ঢাকা, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

সোনা পাচারে যুক্ত বেবিচক-বিমানের কর্মীরাও

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ১০:২১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১২৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
আকাশপথে স্বর্ণ চোরাচালান ও সংশ্লিষ্ট চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মীরা। তারা বিদেশ থেকে ফেরার সময় সঙ্গে করে স্বর্ণ নিয়ে আসেন। আবার নির্ধারিত দেশেও নিয়ে যান। বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সোনাসহ দেশে-বিদেশে এ দুই সংস্থার লোকেরা আটকও হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেবিচক-বিমানের বেশ কয়েকজন কর্মী আটক-গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের অপরাধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিলে সেখানেও তারা নিজেদের অপকা-ের বিষয়ে স্বীকার করেন। গত সোমবার ৬৮ সোনার বার (৮ কেজি) স্বর্ণসহ শফিকুল ইসলাম নামে বিমানের এক এয়ারক্রাফট মেকানিক আটক হন। এয়ারপোর্টের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে আটক হওয়া শফিকুলের কাছে থাকা সোনার বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। এ ঘটনাটি দিনের আলোয় আশার পর থেকেই বেবিচক-বিমানের ভূমিকা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৩৭ ভরি স্বর্ণসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হন। তারা হলেন- বিমানবন্দরে কর্মরত বেবিচকের লাউঞ্জ অ্যাটেনডেন্ট আবদুল ওহাব, কনভেয়ার বেল্টম্যান হাসান ও শাহজাহান এবং তাজুল ইসলাম ও জামাল উদ্দিন। তাদের মধ্যে তাজুল ও জামাল পাচার চক্রের সদস্য। তাদের নামে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া বলেন, রিমান্ডে নেওয়ার পর প্রথম দিনই মুখ খুলেছেন আসামিরা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দায়িত্ব পালনের আড়ালে চোরাকারবারিদের বহন করা কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিমানবন্দর এলাকায় বেবিচকের কিছু অসাধু কর্মচারী ও নিরাপত্তা কর্মীর সহায়তায় স্বর্ণ পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তদন্তের স্বার্থে অনেক তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। চলতি বছর সোনা পাচারকা-ে যুক্ত বেবিচক-বিমানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আটক-গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত ১৪ এপ্রিল বেবিচকের গাড়িচালক সালেহকুজ্জামান পাঁচটি সোনার বার ও ৫০টি সোনার চেনসহ আটক করে এপিবিএন। তার আগে গত ৪ জুন জেদ্দা বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্বর্ণসহ এফ এস জিয়াউল নামে বিমানের এক কেবিন ক্রুকে আটক করে সৌদি আরবের পুলিশ। এরও আগে, জেদ্দা বিমানবন্দরে অবৈধ স্বর্ণ ও মুদ্রাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে চাকরি হারান রুহুল আমিন শুভ নামে বিমানের আরেক কেবিন ক্রু। এসব ঘটনার পূর্বাপর আরও অনেক ঘটনা আছে তা মিশে গেছে রাতের আঁধারে। অনেক সময় বেবিচক-বিমান কর্মীদের ব্যাপক গোপনীয়তা আবার অনেক সময় কারবারিদের সুকৌশল বুদ্ধির কারণে এমন অনেক কা- আছে যা প্রকাশ পায়নি। জানা গেছে, উড়োজাহাজে করে স্বর্ণের বার বিদেশ থেকে নিয়ে আসে কারবারিরা। এরপর বিমানবন্দরে সেগুলো হেফাজতে নেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অন্তত অর্ধশত কর্মী। তারা অবৈধ পণ্যগুলো নিরাপদে পৌঁছে দেন চক্রের হোতার কাছে। নিজেদের ডিউটির আড়ালেই এ চোরাচালান চক্রে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। পরিকল্পিত চক্র হওয়ায় তাদের ধরা পড়ার আশঙ্কা একেবারেই কম! আবার তদন্তে কারও নাম এলেও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ করে’ অব্যাহত রাখেন অপকর্ম। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে থাকা পাঁচ আসামির বয়ান থেকে এসবই প্রতীয়মান হয়। যারাই যখন আটক বা গ্রেপ্তার হয়েছেন আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নানা তথ্য দিয়েছেন। তবে, সঙ্গত কারণে এসব তথ্য প্রকাশ্যে আনতে পারে না আইন সংশ্লিষ্টরা। ঘটনাগুলো নিয়ে কথা হলে বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, সম্প্রতি স্বর্ণ পাচারের কয়েকটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেবিচকের ১০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এরপরও বিমানবন্দরে ডিউটির আড়ালে স্বর্ণ পাচার করছেন অসাধু কর্মীরা। তারা অন্যান্যের সঙ্গে মিলেমিশে এ কাজ করায় সহজে ধরা পড়ে না। তবে ধরা পড়লে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার ধরা পড়া তিন কর্মীকেও সাময়িক বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, চোরাচালান বন্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। এজন্যই আসলে বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা ভবিষ্যতেও এ তৎপরতা অব্যাহত রাখব। বিমানবন্দরে যারা আছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, এপিবিএন, শুল্ক গোয়েন্দা সবাই মিলেই আমরা টিম ওয়ার্ক করে জড়িতদের শনাক্ত করা, সেই সাথে কেউ যাতে চোরাচালানে উৎসাহী না হয় সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাম্প্রতিক ও পূর্বাপর সব ঘটনার বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আজিম বলেন, আমরা এর আগে যে চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছে (বিদেশে বিমানের কর্মী স্বর্ণসহ আটক) সে ঘটনায় মামলা দিয়ে, রিমান্ডে নিয়েছি। এটা আসলে একটা চক্র; ঘটনাগুলো দুদিক (দেশে, বিদেশে) মিলিয়েই হয়। মামলা ইন্টারপোলে গিয়েছে। সোমবারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা দোষীকে প্রত্যাহার করেছি। দুই দিকের (দেশি ও বিদেশের) আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আমরা এসব চক্রকে ধরে ফেলব। যেহেতু কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে; এখন দেখবেন এসব ঘটনা অনেকটাই কমে গেছে। যারা টেকনিকেলি সহায়তা করে আমরা এদেরকেই ধরতে চাচ্ছিলাম। কারণ, যারা বডিতে হাত দেয়, তারা তো টেকনিকেল পার্সন ছাড়া সম্ভব না। আমরা এসব কর্মকা-ের হোতা কারা- পুরো চক্রটাকেই বের করার চেষ্টা করছি। স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় আগে কখনোই ফৌজদারি মামলা হয়নি উল্লেখ করে শফিউল আজিম দাবি করেন, যখনই স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হবে, দোষীর জেল হবে বা শাস্তি যেটা প্রাপ্য হবে। তার চাকরিও থাকবে না। তখন অন্যরা ভয় পাবে। আগে তো প্রশাসনিক উপায়ে আদালতে গিয়ে মুক্ত হয়ে যেত। চোরাচালান রোধে বিদেশেও সিকিউরিটি নেওয়া হবে জানিয়ে বিমানের সিইও বলেন, বিদেশে আমরা সিকিউরিটি সার্ভিস নেব, যারা মেনটেইনেন্স করবে। সেজন্য আলাদা টাকা দিতে হয়। আমরা দরকার হলে টাকা দিয়েই সেবা নেব। এছাড়া, যারা মেনটেইনেন্স কাজের সাথে যুক্ত থাকবে তাদের জন্য বডিক্যাম কেনা হচ্ছে। সারভিলিয়েন্স ক্যামেরাও যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে আশা করছি চোরাচালানের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

সোনা পাচারে যুক্ত বেবিচক-বিমানের কর্মীরাও

আপডেট সময়ঃ ১০:২১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
আকাশপথে স্বর্ণ চোরাচালান ও সংশ্লিষ্ট চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মীরা। তারা বিদেশ থেকে ফেরার সময় সঙ্গে করে স্বর্ণ নিয়ে আসেন। আবার নির্ধারিত দেশেও নিয়ে যান। বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সোনাসহ দেশে-বিদেশে এ দুই সংস্থার লোকেরা আটকও হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেবিচক-বিমানের বেশ কয়েকজন কর্মী আটক-গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের অপরাধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিলে সেখানেও তারা নিজেদের অপকা-ের বিষয়ে স্বীকার করেন। গত সোমবার ৬৮ সোনার বার (৮ কেজি) স্বর্ণসহ শফিকুল ইসলাম নামে বিমানের এক এয়ারক্রাফট মেকানিক আটক হন। এয়ারপোর্টের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে আটক হওয়া শফিকুলের কাছে থাকা সোনার বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। এ ঘটনাটি দিনের আলোয় আশার পর থেকেই বেবিচক-বিমানের ভূমিকা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৩৭ ভরি স্বর্ণসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হন। তারা হলেন- বিমানবন্দরে কর্মরত বেবিচকের লাউঞ্জ অ্যাটেনডেন্ট আবদুল ওহাব, কনভেয়ার বেল্টম্যান হাসান ও শাহজাহান এবং তাজুল ইসলাম ও জামাল উদ্দিন। তাদের মধ্যে তাজুল ও জামাল পাচার চক্রের সদস্য। তাদের নামে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার ওসি আজিজুল হক মিয়া বলেন, রিমান্ডে নেওয়ার পর প্রথম দিনই মুখ খুলেছেন আসামিরা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দায়িত্ব পালনের আড়ালে চোরাকারবারিদের বহন করা কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিমানবন্দর এলাকায় বেবিচকের কিছু অসাধু কর্মচারী ও নিরাপত্তা কর্মীর সহায়তায় স্বর্ণ পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তদন্তের স্বার্থে অনেক তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। চলতি বছর সোনা পাচারকা-ে যুক্ত বেবিচক-বিমানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আটক-গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত ১৪ এপ্রিল বেবিচকের গাড়িচালক সালেহকুজ্জামান পাঁচটি সোনার বার ও ৫০টি সোনার চেনসহ আটক করে এপিবিএন। তার আগে গত ৪ জুন জেদ্দা বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্বর্ণসহ এফ এস জিয়াউল নামে বিমানের এক কেবিন ক্রুকে আটক করে সৌদি আরবের পুলিশ। এরও আগে, জেদ্দা বিমানবন্দরে অবৈধ স্বর্ণ ও মুদ্রাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়ে চাকরি হারান রুহুল আমিন শুভ নামে বিমানের আরেক কেবিন ক্রু। এসব ঘটনার পূর্বাপর আরও অনেক ঘটনা আছে তা মিশে গেছে রাতের আঁধারে। অনেক সময় বেবিচক-বিমান কর্মীদের ব্যাপক গোপনীয়তা আবার অনেক সময় কারবারিদের সুকৌশল বুদ্ধির কারণে এমন অনেক কা- আছে যা প্রকাশ পায়নি। জানা গেছে, উড়োজাহাজে করে স্বর্ণের বার বিদেশ থেকে নিয়ে আসে কারবারিরা। এরপর বিমানবন্দরে সেগুলো হেফাজতে নেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অন্তত অর্ধশত কর্মী। তারা অবৈধ পণ্যগুলো নিরাপদে পৌঁছে দেন চক্রের হোতার কাছে। নিজেদের ডিউটির আড়ালেই এ চোরাচালান চক্রে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। পরিকল্পিত চক্র হওয়ায় তাদের ধরা পড়ার আশঙ্কা একেবারেই কম! আবার তদন্তে কারও নাম এলেও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ করে’ অব্যাহত রাখেন অপকর্ম। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে থাকা পাঁচ আসামির বয়ান থেকে এসবই প্রতীয়মান হয়। যারাই যখন আটক বা গ্রেপ্তার হয়েছেন আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নানা তথ্য দিয়েছেন। তবে, সঙ্গত কারণে এসব তথ্য প্রকাশ্যে আনতে পারে না আইন সংশ্লিষ্টরা। ঘটনাগুলো নিয়ে কথা হলে বেবিচকের সদস্য (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, সম্প্রতি স্বর্ণ পাচারের কয়েকটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বেবিচকের ১০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এরপরও বিমানবন্দরে ডিউটির আড়ালে স্বর্ণ পাচার করছেন অসাধু কর্মীরা। তারা অন্যান্যের সঙ্গে মিলেমিশে এ কাজ করায় সহজে ধরা পড়ে না। তবে ধরা পড়লে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার ধরা পড়া তিন কর্মীকেও সাময়িক বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, চোরাচালান বন্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। এজন্যই আসলে বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা ভবিষ্যতেও এ তৎপরতা অব্যাহত রাখব। বিমানবন্দরে যারা আছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, এপিবিএন, শুল্ক গোয়েন্দা সবাই মিলেই আমরা টিম ওয়ার্ক করে জড়িতদের শনাক্ত করা, সেই সাথে কেউ যাতে চোরাচালানে উৎসাহী না হয় সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাম্প্রতিক ও পূর্বাপর সব ঘটনার বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আজিম বলেন, আমরা এর আগে যে চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছে (বিদেশে বিমানের কর্মী স্বর্ণসহ আটক) সে ঘটনায় মামলা দিয়ে, রিমান্ডে নিয়েছি। এটা আসলে একটা চক্র; ঘটনাগুলো দুদিক (দেশে, বিদেশে) মিলিয়েই হয়। মামলা ইন্টারপোলে গিয়েছে। সোমবারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা দোষীকে প্রত্যাহার করেছি। দুই দিকের (দেশি ও বিদেশের) আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আমরা এসব চক্রকে ধরে ফেলব। যেহেতু কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে; এখন দেখবেন এসব ঘটনা অনেকটাই কমে গেছে। যারা টেকনিকেলি সহায়তা করে আমরা এদেরকেই ধরতে চাচ্ছিলাম। কারণ, যারা বডিতে হাত দেয়, তারা তো টেকনিকেল পার্সন ছাড়া সম্ভব না। আমরা এসব কর্মকা-ের হোতা কারা- পুরো চক্রটাকেই বের করার চেষ্টা করছি। স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় আগে কখনোই ফৌজদারি মামলা হয়নি উল্লেখ করে শফিউল আজিম দাবি করেন, যখনই স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় ফৌজদারি মামলা হবে, দোষীর জেল হবে বা শাস্তি যেটা প্রাপ্য হবে। তার চাকরিও থাকবে না। তখন অন্যরা ভয় পাবে। আগে তো প্রশাসনিক উপায়ে আদালতে গিয়ে মুক্ত হয়ে যেত। চোরাচালান রোধে বিদেশেও সিকিউরিটি নেওয়া হবে জানিয়ে বিমানের সিইও বলেন, বিদেশে আমরা সিকিউরিটি সার্ভিস নেব, যারা মেনটেইনেন্স করবে। সেজন্য আলাদা টাকা দিতে হয়। আমরা দরকার হলে টাকা দিয়েই সেবা নেব। এছাড়া, যারা মেনটেইনেন্স কাজের সাথে যুক্ত থাকবে তাদের জন্য বডিক্যাম কেনা হচ্ছে। সারভিলিয়েন্স ক্যামেরাও যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে আশা করছি চোরাচালানের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।