নিজস্ব প্রতিবেদক :
সামাজিক দায়বদ্ধতার কর্মসূচি বা সিএসআর কর্মকান্ডে গত ৬ মাসে কোনো অর্থই ব্যয় করেনি ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আর যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খরচ করেছে তাও যৎসামান্য। অথচ করোনায় দেশের প্রান্তিক মানুষের খাদ্যসামগ্রী কেনাকাটার জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ১ শতাংশ ব্যয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ঝিমিয়ে পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাতের সিএআর কর্মকান্ড। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যাংকগুলো প্রতি বছরই নানা সিএসআর কার্যক্রম করে থাকে। সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক সারা বছরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে দারিদ্র্য হার বৃদ্ধির ফলে বিপদগ্রস্ত, কর্মহীন দরিদ্র, ছিন্নমূল, দুস্থ, অসহায় জনগোষ্ঠীর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ এবং কর্মহীন মানুষের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে উঠেছে। সেজন্য হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা পরিপালনের উদ্দেশ্যে তফসিলি ব্যাংকগুলোর কর-পরবর্তী মুনাফা থেকে অতিরিক্ত ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে বলা হয়েছিল। বিদ্যমান সিএসআর কার্যক্রমের অতিরিক্ত ১ শতাংশ অর্থ দাঁড়ায় প্রায় ১১৪ কোটি টাকা। আর জেলা প্রশাসক, এনজিও, এমএফআই, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং সেনা কল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। জুলাইয়ের মধ্যে ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বলা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্য থেকে বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছে। ওই কারণে সম্প্রতি নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, সিএসআর কার্যক্রমে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই আগ্রহ নেই। চলতি বছরের প্রথম (জানুয়ারি-জুন) ৬ মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ব্যাংকের সিএসআর খাতে ব্যয় কমেছে ৫৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ওই খাতে ৫১৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। তবে ২০২১ সালের প্রথমার্ধে ৪৬১ কোটি টাকা সিএসআরে খরচ করেছে ব্যাংকিং খাত। তাছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। গত ৬ মাসে দেশের ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিএসআর কর্মকা-ে এক টাকাও ব্যয় করেনি। তার মধ্যে ১০টি ব্যাংক ও ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর প্রায় দেড় ডজন ব্যাংক যৎসামান্যব্যয় করেছে।
এদিকে সিএসআর খাতে ব্যাংকিং খাতের অর্থ ব্যয়ে অনাগ্রহের প্রসঙ্গে ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা ভাইরাসের প্রভাব দেশের অন্যান্য খাতের মতো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপরও পড়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের অর্থ দিয়ে বিনিয়োগ করে থাকে। বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের অর্থ ফেরত দিলে আমানতকারীদের সুদে-আসলে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু দেড় বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা শিথিলতার কারণে গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ না করেই খেলাপি থেকে মুক্ত থাকতে পারছে। তাতে ব্যাংকের নগদ আদায়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু ওই সময়ে আমানতকারীদের অর্থ ঠিকই মুনাফাসহ পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাতে ব্যাংকের নিট আয় কমে গেছে। আর ব্যাংকের সিএসআরসহ অন্যান্য কর্মকা-ে তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণসহ কিভাবে আদায় কার্যক্রম বাড়ানো যায় সে বিষয়টির ওপর জোর দেয়া জরুরি। কারণ দেশের সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ওষুধ খাতসহ অনেক খাতেরই ব্যবসা ভালো। ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের ছাড় দেয়া হলে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হবে। যা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো ফল বয়ে আনবে না।