স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে জনপ্রতিনিধিদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

- আপডেট সময়ঃ ০৭:৩১:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুলাই ২০২৩
- / ১৬৩ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করতে দল-মত নির্বিশেষে সকল জনপ্রতিনিধিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য আমি (দল-মত নির্বিশেষে) সকল জনপ্রতিনিধিকে আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা, অর্থনীতি ও কৃষিসহ সবকিছুই স্মার্ট হবে। তাই দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়নে কাজ করতে হবে। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র বরিশালের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, খুলনার তালুকদার আবদুল খালেক ও গাজীপুরের জায়েদা খাতুনের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সবার প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে কে তাঁর দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তা দেখেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এলাকা দেখে কাজ করি না। প্রতিটি নাগরিকের উন্নতির জন্য কাজ করছি। এই প্রসঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এটি সবার জন্য করেছেন। তিনি বলেন, আমি যা কিছু করি জনগণের কল্যাণের জন্য করি। তিনি সকলকে নিজ এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে কাজ ও সেবা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনারা (তিন সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলর) জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন। আমি চাই, আপনারা জনগণের সেবা ও তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন। শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বারবার ক্ষমতায় এসেছি বলেই একটা গণতান্ত্রিক ধারা ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত আছে। এ জন্যই আজ বাংলাদেশের এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এখন গ্রামে গ্রামে সেই হাহাকার নেই। তারপর আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। আর আমাদের পেছনের দিকে তাকাতে হবে না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪ সালের অগ্নিসন্ত্রাস; সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি, বাস, লঞ্চ স্টিমার পোড়ানো; ৫০০ জনের মতো মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা-এই ধরনের ভয়াবহ অবস্থা আমরা দেখেছি। কাজেই সেই ধরনের অবস্থা আর সৃষ্টি করুক, আমরা চাই না। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে; বাংলাদেশের মানুষ যেন শান্তিতে বাস করতে পারে; সবাই যেন উন্নত জীবন পায়-সেটাই আমরা চাই। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসি। দেশের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সবকিছুর উন্নতির মধ্য দিয়ে এই সময়ে বাংলাদেশ বদলে গেছে কিনা, সেটা আপনাদের থেকে জানতে চাই। আন্তরিকভাবে এই প্রচেষ্টা আমরা চালিয়েছি কেবল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের জন্য। জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশে ফেরার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি এমন একটি দেশে এসেছিলাম, যেখানে আমার পিতা-মাতা ও ভাইদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যেখানে খুনিরা ছিল ক্ষমতায়। আর ছিল স্বাধীনতাবিরোধী, জিয়াউর রহমান যাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে। আমাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। পিতা-মাতার বিচারের জন্য আমাকে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর এটা পেরেছি ক্ষমতায় আসতে পেরেছি বলেই। বৈশ্বিক মহামারির প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও কোভিড-১৯-এর অতিমারির কারণে অর্থনৈতিক মন্দা বিশ্বব্যাপী। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়। বরং বাংলাদেশে তো আমরা এখনও বলিনি যে দুটো-তিনটার বেশি টমেটো কিনতে পারবেন না, ৬টার বেশি ডিম কিনতে পারবেন না। পানি ব্যবহার করতে পারবেন না। বিদ্যুৎ এতটুকুর বেশি ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে সেই অবস্থা চলছে। লন্ডনে বাজারে গেলে তো সীমিত জিনিসই কিনতে হবে। তার বেশি কেনা যাবে না। বিদ্যুৎ একটু ব্যবহার করলেই ফাইন দিতে হবে। গাছে পানি দেওয়া যাবে না। বালতিতে করে একটু একটু করে পানি দিতে হবে। পানি দিয়ে গাড়ি ধোয়া যাবে না। শুধু লন্ডন নয়, ইউরোপের সব জায়গায় এই একই অবস্থা। মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে এমনটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জানি জিনিসের দাম বেড়েছে, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঈদের আগে পাটগাতী বাজার (প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকার বাজার) থেকেই ২০০ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। ওই বাজারে ৫৫ ইঞ্চি টিভিও পাওয়া যাচ্ছে। ওখানে কয়েকটি টিনের ঘর ছাড়া আর কিছু ছিল না। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর সারা দেশ ঘুরে বেড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি এ জন্যই যে দেশটাকে না চিনলে উন্নতি করবো কীভাবে? যখনই সরকারে এসেছি, সেই মোতাবেক কাজ করেছি, আজ উন্নয়নটা করতে পেরেছি। আমাদের কাজ জনগণের সেবা করা। আমরা সেই চেষ্টাটাই করেছি। আমাদের লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ করা। এ সময় খুব শিগগিরই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করতে যাচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক পরিশ্রমটা করেই আমাদের এই উন্নয়নটা করতে হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জনসংখ্যা বেশি। চাষ উপযোগী জমি কম। তারপরও আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারপরও যুদ্ধের কারণে আজ ভোজ্যতেল, গম, জ¦ালানি তেল, চিনি-এ রকম অনেক কিছু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর দাম বিশ্বে বেড়ে গেছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জানি এখানে অন্য দলেরও অনেকে আছেন। তারপরও কে ভোট দিলো, সেটা দেখে নয়, দেশের প্রত্যেক জনগণের জন্যই আমাদের কাজ করতে হবে। বিষয়টি এমন নয় যে আওয়ামী লীগের লোকজন পাবে, অন্যরা পাবে না। আমরা সবার জন্যই কাজ করছি। শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমাদের কাঁচা মরিচও আমদানি করতে হয়। কেন করতে হবে? জানি বর্ষাকালে ক্ষেতে পানি উঠে যায়। মরিচ তোলা যায় না বা মরিচ পচে যায়। সে জন্য সমস্যা হয়। এখন থেকে আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিজেদের করতে হবে। নিজেই আমরা গাছ লাগাবো, উৎপাদন করবো। ছাদবাগান অথবা ভাসমান বাগান করবো। ঝুলন্ত বাগান করবো। আমার এলাকায় কিন্তু আমি শুরু করে দিয়েছি। গণভবনও এখন মোটামুটি খামারবাড়ি করে ফেলেছি। আমার ছাদেও মরিচ গাছ আছে। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারে না। বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে এখন সম্মানের চোখে দেখে। আমরা এই উন্নতিটা করতে পেরেছি বলেই সম্ভব হয়েছে।