ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

গুলশানে আগুন: সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না আনোয়ার

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:০৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ১৩৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর গুলশানে বহুতল ভবনে আগুন থেকে প্রাণ বাঁচাতে সাততলা থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েন আনোয়ার হোসেন (৩০)। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরে তিনি মারা যান। জানা গেছে ভোলার দৌলতখানের দিদারুল্লা গ্রামের মো. নুর ইসলামের ছেলে আনোয়ার। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। আনোয়ারের স্ত্রী আমেনা বেগম গ্রামে থাকেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। অগ্নিকা-ে স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আমেনা। অনাগত সন্তানের মুখটাও যে দেখে যেতে পারলেন না তার স্বামী! জানা গেছে, গত রোববার রাতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় আনোয়ারকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে প্রথমে তার নাম-পরিচয় জানা যাচ্ছিল না। টেলিভিশনে ভবনে আগুন লাগার খবর দেখে তার ভাই জুলহাস ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তিনি ও তার বোন ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে রাত ২টার দিকে ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করা হয়। জুলহাস সাংবাদিকদের বলেন, টিভিতে আগুন লাগার খবর দেখে ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে জানতে পারি, আমার ভাই লাফিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে আমি ও আমার বোন হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে ভাইকে আর জীবিত পাইনি। ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি বলেন, ভাই বিবিসির পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন। বাসার বাজার করতেন। ভাবি আমেনা বেগম গ্রামে আছেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। সন্তানের মুখও দেখে যেতে পারলেন না ভাই। ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন বিসিবির পরিচালক ফাহিম সিনহার স্ত্রী সায়মা রহমান সিনহাও। তিনি ১২তলার ছাঁদ থেকে লাফ দেন। নিচে সুইমিংপুলে পড়েন সায়মা রহমান সিনহা। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। সেখানে আরও চারজন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদিকে আগুনের ঘটনায় আনোয়ার হোসেন ছাড়াও আরেকজন মারা গেছেন। তবে এখনো নাম-পরিচয় জানা যায়নি। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা ৫৯ মিনিটের দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর রোডের বহুতল ভবনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ক্রমান্বয়ে ইউনিট বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধারে যোগ দেন সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র?্যাব ও স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরাও। দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুন লাগা ভবনের কয়েকটি ফ্লোর থেকে নারী শিশুসহ ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন ফায়ার ফাইটাররা। এ ঘটনায় আনোয়ার ছাড়া আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম রাজু। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর খবর এলো। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আবদুল আহাদ এ কথা জানান। তিনি জানান, রাজু শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভোর ৪টার দিকে মারা যান। তিনি ভবনটিতে বাবুর্চির কাজ করতেন। উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, গুলশানে আবাসিক ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন মারা গেলেন। গতকাল (গত রোববার) আনোয়ার নামে একজন এবং আজ (গতকাল সোমবার) আরেকজন মারা গেছেন। আরও দুজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসা নিয়েছে। ভবন থেকে চারজনের লাফিয়ে পড়ার বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা তাদের (ভবনের বাসিন্দা) বার বার বলেছি লাফ দেবেন না। তারা যদি লাফ না দিতো তাহলে নিহত হতেন না। যারা কষ্ট করে ছিলেন, লাফ দেননি, তাদের আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কি না এগুলো ফায়ার সার্ভিস ও রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থা দেখবে। আমরা শুধু ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

গুলশানে আগুন: সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না আনোয়ার

আপডেট সময়ঃ ০৮:০৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর গুলশানে বহুতল ভবনে আগুন থেকে প্রাণ বাঁচাতে সাততলা থেকে নিচে লাফিয়ে পড়েন আনোয়ার হোসেন (৩০)। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরে তিনি মারা যান। জানা গেছে ভোলার দৌলতখানের দিদারুল্লা গ্রামের মো. নুর ইসলামের ছেলে আনোয়ার। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। আনোয়ারের স্ত্রী আমেনা বেগম গ্রামে থাকেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। অগ্নিকা-ে স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আমেনা। অনাগত সন্তানের মুখটাও যে দেখে যেতে পারলেন না তার স্বামী! জানা গেছে, গত রোববার রাতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় আনোয়ারকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে প্রথমে তার নাম-পরিচয় জানা যাচ্ছিল না। টেলিভিশনে ভবনে আগুন লাগার খবর দেখে তার ভাই জুলহাস ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তিনি ও তার বোন ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে রাত ২টার দিকে ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করা হয়। জুলহাস সাংবাদিকদের বলেন, টিভিতে আগুন লাগার খবর দেখে ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে জানতে পারি, আমার ভাই লাফিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরে আমি ও আমার বোন হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে ভাইকে আর জীবিত পাইনি। ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি বলেন, ভাই বিবিসির পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন। বাসার বাজার করতেন। ভাবি আমেনা বেগম গ্রামে আছেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। সন্তানের মুখও দেখে যেতে পারলেন না ভাই। ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন বিসিবির পরিচালক ফাহিম সিনহার স্ত্রী সায়মা রহমান সিনহাও। তিনি ১২তলার ছাঁদ থেকে লাফ দেন। নিচে সুইমিংপুলে পড়েন সায়মা রহমান সিনহা। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। সেখানে আরও চারজন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। অন্যদিকে আগুনের ঘটনায় আনোয়ার হোসেন ছাড়াও আরেকজন মারা গেছেন। তবে এখনো নাম-পরিচয় জানা যায়নি। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টা ৫৯ মিনিটের দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর রোডের বহুতল ভবনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে ক্রমান্বয়ে ইউনিট বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধারে যোগ দেন সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র?্যাব ও স্বেচ্ছাসেবক সদস্যরাও। দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুন লাগা ভবনের কয়েকটি ফ্লোর থেকে নারী শিশুসহ ২৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন ফায়ার ফাইটাররা। এ ঘটনায় আনোয়ার ছাড়া আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম রাজু। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যুর খবর এলো। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আবদুল আহাদ এ কথা জানান। তিনি জানান, রাজু শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভোর ৪টার দিকে মারা যান। তিনি ভবনটিতে বাবুর্চির কাজ করতেন। উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, গুলশানে আবাসিক ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন মারা গেলেন। গতকাল (গত রোববার) আনোয়ার নামে একজন এবং আজ (গতকাল সোমবার) আরেকজন মারা গেছেন। আরও দুজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসা নিয়েছে। ভবন থেকে চারজনের লাফিয়ে পড়ার বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা তাদের (ভবনের বাসিন্দা) বার বার বলেছি লাফ দেবেন না। তারা যদি লাফ না দিতো তাহলে নিহত হতেন না। যারা কষ্ট করে ছিলেন, লাফ দেননি, তাদের আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কি না এগুলো ফায়ার সার্ভিস ও রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থা দেখবে। আমরা শুধু ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছি।