• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
দিনে ১০-১২ বার লোডশেডিং, গরমে অতিষ্ঠ নীলফামারীর মানুষ মালয়েশিয়া উচ্চশিক্ষার জন্য ভালো গন্তব্য: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী গরমে লোডশেডিংয়ে ভুগছে গ্রামের মানুষ, ঢাকায় লোডশেডিংয়ে কম আগামী দিনে হজ ব্যবস্থাপনা আরও স্মার্ট হবে: ধর্মমন্ত্রী থাইল্যান্ডে শেখ হাসিনা, লাল গালিচা সংবর্ধনা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করতে চায় ভারত: হাইকমিশনার কক্সবাজারে ‘রোহিঙ্গা ভোটারদের’ তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট ফরিদপুরে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪ প্লাটুন বিজিবি ভিসা জটিলতায় এবারের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সিগুলোর

ঘরছাড়া তরুণদের খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত হুমকি রয়েছে: র‌্যাব

Reporter Name / ৯৯ Time View
Update : বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় ঘর ছাড়া থেকে ১৯ জেলার নিরুদ্দেশ ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। যাদের মধ্যে ৩৮ তরুণের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। ঘরছাড়া তরুণদের খুঁজে বের না করা পর্যন্ত তারা হুমকি স্বরূপ বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। আজ বুধবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী দুই সদস্যসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয় জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা যে ৫৫ জনের তালিকা দিয়েছি সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুটি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গোলারুদসহ ১০ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়। বাড়িছাড়া ৫৫ তরুণেএকসঙ্গে থাকার কথা নয়, তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করার কথা। তবে আমাদের অভিযান টের পেয়ে হয়তো তারা দুটি ক্যাম্প থেকে আত্মগোপনে চলে যায়। তাদের খুঁজে বের না করা পর্যন্ত হুমকি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি দল তাদের মধ্যে ৪ তরুণকে উদ্ধার পূর্বক ডি-র‌্যাডিক্যালাইজড করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ এক তরুণ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। এরপর ৫ অভিযানে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী আবদুল হাদি ওরফে সুমন ওরফে জন (৪০) ও আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ (৩২) এবং দাওয়াতী কার্যক্রমে জড়িত মো. রনি মিয়াকে (২৯) গ্রেপ্তার করা হয়। নিরুদ্দেশ তরুণদের বিষয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা নজরদারি করতে গিয়ে তথ্য পায় যে, নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান নামক এক তরুণ গত মার্চ মাসে নিরুদ্দেশ হয়। তার পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডি করে। ইতোপূর্বে প্রকাশিত নিরুদ্দেশ ৫৫ জনের তালিকায় আবু বক্করের নাম রয়েছে। র‌্যাব প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ ও নজরদারির মাধ্যমে নিজ সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে প্রেরণের সঙ্গে জড়িত আম্বিয়া সুলতানা ওরফে এমিলিকে ৫ নভেম্বর উদ্ধার করে পরিবারের সান্নিধ্যে গত ৪ দিন যাবত ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখা হয়। আম্বিয়া সুলতানা এমিলি একটি স্বনামধন্য এয়ার লাইন্সে চাকরি করতেন। জানা যায়, গৃহ শিক্ষক আল-আমিনের মাধ্যমে তিনি ও তার ছেলে আবু বক্কর ২০২১ সালের প্রথম দিকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দেন। পরবর্তীতে আবু বক্কর চলতি বছরের মার্চ মাসে আল আমিনের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিযরতের নামে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। অন্যান্য প্রশিক্ষণ শেষে গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে আল আমিনের নির্দেশনায় গ্রেপ্তার রনি পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য আবু বক্করকে বান্দরবানে দিয়ে আসে। র‌্যাব আম্বিয়া সুলতানা এমিলিকে ডি-রেডিকালাইজড করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে রাখা হয়। এ সময় তার দেওয়া তথ্য মতে রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আবদুল হাদি সম্পর্কে খন্দকার মঈন বলেন, তিনি সুনামগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। এক থেকে দেড় বছর আগে সংগঠনের শূরা সদস্য সৈয়দ মারুফ ওরফে মানিকের মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি ছিলেন সংগঠনের ‘ক’ শ্রেণির অর্থদাতা। গত ৩ মাস আগে সংগঠনের শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবকে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ৯ লাখ টাকা দেন। ইংল্যান্ডে অবস্থানরত তার দুই প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসায় সহায়তার কথা বলে ওই টাকা সংগ্রহ করেন। এছাড়াও তিনি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা সংগঠনে চাঁদা দিতেন। তিনি ২ মাস আগে হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণ শেষে পাহাড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান চলতে থাকায় তিনি চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েক জায়গায় কিছুদিন অবস্থান করে নারায়নগঞ্জের সাইনবোর্ডে এসে রনির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে হিযরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। গ্রেফতার মো. আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ অনলাইন শরিয়াহ গ্র্যাজুয়েশন ইনস্টিটিউট নামক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও তত্ত্বাবধানের কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। এক থেকে দেড় বছর আগে শূরা সদস্য ও অর্থ শাখার প্রধান রাকিবের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়। তিনি ছিলেন সংগঠনের একজন ‘ক’ শ্রেণির অর্থদাতা। দুই মাস আগে রাকিবের কাছে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য ৭ লাখ টাকা দেন। এছাড়াও প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিতেন। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে তার শরিয়াহ ইনস্টিটিউট, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিম খানায় সহায়তার কথা বলে এই অর্থ সংগ্রহ করতেন। এক মাস পূর্বে পাহাড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। কিন্তু পাহাড়ে অভিযান চলমান থাকায় রনির মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে পার্বত্য অঞ্চলে যাওয়ার জন্য একত্র হন। গ্রেফতার রনি মিয়া স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পরবর্তীতে নারায়নগঞ্জে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন। এক বছর আগে ছোটবেলার বন্ধু আল আমিন ওরফে আব্দুল্লাহর মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। আলামিনের নির্দেশে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আবু বক্করকে বান্দরবানে পৌঁছে দেন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম ও হিজরত সদস্যদের বান্দরবানসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। পার্বত্য অঞ্চলে র‌্যাবের অভিযান চলমান থাকায় গ্রেপ্তার আবদুল হাদি ও আবু সাঈদ সেখানে যেতে না পারায় তারা বিভিন্ন কৌশলে পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রনির শরণাপন্ন হয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় একত্র হন। এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, র‌্যাব যেখানে অভিযান পরিচালনা করেছে, তা অত্যন্ত দুর্গম এলাকা। পাহাড়ের সর্বোচ্চ গড় উচ্চতা প্রায় আড়াই হাজার ফুট। সেখানে অভিযান পরিচালনা করা এবং পাহাড়ে শান্তিপূর্ণভাবে যারা বসবাস করছে তাদের কোনো ক্ষতি যাতে না হয় সেভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা বুঝে বা না বুঝে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাহাড়ে গেছেন তারাও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এ কারণেই অভিযানে দেরি হচ্ছে। ঘর ছাড়া ৫৫ তরুণ নিখোঁজ রয়েছে। তাদেরকে খুঁজে বের না করা পর্যন্ত র‌্যাবের জন্য অবশ্যই থ্রেট। গত পাঁচটি অভিযানে যে জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তারা বলেছে সবাই স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়েছে। নিখোঁজদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category