগী আসে। বর্তমানে তা বেড়ে পাঁচ থেকে ছয়শর বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। আইসিডিডিআর,বির চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। অনিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণের কারণে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান (কামরুল) বলেন, গরম বেশি পড়লে সাধারণত ডায়রিয়া, জন্ডিস, পানিবাহিত রোগ, হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়। এসময়ে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া উচিত না। এছাড়া বাইরে থেকেই এসেই এসি ছেড়ে দেওয়া, ঠান্ডা পানি খাওয়া, রাস্তার ধারের শরবত পান থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাস্থ্য সচেতন না থাকা এসব রোগের প্রধান কারণ। একদিকে হঠাৎ গরম শুরু হয়, অন্যদিকে এসময়ে জীবাণুযুক্ত পানি পান, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস ও শিশুদের নিরাপদে না রাখা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া গরমে অনেকের মাঝে পানিশূন্যতাও তৈরি হয়ে থাকে। এজন্য প্রয়োজন গরমে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করা, ফলমূলের শরবত পান, পচা-বাসি ও বাইরের খাবার না খাওয়া এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা। গরমের সময়ে ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগ থেকে কীভাবে সুরক্ষিত থাকা যায়, এ নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডায়রিয়া থেকে সুরক্ষিত থাকতে প্রথমত পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। পানি ফোটানোর সময় বলক ওঠার পর আরও পাঁচ মিনিট চুলায় রাখুন এবং ঠান্ডা করে পান করুন। ফোটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করা যেতে পারে। আমরা সাধারণত রাস্তার পাশের বা উন্মুক্ত স্থানের খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু মুখরোচক এসব খাবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুব অস্বাস্থ্যকর। যা সুস্থ মানুষকেও অসুস্থ করে দিতে পারে। এসব খাবার ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া প্রতিবার খাবার আগে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। পায়খানার পর অথবা শিশুর পায়খানা পরিষ্কার করার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। ফিডারে শিশুকে কিছুই খাওয়ানো যাবে না। যদি খাওয়াতেই হয়, তবে ফোটানো পানি ও সাবান দিয়ে ভালো করে ফিডারটি ধুয়ে নিতে হবে। ফিডারের নিপল-এর ছিদ্রটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। চিকিৎসকরা জানান, কারও ডায়রিয়া হলে ১ প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। ১০ বছরের বেশি বয়সীদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর ১ গ্লাস বা ২৫০ মিলিলিটার খাবার স্যালাইন খেতে হবে। শিশুদের ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে আনুমানিক সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শিশু বমি করলে ধীরে ধীরে যেমন- ৩ বা ৪ মিনিট পর পর ১ চা-চামচ করে খেতে দিতে হবে। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খেতে দিতে হবে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো কোনো অবস্থাতেই বন্ধ করা যাবে না। ছয় মাসের বেশি বয়সী রোগী খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাবেন। রোগীকে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার যেমন- ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। এছাড়া রোগীকে সাধ্যমত কোমল পানীয়, ফলের জুস, আঙুর, বেদানা খাওয়াতে হবে। ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে প্রতিদিন একটি করে জিংক ট্যাবলেট পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। তারপরও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে বা বেশি খারাপ হলে দ্রুত কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে। চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে হবে। এদিকে প্রচ- গরমে কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে উঠেছে। একটুতেই শরীর ঘেমে ভিজে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত ঘাম ও তীব্র রোদে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। হিট স্ট্রোক হচ্ছে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার ফলে তৈরি হওয়া এক ধরনের জটিলতা। গরমে অতিরিক্ত ঘামলে মানুষের শরীর ডিহাইড্রেড হয়ে পড়ে। এর ফলে ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোক, কলেরা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, পেটের সমস্যা, সর্দি-জ্বর, হাঁপানি, গ্যাসের সমস্যা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ত্বকে সমস্যাসহ নানান ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বাদের এ ঝুঁকি বেশি। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কিছু বেশি। এটি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি হলেই হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ সমস্যায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমে শিশুদের ডায়রিয়াসহ ঠান্ডা-জ্বর, নিউমোনিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের রোগী অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। গরমকাল আসলে মা-বাবাদের একটু সচেতনভাবে শিশুদের পরিচর্যা করতে হবে। রোদে বের হতে দেওয়া যাবে না। এসময় শিশুদের ফলের শরবত, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, গ্লুকোজ এবং পুষ্টিকর রসালো ফল বেশি করে খেতে হবে। এতে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে বের হওয়া পানির চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়া বিশুদ্ধ ও ফোটানো পানি পান করতে হবে। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর বা পচাবাসী খাবার খাওয়া যাবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category