• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:৫৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
উপজেলা ভোটে দুর্গম এলাকা ছাড়া সব কেন্দ্রে ব্যালট যাবে সকালে থাইল্যান্ড সফর দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পক উন্নয়নে এক মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী মেহনতি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নই আ. লীগের মূল লক্ষ্য: কাদের সংসদ অধবিশেন চলবে ৯ মে র্পযন্ত মাদ্রাসার সভাপতি হতে স্বাক্ষর জালিয়াতি, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বান্দরবানে কেএনএফের আরো ১ নারী আটক: রিমান্ড ফেরত ১৪ জন আসামি কারাগারে অফিস সময়ে চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাইরে গেলে ব্যবস্থা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৪৬ কিলোমিটার বাড়ছে ঢাকা আউটার রিং রোডের দৈর্ঘ্য, ব্যয় বাড়ছে তিনগুণ বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে: শিক্ষামন্ত্রী জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির

মহামারীতে ধর্ষণ-নারী নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে

Reporter Name / ২৪২ Time View
Update : বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি তথ্যে বিগত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন এবং রাহাজানির সংখ্যা বেড়েছে। তবে দেশে অন্যান্য মামলার সংখ্যা কমেছে। গত অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থবছরে এ-সংক্রান্ত মামলা বেশি হয়েছে। এ সময়ে মামলার পরিমাণ কমেছে ৯১ হাজারের বেশি। অন্যদিকে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ২৩.৫৭ শতাংশ।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের ২০২০-২১ অর্থবছরের কার‌্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পাদিত কার‌্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরে মোট মামলার সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার। চলতি অর্থবছরের শেষে এসে দেখা যায়, ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬২টি মামলা হয়েছে। মামলা কমেছে প্রায় ৯১ হাজার। এ ছাড়া গত অর্থবছরে ডাকাতির মামলা ছিল ৩৩৬টি, এ বছরে ৩২১টি, কমেছে ১৫টি। রাহাজানির মামলা ছিল ৯১৯টি, এ বছরে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৮টি। অস্ত্র আইনে মামলা ছিল ২ হাজার ১৬৭টি, এ বছর ১ হাজার ৭৪৭টি। খুনের মামলা ছিল ৩ হাজার ৪৮৫টি, এ বছরে ৩ হাজার ৪৫৮টি।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনে রয়েছে বিশ্বের বহু দেশ। এ সময় ঘরের ভেতর যারা পারিবারিক ও যৌন নির্যাতনের মুখে পড়ছেন তারা এই মহামারির নীরব শিকার বলে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে।
বিভিন্ন সংগঠন বলছে সাধারণ সময়ে এসব নির্যাতন থেকে বাঁচতে যারা বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা পেতেন বা সাহায্য নিতেন সেরকম নারীদের জন্য এখন একটা কঠিন সময়। কারণ লকডাউনের কারণে তারা না যেতে পারছেন বাইরে বা বাইরে থেকে তাদের সাহায্য করতেও এসব সংস্থাগুলো পারছে না, কারণ সব জায়গায় সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রিটেনে নির্যাতনের ঘটনা রিপোর্ট করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে যে হটলাইনের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে গত সপ্তাহান্তে ৬৫ শতাংশ বেশি টেলিফোন কল এসেছে বলে সরকার জানিয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোতে ছোট ঘরের মধ্যে যারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাদের পক্ষে এসব অত্যাচার নির্যাতনের কথা বাইরে জানানোর সুযোগ এখন খুবই সীমিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলনের মুখে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধনী এনে অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। মৃত্যুদ- হলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে কি না -এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে।
বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ধর্ষণের মামলা বছরের পর ঝুলে থাকার অভিযোগ আবারও সামনে এসেছে। কিন্তু আইনে যা আছে, তদন্ত এবং বিচার যেভাবে হয়- এই প্রক্রিয়াগুলোতে গলদ কী আছে বা সমস্যাগুলো কোথায়-এ সব প্রশ্ন এখন আলোচনায় এসেছে।
ধর্ষণের ঘটনায় এতদিন একমাত্র শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদ-। এখন করা হলো মৃত্যুদ- অথবা যাবজ্জীবন সাজা। সর্বোচ্চ এই শাস্তি ধর্ষণ এবং সার্বিকভাবে নারী নির্যাতন বন্ধে কতটা সহায়ক হবে-এ নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তারা বলেছেন, একজন নারী যখন ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন, তখন তার মামলা করা থেকে শুরু করে তদন্ত এবং বিচার-প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই নারীকে সন্দেহ বা অবিশ্বাস করা হয়। সেটাকে বিশেষজ্ঞরা বড় গলদ হিসাবে দেখেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল ২০০০সালে। বিশ বছরেও এই আইনের কোন বিধিমালা করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধ এবং বিচার সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব বিষয়ে ব্যাখ্যা বা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকে বিধিমালায়, যা আইনে থাকে না। সেজন্য প্রতিটি আইনের ক্ষেত্রেই বিধিমালা প্রয়োজন হয়। অনেক আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বিধিমালা তৈরির আদেশ এসেছিল উচ্চ আদালত থেকে। কিন্তু এখনও তা করা হয়নি। আইনজীবীরা বলেছেন, বিধিমালা না থাকায় ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মামলায় একেক বিচারক একেকভাবে বিচার করেন। সেটাকে তারা অন্যতম সমস্যা হিসাবে দেখেন। ধর্ষণ মামলার তদন্ত নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলেছেন, বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইবুনাল থাকলেও তদন্তের ব্যাপারে বিশেষায়িত কোন ব্যবস্থা নেই।
পুলিশ অন্য অনেক মামলার সাথে ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মামলা তদন্ত করে থাকে এবং সেজন্য লম্বা সময় লেগে যায়। তারা মনে করেন, দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণের অভাবে তদন্তে দুর্বলতার প্রভাব বিচারের ক্ষেত্রে পড়ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ীই ধর্ষণের ঘটনা ছাড়া নারী নির্যাতনের বেশিরভাগ মামলা হয় যৌতুক নিয়ে পরিবারে নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগে। এই অভিযোগের ক্ষেত্রে আপোষের মাধ্যমে মীমাংসার বিষয় আইনে যুক্ত করা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা এটিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন।
তবে এখন আইনে মৃত্যুদ-ের বিধান আনার পাশাপাশি আরেকটি বড় পরিবর্তন করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ধর্ষণের শিকার নারী এবং অভিযুক্তের ডিএনএ পরীক্ষা। এনিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
যদিও আইনে ছয় মাস বা ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার কথা বলা আছে। কিন্তু সেটা কাগজে কলমেই রয়ে গেছে বলে মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন।
তাদের অভিযোগ হচ্ছে, পুলিশী তদন্তে দিনের পর দিন সময় চলে যায়। অবশেষে তদন্ত শেষ হলে কোন মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তখন সরকার পক্ষের সাক্ষী হাজির করা নিয়ে চলে টালবাহানা। কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা নাই। ফলে ধর্ষণের শিকার একজন নারী এবং তার পরিবারকে দীর্ঘসূত্রিতার ভোগান্তিতে পড়তে হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category