• রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার

ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবি

Reporter Name / ৮৫ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে স্থল, নৌ, রেল কিংবা আকাশপথ- প্রতিটি পথেই যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। শ্রমিকদের ঈদের বেতন-বোনাস দেওয়া হয় না। সেই টাকা ওঠানোর নামে যাত্রীদের থেকে বড় এমাউন্টের টাকা সিন্ডিকেট করে আদায় করা হচ্ছে। সড়ক পথে ৪০ কোটি ট্রিপে যাত্রীপ্রতি গড়ে ১০০ টাকা বাড়তি দিলেও প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং নৌ, রেল ও আকাশপথে ২০ কোটি ট্রিপে যাত্রীপ্রতি গড়ে ২০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হলেও প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আদায় হবে। সবমিলিয়ে এবারের ঈদে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ভাড়া সিন্ডিকেটের পকেটে যাবে। বৃহস্পতিবার সকালে ‘ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবিতে’ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বরাবরের মতো এবারও আকাশপথে ভাড়া নৈরাজ্য চরমে পৌঁছেছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে ৬১ অ্যারোনটিক্যাল মাইলের উড়োজাহাজের ভাড়া ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ঢাকা-ব্যাংকক রুটের ভাড়ার প্রায় দেড়গুণ বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। এই রুটে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ৪ হাজার টাকার ভাড়া এখন ১০ হাজার ৮০০ টাকা। নভোএয়ারের ৪ হাজার ৮০০ টাকার ভাড়া এখন ৮ হাজার ৪০০ টাকা। বাংলাদেশ বিমানে ৩ হাজার টাকার ভাড়া ৭ হাজার ৪০০ টাকা। ঢাকা-সৈয়দপুর, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ৪ হাজার ৫০০ টাকার নিয়মিত ভাড়া ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করতে পারছে না। এবারের ঈদে ২৫ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত সব পথে প্রায় ৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রী হতে পারে। তার সিংহভাগ অর্থাৎ ৪০ কোটি ট্রিপ সড়কপথে, ২০ কোটি ট্রিপ রেল, নৌ ও আকাশ পথে হতে পারে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২৫ এপ্রিলের পর থেকে শহরাঞ্চলে রিকশাভাড়া ২০ ভাগ বেড়ে গেছে। শুক্রবার থেকে এই ভাড়া ১০০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে অটোরিকশা, ইজিবাইকের ভাড়াও ২/৩ গুণ বাড়তি আদায় হচ্ছে। সব রুটে লেগুনাভাড়া দিগুণ আদায় করা হচ্ছে। সরকার ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে চালক-সহকারীর বেতন ও দুই ঈদের ঈদ বোনাস যাত্রীসাধারণের কাছে থেকে আদায় করে নিলেও তাদের বেতন-বোনাস না দেওয়ায় রাজধানীর বাস-মিনিবাসে ঈদের ৩ দিন আগে থেকে ঈদের ৩ দিন পর পর্যন্ত সর্বনিম্ন ভাড়া ৫০ টাকা হারে আদায় করা হয়। এবারও এ হারে ভাড়া আদায়ের লক্ষ্যে চালক-শ্রমিক ও পরিবহন চাঁদাবাজরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাত্রাপথে বিভিন্ন বাসে যাত্রীপ্রতি ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নৌপথেও ভাড়া নৈরাজ্য চরমে ঠেকেছে। রেলে টিকিট কালোবাজারি, অনলাইনে টিকিট পেতে বিরম্বনা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার চরমে পৌঁছেছে। আকাশপথেও এহেন ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে যাত্রীসাধারণ এখন দিশেহারা। তিনি বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে আগে ডেকের ভাড়া ছিল ২০০ টাকা। ভাড়া বৃদ্ধির পর তা ৩৫০ টাকা হারে আদায় করা হলেও এবারের ঈদে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। এক শয্যার কেবিনের ভাড়া ১০০ টাকা ছিল, ভাড়া বৃদ্ধির পর তা ১ হাজার ২০০ টাকা করা হলেও এবারের ঈদে ১ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। দুই শয্যার ডাবল কেবিনের ভাড়া আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা, ভাড়া বৃদ্ধির পর তা ২ হাজার ৪০০ টাকা করা হলেও এখন আদায় করা হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। আবার কালোবাজারিরা আরও ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বাড়িয়ে যাত্রীদের হাতে টিকিট তুলে দিচ্ছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, সড়কপথে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি রুটে যাত্রী প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যা শুক্রবার থেকে দিগুণ হয়ে যাবে। ঢাকা-রংপুর রুটে হানিফ এন্টারপ্রাইজের ভাড়া আগে ১ হাজার টাকা নেওয়া হলেও এখন ১ হাজার ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ রুটে ঈগল পরিবহনের ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা নেওয়া হলেও এখন ১ হাজার ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। শাহ আলী পরিবহন ৮৫০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে শুভ বসুন্ধরায় ৮০০ টাকার ভাড়া ১ হাজার ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা-পটুয়াখালী সাকুরা পরিবহনের এসি বাসে ১ হাজার টাকার ভাড়া ১ হাজার ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের পথে বিভিন্ন বাসে দিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আবার কিছুকিছু রুটে স্বল্পদূরত্বে যেতে চাইলেও টিকিট নেই অজুহাত দিয়ে বেশি দূরত্বের টিকিট নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যেমন ঢাকা চট্টগ্রামের কেরানীহাট বা লোহাগড়ার যাত্রীদের ১০০ কিলোমিটার বেশি দূরত্বে কক্সবাজারের টিকিট কিনতে হচ্ছে। অনুরূপ কেউ কাপ্তাই যেতে চাইলে তাকে রাঙ্গামাটির টিকিট কিনতে হচ্ছে। কেউ রাজশাহী যেতে চাইলে তাকে নওগাঁর টিকিট কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই নৈরাজ্যের কারণে নিম্নআয়ের লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস-ট্রাক ও ট্রেনের ছাদে, কাভার্ড ভ্যান, পণ্যবাহী পরিবহন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনে কম ভাড়ায় যাতায়াত করতে বাধ্য হবে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে। এসব কারণে জরুরি ভিত্তিতে এহেন ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাহিদুল হক রিপন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শরিফুজ্জামান শরীফ প্রমুখ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category