• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১২ অপরাহ্ন

রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল

Reporter Name / ১৫৫ Time View
Update : শনিবার, ৬ মে, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতে এবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গেল বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় টেকনাফের নাফ নদের জেটি ঘাট হয়ে প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারের মংডু শহরের উদ্দেশ্যে টেকনাফ ত্যাগ করে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলে ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতার সঙ্গে বাংলাদেশ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের সাত কর্মকর্তা আছেন। ২৭ জনের প্রতিনিধি দলটির মিয়ানমারের রাখাইন এস্টেটের মংডু টাউনশিপের আইডিপি ক্যাম্পের পরিস্থিতি দেখার কথা আছে। ইউএনও আরও বলেন, মিয়ানমারে যাত্রা করা ২৭ সদস্যের মধ্যে তিন নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গা, একজন অনুবাদক ও ছয় জন বিভিন্ন দপ্তরের বাংলাদেশি কর্মকর্তা আছেন। নিরাপত্তার জন্য দুটি স্পিডবোটসহ বিজিবি ১৬ সদস্যও আছেন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র মতে, মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিম কর্তৃক সাক্ষাৎকার নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৪ থেকে দুজন, ২৬ থেকে চারজন, ২৭ থেকে ১৪ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমার গেছেন। তাদের সঙ্গে আরআরআরসি (যুগ্ম সচিব) মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মিলিয়ে সাতজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও আছেন। ২৭ জনের এ প্রতিনিধিদল মংডুর আইডিপি ক্যাম্পসহ ১৫টি গ্রামের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। দলটি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ‘রাখাইনের সার্বিক পরিস্থিতি কতোটুকু অনুকূলে’ আছে মূলত তাই দেখবে। এর আগে ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসে মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। তারা বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের দেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই-বাছাই করে। প্রতিনিধিদলটি টানা সাতদিন টেকনাফের স্থলবন্দর রেস্ট হাউজে অবস্থান করে বাংলাদেশে আশ্রিত ১৪৭ রোহিঙ্গা পরিবারের মোট ৪৮৬ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। আর তাদের দেওয়া বক্তব্য রেকর্ড করেন। ২২ মার্চ সকালে প্রতিনিধিদলটি নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়। ওই সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যাদের প্রত্যাবাসন করা হবে সেই সব রোহিঙ্গা যাতে আগে থেকে রাখাইনের সার্বিক পরিবেশ স্বচক্ষে দেখে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল গতকাল শুক্রবার রাখাইন যাচ্ছেন। আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিনিধিদলের হয়ে যেসব রোহিঙ্গা রাখাইনে যাচ্ছেন তারাই সেখানে মূলত মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। কারণ, রোহিঙ্গাদেরই মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে, তাই তাদের সরেজমিন অভিজ্ঞতা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলটি রাখাইনের পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল দেখে আশ্বস্ত হলে তা প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক হবে বলেও মন্তব্য করেন শরণার্থী কমিশনার। আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল। সে তালিকা যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার। এর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা ঢলের শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ সে সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এই হত্যা ও নির্যাতনকে চিহ্নিত করেছিল ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার চলতি বছরের মার্চে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো ওই হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ার পর থেকে কক্সবাজার ও উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ আর প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলার একপর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। এরপর আসে করোনাভাইরাস মহামারি, রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগে ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সঙ্কটের মধ্যেই গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সু চির দ্বিতীয় দফার সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। সামরিক জান্তা মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের কয়েক দিন আগে চীনের নেতৃত্ব প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসেছিল। তার চূড়ান্ত ফল আর পাওয়া যায়নি। ওই সময় বাংলাদেশ আশা করেছিল, ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে হয়ত প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে। সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকারে রাখা বাংলাদেশ সরকার বারবার অভিযোগ করে আসছে, আন্তর্জাতিক মহল প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের এক বছরের মাথায় গত বছরের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে নবগঠিত ‘অ্যাড-হক টাস্কফোর্স ফর ভেরিফিকেশন অব দ্য ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন’ এর বৈঠক হয়। এরপর গত বছরের ১৪ জুনে হয় দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) সভা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব চ্যান আয়ে বৈঠকে নিজ দেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category