• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমাচ্ছে জাতিসংঘ

Reporter Name / ১৩৮ Time View
Update : শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। আগামী মার্চ মাস থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ ১২ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের অধীনস্থ সংস্থাটি। সহায়তা কমানোর কারণ হিসেবে গুরুতর তহবিল ঘাটতির কথা উল্লেখ করেছে ডব্লিউএফপি। তবে তাদের এমন সিদ্ধান্তে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী শিবিরে খাদ্য নিরাপত্তার সংকট ও পুষ্টিহীনতা আরও বাড়বে বলে উদ্বেগপ্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও ভয়াবহ দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে থেকেই এ দেশে অবস্থান করছিল কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজার, টেকনাফের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বসবাস করছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও সংকটের কারণে দাতারা অনুদান কমিয়ে দেওয়ায় আগামী মাস থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ কমিয়ে আনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ডব্লিউএফপি। তারা জানিয়েছে, আগামী ১ মার্চ থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ ১৭ শতাংশ কমিয়ে জনপ্রতি ১০ ডলার করা হবে। শিগগির নতুন তহবিল জোগাড় না হলে এর পরিমাণ আরও কমতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীর কাছে সাড়ে ১২ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চেয়ে ডব্লিউএফপি বলেছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর বাসিন্দাদের এক-তৃতীয়াংশই শিশু। পুষ্টির অভাবে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বেশিরভাগ শিশুর ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এ অবস্থায় তাদের খাদ্যের জন্য জরুরি তহবিল না পেলে তার প্রভাব হবে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, আন্তর্জাতিক দাতারা যদি পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু ও তাদের পরিবারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এই জনগোষ্ঠীর প্রতি প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। তার মতে, রোহিঙ্গারা বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এ অবস্থায় তাদের সহায়তা বাড়ানো দরকার, কমানো নয়। জাতিসংঘের দুই বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি ও টম অ্যান্ড্রুজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ কমানো হলে তার ফল হবে বিপর্যয়কর। তাদের কথায়, রোজার আগে এভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের রেশন কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনগতভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ নেই। আশ্রয়কেন্দ্রের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে তাদের থাকার নিয়ম। তবে কক্সবাজারে বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলছেন, এই পর্যায়ে এসে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে শরণার্থীরা কাজের খোঁজে আরও মরিয়া হয়ে উঠবে। তাতে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। এখনই ক্যাম্প থেকে পালিয়ে বহু রোহিঙ্গা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে চেপে সাগরপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাতে সলিল সমাধি হচ্ছে অনেকের। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ৬৯ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে একটি নৌকা ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে পৌঁছেছে। ডব্লিউএফপির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জনি আইলিয়েফ বলেন, যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এই জনগোষ্ঠীকে যেতে হয়েছে, যেখানে খুব বেশি সুযোগও তাদের সামনে নেই, সেখানে এভাবে রেশন কমিয়ে দেওয়া আমার কাছে অকল্পনীয়। কক্সবাজারের একটি শরণার্থীশিবিরের বাসিন্দা ১৮ বছর বয়সী আরিফ উল্লাহ বলেন, আমাদের আগে যে রেশন দেওয়া হতো, তাতে কোনোমতে চলত। এখন যদি আরও কমিয়ে দেয়, তাহলে বাঁচবো কীভাবে?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category