নিজস্ব প্রতিবেদক :
পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে জলদস্যুদলের মূল সমন্বয়কারীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৮ সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি একনলা বন্ধুক, দুটি ওয়ান শ্যুটার গানসহ তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮ রাউন্ড গুলি, চারটি দেশি ধারলো অস্ত্র, দুটি লোহার রড, বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, গামছাসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করা হয়। আজ শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র্যাব-৮ এর সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ২০ নভেম্বর সকাল থেকে রাত ১০টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরের ৩০-৩৫ কিলোমিটার এলাকায় (পাথরঘাটা, বরগুনা ও পটুয়াখালীর বলেশ্বর এবং পায়রা মোহনা) পর্যায়ক্রমে ৭টি নৌকায় ডাকাতি করে মোবাইলসহ মূল মাঝিসহ ৭ জনকে অপহরণ করে জলদস্যুদের সদস্যরা। এরপর অপহৃতদের পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের মুক্তিপণ চায় তারা। সেই সঙ্গে লুণ্ঠিত মাছসহ মালামাল জলদস্যুদের মূল সমন্বয়কারী মো. খলিল জমাদ্দারের মাধ্যমে মাছ ব্যবসায়ীর কাছে কম দামে বিক্রি করে। তিনি জানান, অপহরণ করা মাঝিদের একটি নৌকার পাটাতনের নীচে গাদাগাদি করে দিনের বেলা মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে আটকে রাখে। আর রাতে নেটওয়ার্কের ভেতরে এসে সমন্বয় ও মুক্তিপণ দাবি করতে থাকে ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর ২৩ নভেম্বর র্যাবের তল্লাশি অভিযান শুরুর খবর পেয়ে জিম্মি থাকা মাঝি-জেলেদের নৌকায় রেখে জলদস্যুরা চলে যায়। এরপর কৌশলে জলদস্যুরা অপপ্রচার চালালে অফহৃতদের ট্রলারকে ডাকাতদের সন্দেহে ঘিরে ফেলে হামলা চালায় স্থানীয় মাঝিরা। এ সময় র্যাবের একটি অভিযানিক দল সেখানে পৌঁছালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং জিম্মি ওই মাঝি-জেলেদের উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর গত ১৭ নভেম্বর পাথরঘাটা থানায় দুটি মামলা করা হয়। এদিকে র্যাব গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৮ গত ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে বঙ্গোপসাগরে জেলে নৌকায় ডাকাতি ও মুক্তিপণ সংগ্রাহক পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার মো. ইলিয়াস হোসেন মৃধাকে (২৮) গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে মুক্তিপণের ৫ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে তার কাছ থেকে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান বাড়ায় র্যাব। তার ধারাবহিকতায় গতকাল শুক্রবার সকালে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় অভিযান চালায় র্যাব-৮ এর সদস্যরা। তারা একটি পরিত্যাক্ত বাড়ির চারিপাশ ঘিরে ফেললে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে গুলিবিনিময় হয়। এ সময় কয়েকজন পালিয়ে যেতে পারলেও বরগুনার তালতলী এলাকার বাসিন্দা ও জলদস্যুদলের মূল সমন্বয়কারী মো. খলিল জমাদ্দার (৫০), পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মো. মাহাতাব প্যাদা (৩৩), মো. জামাল আকন্দ (৩৬), মো. মাছুম ওরফে মানছুর খলিফা (৪৬) ও পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার মো. মিনাজ খাঁকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়। তারা সবাই ডাকাতিতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে জামাল স্ব-শরীরে ডাকাতির পাশাপাশি সমুদ্রে দিক নির্ণয় ও ট্রলার চালাতো। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছে ডাকাতির ১০-১২ দিন আগে পটুয়াখালীর গলাচিপা খেয়াঘাটে সর্দারসহ বেশ কয়েকজন পরিকল্পনার বিষয়টি চূড়ান্ত করে। এরপর ১৯ নভেম্বর জলদস্যুরা গলাচিপার একটি রাইস মিলের পাশে একত্র হন। পরে তারা গলাচিপা খেয়াঘাট থেকে ভাড়াকরা নৌকায় সাগরে যাত্রা করে ৭টি নৌকায় ডাকাতি করেন। তিনি বলেন, গ্রেফতকৃতরা আরও জানিয়েছেন, ১৭-১৮ জনের এই জলদস্যু দলের সদস্যরা কয়েকটি (৩/৪) ভাগে ভাগ হয়ে ডাকাতি করে। একটি উপদল অস্ত্রসহ অপহরণ ও লুটতরাজে অংশ নেয়। সর্দারের নেতৃত্বে এই উপদলে সাধারণত ৮-১০ জন সদস্য থাকে। অপর ২/৩ জনের একটি উপদল, মূল দলের সহযোগী হিসেবে ডাকাতিকালীন সময়ে কাজ করে। যারা প্রয়োজন অনুযায়ী লুণ্ঠিত মালামাল সাগর হতে উপকূলে নিয়ে আসে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থানরত পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়কারী দলের কাছে হস্তান্তর করে। যারা বিভিন্ন মৎসব্যবসায়ীদের কাছে লুষ্ঠিত মালামাল বিক্রি করে। এই উপদলটি ৩/৪ জনের সমন্বয়ে গঠিত। এ ছাড়া এরা সাগরে যাওয়া মৎস্যজীবীদের ব্যাপারে গোপন তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে সমন্বয় এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি ও সংগঠিত ডাকাতির প্রতিক্রিয়া ও ভুক্তভোগী পরিবার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এ ছাড়া মুক্তিপণ সংগ্রহ করার জন্য ভিন্ন আরও একটি ২/৩ জনের উপদল নিয়োজিত থাকে। যারা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ঠিকানা পরিবর্তন করে অবস্থান করে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণ সংগ্রহ করে।