নিজস্ব প্রতিবেদক :
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঈর্ষান্বিত হয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশের ভেতর ও বাহিরে ষড়যন্ত্র চলছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিতে দেশীয় শক্তিও ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে দেশের মানুষ হতাশ। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাজনীতির ভিতর বাহির ও ষড়যন্ত্রের নিষেধাজ্ঞা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এসব কথা বলেছেন। গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বিবার্তা২৪ডটনেট ও জাগরণ টিভি। আলোচনা অনুষ্ঠানে কী-নোট উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ। হানিফ বলেন, হঠাৎ করে আমেরিকা আমাদের দুটি সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অভিযোগ, তারা নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। বিনা বিচারে হত্যার কারণে নাকি এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অথচ র্যাব প্রতিষ্টা করে ২০০৪ সালে অপারেশন ক্লিন হার্ট করে ৬৫ জন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সে সময় ২০০ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। সে সময়ের র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ফজলুল বারী মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ক্রসফায়ার আছে, এটা প্রয়োজন। সন্ত্রাস দমনে ক্রসফায়ারের বিকল্প নেই। সেই ফজলুল বারী এখন কোথায়? এখন তিনিই সেই রাষ্ট্রের আশ্রয়ে আছেন। একই গাছে দুটি ফল কেন? যে ২টি সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার ৭ দিনের মধ্যে র্যাবের ভূমিকা প্রশংসনীয় বলা হলো। মাত্র ১০ দিন আগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরে প্রশংসা করা হলো। এখন মানুষের কাছে কোনটা গ্রহণযোগ্য হবে? আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান ১২০০ সামরিক কর্মকর্তাকে অনেকটা বিনা বিচারে হত্যা করেছেন। এইরকম মানবাধিকার লংঘনের কারণে কোনো দেশকে কথা বলতে শুনিনি। ২০০০ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ২৫ হাজার নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। ২ হাজারর বেশি মা-বোনকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সে হামলায় ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, পাঁচশর বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এত বড় মানবাধিকার লংঘনের পর তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে কি জাঁতি একটা পদক্ষেপ দেখেছিল? আমেরিকার সমালোচনা করে হানিফ বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে যখন স্বাধিকারের আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, তখনো ষড়যন্ত্র ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকাসহ পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো তখনও বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী রাজাকারদের দোসর, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল দুজন- চৌধুরী মাঈনুদ্দিন লন্ডনে ও আশরাফুজ্জামান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। কী করে খুনিদের আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন? এতে প্রমাণিত হয় এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসেছে। যা বাংলাদেশের মানুষেকে হতাশ করেছে। কোনো শক্তিধর রাষ্ট্র অযাচিত কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিক সেটা অমানবিক। হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। আমরা চাই উন্নত রাষ্ট্র গঠনে সব মানুষ শামিল হোক। বঙ্গবন্ধুর বহির্বিশ্ব নিয়ে যে নীতি, আমরা সেই নীতিতে চলতে চাই। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা যেভাবে ’৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছিলাম সেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। জাগরণ আইপি টিভির প্রধান সম্পাদক এফএম শাহীনের সঞ্চালনা ও বিবার্তা২৪ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসির সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় আলোচক হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।