১২:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ | ই-পেপার

পিরোজপুরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যায় আলমগীরের মৃত্যুদন্ড বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সন্তানকে হত্যার দায়ে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেওয়া মো. আলমগীর হোসেনের মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস, শবনম মুশতারী ও তারিকুল ইসলাম হীরা। আসামিরপক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান। নিজের পরকীয়ার জন্য স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বর্বরোচিত ও অমানবিক পদ্ধতিতে হত্যা করেন তিনি, যা বিরল ঘটনা বলে এ রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণ আদালত বলেন, আসামি যেভাবে তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে হত্যা করেছেন, তা সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এমন অপরাধ নমনীয় দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নেই। এমন হত্যাকারী আদালত থেকে অনুকম্পা পেতে পারেন না। এরপর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে হত্যার দায়ে হাইকোর্ট আসামি মো. আলমগীর হোসেনের মৃত্যুদ- বহাল রাখেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২২ জুন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার পাঠাকাটা গ্রামে পল্লী চিকিৎসক আলমগীর তার স্ত্রী হাফিজা বেগম, ১১ বছরের ছেলে আশরাফুল ও তিন বছরের কন্যা জামিলাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে তাদের ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় পরদিন হাফেজার ভাই মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। সেদিনই গ্রেপ্তার হন আলমগীর। পরে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে যান তিনি। ওই মামলায় ২০১৬ সালের ১ আগস্ট পিরোজপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে আলমগীরকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার আগের থেকেই আলমগীর পলাতক বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আইনি বিধান অনুসারে নিম্ন আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদ- হলে তা নিশ্চিতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। এ অনুসারে নিম্ন আদালতের রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এ ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গতকাল সোমবার আসামি আলমগীরের মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, পরকীয়ার কারণে আলমগীর যেভাবে তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে খুন করেছেন, তা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট বলে রায়ে এসেছে। আলমগীর ব্যথা কমানোর কথা বলে স্ত্রীকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করেন ও দুই সন্তানকে খাবার স্যালাইনের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। পরে স্ত্রী ও সন্তানদের দা দিয়ে কুপিয়ে তিনি হত্যা করেন। স্বীকারোক্তিতে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর ডাকাত এসে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রথমে ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করেন আলমগীর। তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্ট ওই পর্যবেক্ষণ দিয়ে তার মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ

পিরোজপুরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যায় আলমগীরের মৃত্যুদন্ড বহাল

আপডেট সময়ঃ ০৭:৪০:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সন্তানকে হত্যার দায়ে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দেওয়া মো. আলমগীর হোসেনের মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস, শবনম মুশতারী ও তারিকুল ইসলাম হীরা। আসামিরপক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান। নিজের পরকীয়ার জন্য স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বর্বরোচিত ও অমানবিক পদ্ধতিতে হত্যা করেন তিনি, যা বিরল ঘটনা বলে এ রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণ আদালত বলেন, আসামি যেভাবে তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে হত্যা করেছেন, তা সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এমন অপরাধ নমনীয় দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নেই। এমন হত্যাকারী আদালত থেকে অনুকম্পা পেতে পারেন না। এরপর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে হত্যার দায়ে হাইকোর্ট আসামি মো. আলমগীর হোসেনের মৃত্যুদ- বহাল রাখেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২২ জুন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার পাঠাকাটা গ্রামে পল্লী চিকিৎসক আলমগীর তার স্ত্রী হাফিজা বেগম, ১১ বছরের ছেলে আশরাফুল ও তিন বছরের কন্যা জামিলাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে তাদের ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় পরদিন হাফেজার ভাই মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। সেদিনই গ্রেপ্তার হন আলমগীর। পরে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে যান তিনি। ওই মামলায় ২০১৬ সালের ১ আগস্ট পিরোজপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে আলমগীরকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার আগের থেকেই আলমগীর পলাতক বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আইনি বিধান অনুসারে নিম্ন আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদ- হলে তা নিশ্চিতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। এ অনুসারে নিম্ন আদালতের রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এ ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গতকাল সোমবার আসামি আলমগীরের মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, পরকীয়ার কারণে আলমগীর যেভাবে তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে খুন করেছেন, তা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট বলে রায়ে এসেছে। আলমগীর ব্যথা কমানোর কথা বলে স্ত্রীকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করেন ও দুই সন্তানকে খাবার স্যালাইনের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। পরে স্ত্রী ও সন্তানদের দা দিয়ে কুপিয়ে তিনি হত্যা করেন। স্বীকারোক্তিতে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর ডাকাত এসে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রথমে ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করেন আলমগীর। তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্ট ওই পর্যবেক্ষণ দিয়ে তার মৃত্যুদ- বহাল রেখেছেন।